ক্রীড়া

চেন্নাইন এফসির কাছেও জিততে ব্যর্থ এটিকে-মোহনবাগান

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারল না এটিকে মোহনবাগান। প্রথম দুই ম্যাচে জয় দিয়ে শুরুর পরে টানা তিন ম্যাচ জয়হীনই থেকে গেল গতবারের রানার্স আপ দল। শনিবার ফতোরদার পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে দু’বারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করল সবুজ-মেরুন বাহিনী।
এ দিন দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ঠাসা ফুটবল বিনোদনের ১৮তম মিনিটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন এটিকে মোহনবাগান তারকা লিস্টন কোলাসো। কিন্তু গোল খাওয়ার পরেই তা শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে চেন্নাইন এফসি এবং নাগাড়ে আক্রমণের পরে তারা গোল শোধ করে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে, হাঙ্গারিয়ান মিডফিল্ডার ভ্লাদিমির কোমানের সুযোগসন্ধানী গোলে। এ দিন দুই দলই একে অপরের বিরুদ্ধে ঘন ঘন পাল্টা আক্রমণে ওঠে এবং দু’পক্ষেরই রক্ষণ বিভাগ অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

এই ড্রয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচে সাত পয়েন্ট অর্জন করল এটিকে মোহনবাগান এবং চেন্নাইন এফসি আট পয়েন্ট পেল চার ম্যাচে। এ পর্যন্ত অপরাজিতই রয়ে গেল তারা।

এ দিন মোহনবাগানকে রক্ষণে ফিরিয়ে আনেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরি। তিনি এসে যাওয়ায় ডিফেন্সকে যেমন সঙ্ঘবদ্ধ লাগছিল, তেমনই তাদের আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে ভারসাম্যেও উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। রয় ও বুমৌসকে সামনে রেখে ৪-৪-২-এ দল সাজান হাবাস। দুই উইং বরাবর আক্রমণে ওঠার জন্য মনবীর ও লিস্টন কোলাসোকে রাখেন তিনি। মাঝমাঠে দীপক ও কাউকো।

শুরু থেকেই এ দিন এটিকে মোহনবাগানকে প্রত্যয়ী লাগছিল। গত দুই ম্যাচ হারার পরে এই ম্যাচে জয়ে ফেরার সংকল্প নিয়েই যে নেমেছিল সবুজ-মেরুন শিবির, তা-ই মনে হয় তাদের শুরুর পারফরম্যান্সে। ১৮ মিনিটের মাথায় যখন লিস্টন কোলাসো গোল করে এগিয়ে দেন এটিকে মোহনবাগানকে, তখন তাদের উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট হয়।

মাঝমাঠ পেরিয়ে রয় কৃষ্ণার অসাধারণ লম্বা পাসই এই গোলের উৎস। বিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে ঠেলা বল পান বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা কোলাসো। বক্সের মধ্যে ঢুকে কোণাকুণি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। গোলে ঢোকার আগে অবশ্য বল ধাক্কা খায় ক্রসবারের নীচে।

গোল খাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেন চেন্নাইনের ফুটবলাররা এবং ঘনঘন ধারালো আক্রমণে উঠতে থাকেন তাঁরা। তিন মিনিটের মধ্যে অনিরুদ্ধ থাপার গোলমুখী শর্ট স্লাইড করে গোললাইন সেভ করেন শুভাশিস বোস। প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট ধরে নাগাড়ে আক্রমণ করে যায় চেন্নাইন। সারা অর্ধে দশ-দশটি কর্ণার আদায় করে নেয় তারা। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণের তৎপরতায় বারবার তাদের চেষ্টা বিফলে যায়।

কিন্তু এত ঘন ঘন আক্রমণ আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি তিরি, প্রীতমদের পক্ষে। ৪৫ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করে দেন ভ্লাদিমির কোমান। ডান দিক থেকে বক্সের মধ্যে থাকা লম্বা থ্রোয়ে মাথা ছুঁইয়ে বল ক্লিয়ার করতে যান এক ডিফেন্ডার। কিন্তু বল পড়ে কোমানের পায়ে এবং তিনি বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলে কোণাকুণি শট নেন। এই গোলের পরেই ঝামেলা বাধে দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে। যা রেফারি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন। লাল কার্ড দেখানো হয় এটিকে মোহনবাগানের ফিজিও লুইসকে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন হুগো বুমৌস। চেন্নাইনের নারায়ণ ও জেরিকে ধোঁকা দিয়ে গোলের জন্য যে ব্যাকপাস দেন রয় কৃষ্ণা, সেই পাস থেকে বুমৌস বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নিলেও তা পোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে চলে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এটিকে মোহনবাগান তাদের চাপে রাখলেও দশ মিনিট পর থেকে পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে চেন্নাইন এফসি। থেমে থাকেননি রয় কৃষ্ণারাও। দুই দলেরই রক্ষণকে এ দিন কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। এবং দুই দলের ডিফেন্ডাররাই দুর্দান্ত তৎপরতা দেখান। চেন্নাইনের হাঙ্গারিয়ান তারকা কোম্যান এ দিন সারা মাঠ জুড়ে খেলেন। তাঁকে যোগ্য সহায়তা দেন অনিরুদ্ধ থাপা ও লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। কিন্তু তিরির নেতৃত্বাধীন সবুজ-মেরুন রক্ষণ সমানে সমানে টক্কর দেয় তাঁদের সঙ্গে। দুই দলেরই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই জমে ওঠে। জয়ের অদম্য ইচ্ছা দেখা যায় দুই দলেরই পারফরম্যান্সে।

৭২ মিনিটের মাথায় ফর্মে থাকা বঙ্গ ফরোয়ার্ড রহিম আলিকে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামান চেন্নাইয়ের কোচ বান্দোভিচ। আক্রমণে আরও ধার আনাই ছিল উদ্দেশ্য। তার ন’মিনিট পরেই কোলাসোর জায়গায় মাইকেল সুসাইরাজকে নামান হাবাস। ম্যাচের শেষ দিকে বাঁ দিকের উইং দিয়ে ঝড় তোলার উদ্দেশ্যেই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত নেন হাবাস। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে দীপকের জায়গায় নামেন লেনি র়ড্রিগেজ।কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।

এ দিন, মনবীর সিং যেখানে খুব একটা সফল হননি, তাঁর জায়গায় ডেভিড উইলিয়ামসকে আরও আগে নামানো হলে হয়তো সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হত। কিন্তু তাঁকে নামানো হয় ৮৯তম মিনিটে, হুগো বুমৌসের জায়গায়। এত পরে নেমেও ডেভিড বক্সের বাইরে থেকে একটি দূরপাল্লার শট নেন, কিন্তু তা সোজা গোলকিপারের গ্লাভসে। এত কম সময়ে তাঁর কাছ থেকে ম্যাজিক দেখার প্রত্যাশা না করাই বোধহয় ভাল এবং তিনি তা দেখাতে পারেনওনি।