এনএফবি ব্যুরো, নিউজ ডেস্কঃ
আগামী বহু বছর মানুষকে প্রতি বছর করোনার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করেন ফাইজারের প্রধান নির্বাহী ডাঃ আলবার্ট বুর্লা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিমত প্রকাশ করেছেন ওষুধ কোম্পানির এই প্রধান। তিনি মনে করেন, “ খুবই উঁচু মাত্রায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হবে।“
বুর্লা এই সাক্ষাৎকারটি করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আগেই দিয়েছিলেন বলে বিবিসি উল্লেখ করেছে। প্রকাশিত সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, ব্রিটেন ২০২২ সাল এবং ২০২৩ সালের জন্য অতিরিক্ত ১১ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তি করেছে। যার মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ টিকা ব্রিটেন কিনবে ফাইজার থেকে আর ৬ কোটি মডার্না থেকে।
ডাঃ আলবার্ট বলেছেন, করোনাভাইরাসের বেটা ভ্যারিয়েন্ট যেটি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল এবং ডেল্টা প্রজাতি যেটি প্রথম ভারতে চিহ্নিত হয়েছিল সেগুলি মোকাবিলায় ফাইজারের টিকা কার্যকর করার পদক্ষেপ তাঁদের সংস্থা ইতিমধ্যে নিয়েছে, যদিও তিনি বলেছেন এই দুটি ধরন মোকাবিলায় তাদের টিকায় তেমন কোন বদল ঘটাতে হয়নি। তিনি দাবি করেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর করার কাজ এখন তারা করছেন। আগামী ১০০ দিনের লক্ষ্যমাত্রার কথাও উল্লেখ করেছেন ওই সাক্ষাৎকারে।
বিশ্বে দাতব্য বিষয়ক যেসব সংস্থা আছে তারা বলছে যে, ফাইজার, বায়োএনটেক এবং মর্ডনা এই মহামারির সময় যে পরিমাণ অর্থ উপাজর্ন করেছে তা অনৈতিক। এবছর কোভিডের টিকা বিক্রি করে ফাইজার আয় করবে ৩৫ বিলিয়ন বা সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। তাদের শেয়ারের দামও এখন আকাশচুম্বী। পৃথিবীর অনেক দেশে বেশিরভাগ মানুষ করোনার এক ডোজ টিকা পেলেও আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশের মানুষ টিকা প্রায় পায়ইনি- এইসব দেশে প্রতি কুড়ি জনে একজনেরও কম মানুষ টিকা পেয়েছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডাঃ বুর্লা কোন রকম দুঃখ প্রকাশ করেননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “মূল কথা হল, লাখো লাখো জীবন রক্ষা পেয়েছে।“ একইসাথে তিনি বলেছেন, “ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশ্ব অর্থনীতিকে আমরা ধবংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। আগামী মহামারী রুখতে আবিষ্কারের কাজে এটি জোরালো অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে।“
মহামারিকে কাজে লাগিয়ে লাভ করার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেছেন, ধনী দেশগুলির জন্য এই ব্যয় সস্তার খাবার কেনার খরচের সমান। তবে নিম্ন আয়ের দেশগুলিকে টিকা বিক্রি করা হয়েছে কোন মুনাফা না রেখে। একই সাথে তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছরের কম বয়সীদের কোভিড টিকার ট্রায়াল চালাচ্ছে। যেহেতু স্কুলের পরিবেশে সংক্রমণ বেশি ছাড়াচ্ছে, তাই শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে ঝুঁকির মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই তিনি মনে করেন।
ফাইজার এবং মডার্না উদ্ভাবিত এমআরএনএ টিকার চাহিদা এখন অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে ছাপিয়ে গেছে। যারা এখনও টিকা নেননি তাদের উদ্দেশ্যে বুর্লার বার্তা, “এটা শুধু আপনার স্বাস্থ্যের জন্যই জরুরি নয়, আপনার আশেপাশে যারা আছে, বিশেষ করে যারা আপনার সবচেয়ে প্রিয়জন যাদের কাছাকাছি আপনি থাকতে চান, তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি।“
তাঁকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া ভুয়ো খবর প্রসঙ্গেও এই সাক্ষাৎকারে মত প্রকাশ করেছেন ডাঃ বুর্লা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমার গ্রেফতারের খবর প্রসঙ্গে আমি হেসেছিলাম, কিন্তু আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলার খবরে আমি খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম।“ উল্লেখ্য ডাঃ বুর্লাকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভুয়ো খবরের মধ্যে দুটি খবর হল, তিনি জালিয়াতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা এফবিআইয়ের হাতে এনং অন্যটি হল ফাইজার টিকার পার্শবপ্রতিক্রিয়ায় তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন।