এনএফবি, মুর্শিদাবাদঃ
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। বন্ধ লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক। রক্তের সন্ধানে ছুটতে হচ্ছে রোগীর পরিবারের লোকেদের বহরমপুর অথবা জঙ্গিপুরে। এমন দৃশ্য হরদম দেখতে অভ্যস্ত এখন নবাব নগরী।
সন্ধ্যা হলেই বন্ধ হয়ে যায় লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক। এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করে লালবাগ মহকুমার অধিকাংশ মানুষ। লালবাগ মহকুমার সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রুগীকে স্থানান্তরিত করে পাঠানো হয় এই হাসপাতালে। তার মধ্যে থাকে দুর্ঘটনার রুগী থেকে গর্ভবতী মহিলা সকলেই। রাত্রে জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীর পরিবারকে ছুটতে হচ্ছে ১৫ কিমি দূরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংকে নয়তো জঙ্গিপুর ব্লাড ব্যাংকে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীর পরিবারকে রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে আসার মাঝে চলে যায় দু-তিন ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার কখনো মৃত্যুর মতন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে হয় এই মহকুমা হাসপাতালকে।
দীর্ঘদিন ধরেই লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা রুগীর পরিবারকে রক্তের প্রয়োজনে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ব্লাড ব্যাংকের মতন জরুরি পরিষেবা ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন রোগীর পরিবার পরিজনদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষও।
লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ দেঘরিয়া বলেন, “একমাত্র মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাংক পরিষেবা চালু থাকে। লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার মতন কর্মী ও পরিকাঠামো কোনোটাই নেই। পরিকাঠামোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সমস্ত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” তবে কবে লালবাগ মহকুমা ব্লাড ব্যাংক ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, সেই বিষয়ে তিনি নির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি।
সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা জন্য মুর্শিদাবাদ, ভগবানগোলা, লালগোলা, জিয়াগঞ্জ, রানিতলা, নবগ্রাম প্রভৃতি থানার মানুষ লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভর করে থাকেন। লালবাগ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজারো হাজারো মানুষ এইখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। অথচ রাত্রে জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক বন্ধ থাকায় রোগীর পরিবার পরিজনদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে রাত্রের অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়েই রক্তের সন্ধানে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে ছুটতে হচ্ছে রোগীর পরিবার পরিজনদের। অথচ রাজ্যবাসীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সরকারি হাসপাতাল ঢেলে সাজানো হচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য এসে রোগীর পরিবার কে যেন কোন হয়রানির শিকার না হতে হয় তারও নির্দেশ রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে।
জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য বলেন, “জেলায় অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিবা রাত্র সাধারণ মানুষের রক্তের পরিষেবা দেওয়ার জন্য পরিশ্রম করে চলেছে। কিন্তু জরুরী ভিত্তিতে রাত্রে রক্তের প্রয়োজন হলে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে রক্তদাতারা গিয়ে ঘুরে আসেন। অনেক সময়ই রক্তদাতারা লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংকে সন্ধ্যার পর আর রক্ত দিতে যেতে চায়না । আমরা আমাদের পক্ষ থেকে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক কে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছি। যেন তাড়াতাড়ি লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্ক দিবা রাত্রি খোলা থাকে।”