ক্রীড়া

আফগান ম্যাচের বাঘের মত খুনে মানসিকতাই চান ভারতীয় কোচ স্টিমাচ

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

এশিয়ান কাপ ২০২৩ বাছাই পর্বের চূড়ান্ত রাউন্ডের গণ্ডী পেরিয়ে ভারত মূলপর্বে জেতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সময় এসে গিয়েছে। এই উত্তর পাওয়া যাবে মঙ্গলবার রাতে, যখন ভারত ও হংকংয়ের মধ্যে বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচের যবনিকা নামবে বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ভারত জিতলেই কোয়ালিফাই করবে। আর যদি ড্র হয় তাহলে গোলপার্থক্যর বিচারে হংকং কোয়ালিফাই করবে।

ইতিমধ্যেই দুই দলই দু’টি করে ম্যাচ জিতে ছয় পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের প্রথম দুইয়ে। ভারত জিততে না পারলে তাদের অপেক্ষা করে থাকতে হবে অন্যান্য গ্রুপের ফলের জন্য। কারণ, ছটি গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দলগুলির মধ্যে পাঁচটি দলও উঠবে মূলপর্বে। তবে ভারত দ্বিতীয় হয়ে নয়, প্রথম দল হিসেবে মাথা উঁচু করে মূলপর্বে উঠতে চায়।
এই অবস্থায় বেশ সাবধানি ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। মঙ্গলবার নামার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানালেন,” প্রথম দুই ম্যাচে হংকং যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, সে জন্য হংকংয়ের প্রশংসা করতেই হবে। গ্রুপশীর্ষে থাকার মতোই খেলছে ওরা। গোলপার্থক্যেও ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। শৃঙ্খলাবদ্ধ ও গোছানো দল ওরা। আমরা ওদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে চর্চা করেছি। ওদের হারাতে কী করতে হবে আমাদের, তাও আমরা জানি। আগের দুটো ম্যাচের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটা। এই ম্যাচে চাপ কম থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে কম খিদে থাকবে না আমাদের ছেলেদের মধ্যে। ম্যাচটা জিততে গেলে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই যে রকম অল আউট গিয়েছিলাম, সে রকমই শুরু করতে হবে আমাদের।
তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যারা খেলেছে, তাদের মধ্যে থেকে কাকে দলের বাইরে রাখব, সেটাই আমার দুশ্চিন্তা। যদিও আমি এ রকম দুশ্চিন্তা পছন্দ করি। তবে আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ভাল করে পরীক্ষা করতে হবে। যদি কারও ক্ষেত্রে মনে হয়, তাকে খেলানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে, তা হলে তাকে প্রথম এগারোয় রাখা যাবে না। আমার প্রথম এগারো তার শক্তি নয়। পুরো ২৪-২৫ জন খেলোয়াড়ই সেই দলের শক্তি। বাড়তি যে পাঁচ-ছ’জন থাকে দলে, তারাও। এ থেকেই বোঝা যায় দল কতটা শক্তিশালী বা দুর্বল। তাই প্রথম এগারো নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভাল। দলের সবাই আমার প্রথম এগারোয় থাকতে পারে। দলের যে ৩০তম সদস্য, তাকেও সমান খিদে, ইতিবাচক মনোভাব এবং উদ্দম নিয়ে অনুশীলন করতে হবে, যাতে যে কোনও ম্যাচে তাকে দরকার হলেই সে প্রথম এগারোয় থাকা যে কোনও খেলোয়াড়ের মতোই খেলে দেখিয়ে দিতে পারে। সে দিন যেমন সহাল দেখাল। বেঞ্চে বসেও ওদের মতো ইতিবাচক ও ধৈর্যশীল থাকাটা বড় ব্যাপার।”

লিস্টন কোলাসোর প্রশংসা করে ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ জানালেন,”আমার মনে হয়, ৪-২-৩-১ পদ্ধতিতে লিস্টনকে সামনের দিকে যে কোনও জায়গায় খেলানো যেতে পারে। ও যেমন সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলতে পারে, তেমনই দুই দিকেও খেলতে পারে। লিস্টন ওর খেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করে। ও এমন জায়গা তৈরি করে নিতে পছন্দ করে, যেখানে ও বল রিসিভ করে, ঘুরে আক্রমণে উঠতে পারে। ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, এই স্তরের ফুটবলে বল যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি রিলিজ করে ফাঁকা জায়গায় বল ছাড়া দৌড়নোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বল কাউকে দিয়ে বিপক্ষের তিন-চারজন ডিফেন্ডারের চোখ এড়িয়ে গোলের সামনে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাওয়াটা বেশ কঠিন এবং ক্লান্তিকরও বটে। লিস্টন যথেষ্ট ভাল এবং অন্য ধরনের ফুটবলার। ভবিষ্যতে ও নিজেকে উজ্জ্বল করে তুলবেই। ও ডিফেন্সের প্রতিও এতটা দায়বদ্ধ যে, ওর জন্য গর্ব হয়। গত দুই ম্যাচে আপনারা দেখেছেন, বল খোয়ানোর পরে ও পিছনদিকে কত দ্রুত নীচে নেমে আসে ও মাঝমাঠ থেকে বিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিতে পারে। এই ধরনের দায়িত্ববোধসম্পন্ন খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শুধু বল রিসিভ করে আক্রমণে ওঠা দিয়ে বিচার করবেন না।”

আফগানিস্তান ম্যাচে ভারত যে লড়াকু ফুটবল খেলেছে সেই প্রসঙ্গতে গিয়ে স্টিমাচ জানালেন,”এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই আমাদের এ ভাবেই খেলা উচিত। এর পরে যে কোনও ম্যাচের প্রস্তুতির সময় ছেলেদের মনে করিয়ে দেব আফগানিস্তান-ম্যাচে তাদের মানসিকতা, খিদে, আবেগ কেমন ছিল। এর পরের ম্যাচগুলোতে এ ভাবেই বাঘের হৃদয় দিয়ে একইরকম আবেগ, খিদে ও আগ্রাসন নিয়ে খেলতে হবে আমাদের। বাঘের মতো মাঠে নামতে হবে, বাঘের মতে মাঠে খেলতে হবে এবং প্রতিপক্ষকে বোঝাতে হবে আমাদের আমরা আমাদের শক্তিশালী কলিজা দিয়ে লড়াই করতে জানি। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন ।”

নিউজ ফ্রন্ট বাংলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।