এনএফবি,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবকেও বেঁধে রাখেন গ্রামবাসীরা, বৃষ্টি আসলে তবে গ্রামবাসীরা বাঁধনমুক্ত করেন মহাদেবকে। জম্বু ও কাশ্মীরের অমরনাথে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টিপাতে যখন মহদেবের কাছে বৃষ্টি থামার প্রার্থনা অন্যদিকে তখন বৃষ্টির প্রার্থনায় মহাদেবকে বেঁধে রাখার মত ব্যতিক্রমী এই রীতি পালনের প্রস্তুতি দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের তালমন্দিরা গ্রামে।
তালমন্দিরা গ্রামের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির প্রার্থনায় ভগবান মহাদেবকে বেঁধে রাখার এই ব্যতিক্রমী রীতি বহুদিন ধরে চলে আসছে তাদের গ্রামে। উল্লেখযোগ্য যে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের একাধিক এলাকায় রয়েছে জলের সমস্যা। মূলত আদিবাসী এবং তপশিলী জাতির বাস তপন ব্লকে ৷ আর এই ব্লকের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। আর এই কৃষিকাজ করার জন্য তারা বৃষ্টির জলের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু বিগত কিছুদিন ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে জমিতে কাটা পাট গাছ পচানোর জন্য পুকুর বা নয়নজুলিগুলিতে পর্যাপ্ত জল না থাকায় পাটগাছগুলিকে পচিয়ে কিভাবে পাটের আশ বের করবে এই ভেবে একদিকে চিন্তিত যেমন কৃষকদের একাংশ তেমনি অন্যদিকে জমিতে ধানের চারা রোপনের পর বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ধানচাষিরা । এমত অবস্থায় তপন ব্লকের তালমন্দিরা গ্রামের কৃষক পরিবারের গৃহবধূরা বৃষ্টির প্রার্থনায় তাদের পূর্ব প্রচলিত রীতি দেবাদিদেব মহাদেবকে বেঁধে রাখার উপরেই বিশ্বাস রেখে ভগবান শিবকে বেঁধে রাখার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন পথে। গ্রামের গৃহবধূরা রীতিমত খাকি পোশাক পরে হাতে খেলনা বন্দুক-লাঠি নিয়ে নামলেন পথে নেমে মহাদেব বাঁধন পূজনের অর্থ সংগ্রহ শুরু করলেন। গ্রামের গৃহবধূদের বিশ্বাস তারা ভগবানকে শিবকে বেঁধে রাখলেই নামবে বৃষ্টি এবং বৃষ্টি নামলে তবে বাঁধনমুক্ত করা হবে শিবকে।
তালমন্দিরা গ্রামের কল্পনা বর্মন বলেন, আমাদের ধানের বিচন মরে যাচ্ছে জলের অভাবে, এরপূর্বে আমরা শিবকে বেঁধে রেখে বৃষ্টির প্রার্থনা করায় বৃষ্টি হয়েছে তাই এবারেও আমরা শিবকে বেঁধে রাখার প্রস্তুতি শুরু করেছি বৃষ্টির প্রার্থনায়। বর্তমানে তালমন্দিরা গ্রামের প্রমিলা বর্মণ, ওমিলা পাহান-দের মত গৃহবধূদের সাফ কথা বৃষ্টি না নামা অবধি কোনমতেই দেবাদিদেব মহাদেবকে বাঁধনমুক্ত করা হবে না। সুতরাং এখন দেখার পূর্ব প্রচলিত রীতি মেনে গ্রামবাসীদের এহেন প্রার্থনায় মহাদেব সদয় কবে হন।