জেলাফিচার

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সত্ত্বেও প্রতিমা শিল্পীদের ভবিষ্যৎ আজও অনিশ্চিত

এনএফবি,বালুরঘাটঃ

পুজোর বাকি আর মাত্র এক মাস কয়েক দিন। গত দু বছর করোনা অনেক কিছুর পাশাপাশি বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজাকে অনেকটাই ফিকে করে দিয়েছিল। সেই করোনার নাগ পাশ থেকে ২০২২ কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা ছাড়া এবারের দুর্গা উৎসব বাঙলার এক নতুন আবেগের সাথে জড়িয়ে গেছে ৷ ইউনেস্কো বাঙালির এই পুজোকে হেরিটেজ হিসেবে তকমা দেওয়ায় তা আলাদা মাত্রা পেয়ে গেছে। এবার সরকার নিজেই এক মাস ব্যাপি হেরিটেজ তকমা পাওয়া দুর্গা পুজোকে স্মরনীয় করে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য পুজো উদ্যোক্তা গুলিকে বাড়তি ১০ হাজার অনুদানের অর্থরাশি বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এই হেরাইটেজ তকমা আর রাজ্য সরকারের বাড়তি অর্থরাশির অনুদান প্রতিমা তৈরীর শিল্পিরা কতটুকু আর্থিক লাভবান হবেন সে নিয়ে প্রতিমা শিল্পিরাই ঘোর অনিয়শ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

কেননা মাটির প্রতিমা বা দেবী মূর্তি গড়তে মাটি, খড় এবং বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম।এই তিন উপাদান ছাড়া প্রতিমা গড়া সম্ভব নয়। আমরা অনেকেই মনে করি যে, শুধুমাত্র এই তিন উপাদানেই মূর্তি তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু এই তিন উপাদান ছাড়াও এমন কয়েকটি উপাদান রয়েছে, যেগুলি বাদ দিয়ে মা দুর্গার মূর্তি গড়ার কথা ভাবাই যায় না। এগুলি ছাড়া মায়ের মূর্তি তৈরি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়তে কাদামাটি সংগ্রহ থেকে সাজসজ্জা, প্রতিটা কাজই হয় নির্দিষ্ট প্রথা মেনে।আর সেই সব সামগ্রীর দাম আজ যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে সেসব খরচ পুষিয়ে নিজেদের দিন রাত উজাড় করে ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের দুটো পয়সা ঘরে তোলাই আজ দায় হয়ে পড়ছে বলে বালুরঘাটের মৃৎশিল্পিদের অভিযোগ।

নিজস্ব চিত্র

তাদের আরও বক্তব্য শুধুমাত্র কাদা, মাটি দিয়ে মূর্তি দাঁড় করানো সম্ভব নয়। তাই, মূর্তি শক্তিশালী করার জন্য বাঁশ ও খড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে বানানো হয় মূর্তির কাঠামো, যার সঙ্গে খড় বা পাটের দড়ি বেঁধে প্রতিমার অবয়ব তৈরি করা হয়। তারপর কাদামাটি ব্যবহার করা হয়। তার উপর রঙ ও সাজ সজ্জা সব কিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। এছাড়াও গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত জিএসটি চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। তার উপর অর্ডার ও তেমন আসেনা। প্রতিমা তৈরির সামগ্রীর দাম বাড়লেও এ বার ও তাই কম দামে প্রতিমা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন পাশাপাশি তার দাবি এই কম্পিটিশনের যুগে বাবা দাদা হাত ধরে চলা এই পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখা ও পেট চালানোর দায়েই কোনরকমে প্রতিমা তৈরী করে চলেছেন বলে অভিযোগ জানান মৃৎশিল্পিরা। তাদের আরও দাবি সরকারের উচিত পুজো উদ্যোক্তাদের মত তাদের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শিল্পীদের পুজো অনুদান ও সারা বছরের জন্য ভাতার ব্যবস্থ্যা করা। তাহলেই এই শিল্পের সাথে জড়িত যারা তাদের আগামী প্রজন্ম উৎসাহিত হয়ে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে আসবে নচেৎ এই শিল্পের ভবিষৎ বেশ অনিয়শ্চয়তার মধ্যে পড়তে বাধ্য হবে।

নিউজ ফ্রন্ট বাংলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।