জেলা

সংস্কারের অভাবে মানচিত্র থেকে লুপ্ত হতে চলেছে ব্রাহ্মণী নদী

এনএফবি, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

সংস্কারের অভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গঙ্গারামপুরের ব্রাহ্মণী নদী। নোংরা-আবর্জনায় মুখ ঢাকছে ব্রাহ্মণী। নদী তীরবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দারা নদী বুজিয়ে এলাকা দখল করে বানাচ্ছে কংক্রিটের বাড়ি। জরাজীর্ণ অবস্থায় হাসফাঁস করছে ব্রাহ্মণী। ব্রাহ্মণী নদী না নালা? বোঝা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের পরিস্থিতিতে।

দেওয়া শেরপা, বিডিও

ব্রাহ্মণী নদী সংস্কার করার দাবি তুলেছেন গঙ্গারামপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক সহ পরিবেশপ্রেমী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারাও। নিজের ছন্দে ফিরতে চায় ব্রাহ্মণীও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ,যে জেলা মূলত কৃষি প্রধান জেলা। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে আত্রাই,পুনর্ভবা ও ব্রাহ্মনী নদীর মত গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদী তীরবর্তী এলাকায় হাজার হাজার মানুষের বসবাস। অন্যান্য নদীর মতো ব্রাহ্মণী নদীর গুরুত্ব রয়েছে স্থানীয় মানুষদের জীবন জীবিকায়। ব্রাহ্মণী নদীর উৎপত্তি পুনর্ভবা নদী থেকে। গঙ্গারামপুরের দেবীপুর নামক স্থানে পুনর্ভবা নদী থেকে সৃষ্টি হয়েছে ব্রাহ্মণী নদী। জানা যায়, এই নদী জেলার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর পুনরায় পুনর্ভবা নদীতে গিয়ে মিশেছে । অতীতে এই নদীর দুপাশ ব্যাপক চওড়া ছিল । নদীতে টলমলে জল প্রবাহিত হতো , আর সেই জলে দেখা মিলত নানান প্রজাতির মাছের। সেই মাছ ধরতে দিনভর নদীতে থাকতেন মৎস্যজীবীরা, নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে গঙ্গারামপুরের কালীতলায় সেই মাছ বিক্রি করে জীবন-জীবিকা চালাতেন তারা। ব্রাহ্মণী নদীর জল চাষবাসের কাজে ব্যবহার করতেন অনেক কৃষকেরা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণী নদী আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নদীর দু’পাশে বসবাসকারী কিছু মানুষেরা নদী দখল করে তৈরি করছে কংক্রিটের বাড়ি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্রাহ্মণী নদীতেই ফেলছেন নোংরা – আবর্জনা, যার ফলে নদীর চওড়া ও ঘনত্ব ক্রমশই দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে। গতি বিহীন জরাজীর্ণ অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে ব্রাহ্মণী নদী। দিন দিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ব্রাহ্মণী নদী।

সত্যেন্দ্রনাথ রায়, বিজেপি বিধায়ক


ব্রাহ্মণী নদী অবস্থান সম্পর্কে এক পরিবেশ প্রেমী সনাতন তমলি জানান, “অন্যান্য নদীর মত ব্রাহ্মণী নদী আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় নদীতে প্রচুর জলপ্রবাহ থাকতো, তখন এই জলের উপর নির্ভর করে মৎস্যজীবিরা মাছ ধরতেন। নদীর জল দিয়ে করা হতো কৃষিকাজ। কিন্তু বর্তমানে ব্রাহ্মণী নদী একটি নালাতে পরিণত হয়েছে, নদীতে জল তো থাকেই না, উপরন্তু নদীতে থার্মকলের কাটুন আবর্জনা ফেলার স্তুপে পরিণত হয়েছে। মানুষ নিজের ইচ্ছে মত নদীকে দখল করে নিচ্ছে এককথায় নদী চুরি হয়ে যাচ্ছে। পুনর্ভবা পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ব্রাহ্মনী নদী নিয়ে পথসভা ,পদযাত্রা স্থানীয় জনগণকে নিয়ে সচেতনতা শিবির গড়ে তুললেও এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।ব্রাহ্মণী কে নিজের স্বমহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হলে প্রশাসনকে সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে অতি ,শীঘ্রই ড্রেজিং করে ব্রাহ্মনীর জলপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত।” গঙ্গারামপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায় জানান, “মাটি মাফিয়া ,বালু মাফিয়ারা যে ভাবে নদী থেকে মাটি বা বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাতে নদীর ক্ষতি হচ্ছে পাশাপাশি নদী দখল করে বাড়ি তৈরি ও নোংরা আবর্জনা ফেলার কারণে ব্রাহ্মণী নদীর অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে ,এই বিষয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।”

প্রশান্ত মিত্র, চেয়ারম্যান গঙ্গারামপুর পুরসভা

নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা রাজু কুন্ডু জানান,” নদীর এমন জরাজীর্ণ অবস্থা থাকলে আগামী দিনে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানচিত্র থেকে ব্রাহ্মণী নদীর মুছে যাবে।” গঙ্গারামপুর ব্লকের বিডিও দেওয়া শেরপা জানান,”বিষয়টি জানতে পেরেছি ,এন আর জী এস প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গারামপুর ব্লকের মধ্যে যতটা সম্ভব নদী পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হবে ,যারা নদী দখল করে বাড়ি বানাচ্ছে তাদের প্রথমে নোটিশ করা হবে।নোটিশে সুরাহা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এখন দেখার কবে ব্রাহ্মণী নদী তার নিজের ছন্দে ফিরে আবার নিজের গতিপথে চলতে পারে।

সানাতন তামলি, পরিবেশ রক্ষা কর্মী

নিউজ ফ্রন্ট বাংলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।