ক্রীড়া

এখানেই থামতে নারাজ কোলাসো,মনবীর

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

মঙ্গলবার লিগ টেবলের শীর্ষস্থানীয় দল হায়দ্রাবাদ এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে ফের সেরা চারে ঢুকে পড়ার পর সেমিফাইনালে ওঠার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে এটিকে মোহনবাগান শিবির। যদিও চোট-আঘাত সমস্যা রয়েছে দলে, কিন্তু দলের নির্ভরযোগ্য তারকাদের ছাড়াই যে ভাবে মঙ্গলবার হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে ২-১-এ জিতল তারা, বরং আরও বেশি ব্যবধানে জেতার জায়গাতেও চলে এসেছিল, তাতে তাদের শিবিরে টিমস্পিরিট যথেষ্ট ভাল জায়গায় আছে বলেই মনে হয়।

রয় কৃষ্ণা চোট পেয়ে আপাতত দলের বাইরে। মঙ্গলবার ম্যাচের মাঝেই হুগো বুমৌস, কার্ল ম্যাকহিউ, ও ডেভিডস উইলিয়ামস চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। গোলকিপার মনবীর সিংয়ের চোট ছিলই। এই ম্যাচে তাঁর সেই চোটের ওপর ফের আঘাত লেগেছে। এই অবস্থায় আগামী শনিবার নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচে পুরো দল নামানোটাই কোচ হুয়ান ফেরান্দোর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে দলের ফুটবলাররা আশাবাদী, তাঁরা জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে পারবেন। তাঁর প্রাক্তন দল হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে এই মরশুমের ছ’নম্বর গোল করেন যিনি, সেই সেরা ফুটবলারের খেতাব অর্জন করা লিস্টন কোলাসো বলেন, “এই ম্যাচটা জেতার জন্য আমরা মরিয়া ছিলাম। কারণ, হায়দ্রাবাদকে হারাতে না পারলে আমরা শেষ চারে ফিরতে পারতাম না। এই জয়ের ফলে দলের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে। লিগসেরা হওয়ার দিকে ফোকাসটাও ঠিক থাকবে”।

মঙ্গলবার একটি গোল যেমন করেন, তেমনই আরও দু’টি অবধারিত গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন কোলাসো। সেই প্রসঙ্গে কোলাসোর বক্তব্য, “সবুজ-মেরুন জার্সিতে ছ’নম্বর গোলটা করতে পেরে বাড়তি আনন্দ যেমন নেই, হ্যাটট্রিক করতে না পারার আফসোসও নেই। দলের জয়ই আমাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে। হ্যাটট্রিক পাওয়া উচিত ছিল। কঠিন জায়গা থেকে গোল পাচ্ছি অথচ সহজ জায়গা থেকে মিস করছি কেন, সেটাই ভাবছি। কোচের পরামর্শ নিচ্ছি। অনুশীলনেও সে দিকে নজর দিচ্ছি। তবে গোল মিস করলেও আমাদের ভাল দিক, আমরা কিন্তু সব দলের বিরুদ্ধেই গোলের মুখ খুলতে পারছি।”

মঙ্গলবার ম্যাচের পরে প্রাক্তন দলের কোচ মানোলো মার্কেজ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে যান। প্রাক্তন কোচের এই আচরণে বেশ খুশি গোয়ানিজ তারকা বলেন, “প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে গোল করতে পেরে ভাল লাগছে। ম্যাচের পরে আমার প্রাক্তন কোচ মার্কেজ আমাকে অভিনন্দনও জানিয়ে যান। এটা বড় পাওনা। উনি বলেন, ‘ভাল খেলছ, গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ায় আফসোস কোরো না। আরও পরিশ্রম করো’। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে আমাদের জিততেই হবে। তা হলে আরও এগিয়ে যাব। এখন ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে আমাদের”। নিজের গোলটি দলের অন্যতম গোলকিপার অভিলাষ পালকে উৎসর্গ করেন কোলাসো। অভিলাষ আপাতত চোট পেয়ে দলের বাইরে। তাঁর জার্সি নিয়ে মাঠে এসেছিলেন কোলাসো। গোল পাওয়ার পরে সেই জার্সি নিয়ে সেলিব্রেশন করার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

প্রায় আড়াই মাস পরে গোল পেয়ে খুশি মনবীর সিংও। গত বেশ কয়েকটি ম্যাচে তিনি গোলের সুযোগ পেয়েও তা বারবার হাতছাড়া করেন। ক্রমশ হতাশ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে কোচের কাছে তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাই বহু দিন পরে গোল পেয়ে বেশ খুশি পাঞ্জাবী স্ট্রাইকার। বলেন, “অনেক দিন পরে গোল পেলাম ঠিকই। তবে নিজের গোলের চেয়েও বড় কথা, আমরা শীর্ষস্থানীয় দলকে হারিয়েছি। আরও বেশি গোলে জিততে পারতাম আমরা। আমি গোল পাচ্ছিলাম না বলে আমার ওপর কোনও চাপ ছিল না। জানতাম, গোলে ফিরবই। ফুটবল জীবনে চড়াই-উতরাই তো থাকবেই। ঈশ্বর যখন চাইবেন, তখনই সাফল্য আসবে। তাই যে কোনও গোলের পরই মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।”

মনবীর তাঁর গোল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের উৎসর্গ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, “এই গোলটা ক্লাবের সমর্থকদের উৎসর্গ করতে চাই। কারণ, আমার বাবা ও পরিবারের মতো, তাঁরাও আমাকে সমানে মেসেজ করে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমার ওপর আস্থা রেখেছেন তাঁরা। এর পরে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচটাও কঠিন। তবে আর পয়েন্ট নষ্ট করা যাবে না। দলে কিছু চোট সমস্যা রয়েছে। তবে আমি আমার একশো শতাংশ দেওয়ার জন্য তৈরি।