জেলাফিচার

নেই রাজ্য শিকারপুর!অনুন্নয়নের অন্ধকারে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

এনএফবি, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

পঞ্চায়েত ভোটের আগে দেখা গেল এক আজব গ্রাম! শৌচাগার না থাকায় খোলা মাঠেই মহিলাদের শৌচকর্ম, যাতায়াতের অযোগ্য রাস্তার কারণে বাড়িতে বা চলন্ত টোটোতেই হয় প্রসব, ইলেকট্রিক পোলে বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামের বাড়িগুলিতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ- ঝুঁকিপূর্ণভাবে হুকিং করে জ্বলে বাড়িতে আলো। শনিবার এইরূপ অনুন্নয়নের দেখা মিলল রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর গ্রামে।
জানা গেছে, শিকারপুর গ্রামে বসবাস প্রায় ১৫০টি পরিবারের অধিকাংশই তপশিলী উপজাতিভুক্ত। গ্রামে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি মাটির রাস্তা। যে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে নাভিশ্বাস উঠে গ্রামবাসীদের। এর কারণে গ্রামে এম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। ফলে বাড়িতেই হয় প্রসব নতুবা কোন কোন সময় চলন্ত টোটোতেই প্রসব হয়ে যায় মহিলাদের, বক্তব্য গ্রামবাসীদের।

গ্রামবাসীদের আরও জানায় একাধিকবার সরকারি সহায়তায় শৌচালয়ের জন্য আবেদন জানিয়েও তাদের বাড়িগুলিতে কোন শৌচালয় হয়নি। ফলে খোলা মাঠে শৌচকর্ম করায় জমির মালিকদের কাছ থেকে শুনতে হয় গালিগালাজ। শুধু তাই নয় গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোতা থাকলেও এবং খুঁটিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও আদিবাসী অধ্যুষিত হতদরিদ্র গ্রামের ঘরে ঘরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে হুকিং করে বাড়িতে আলো জ্বালাতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

নিজস্ব চিত্র

শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্ণী মার্ডি বলেন, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত শৌচালয় হবে বললেও তা হয় না। গ্রামের আরেক মহিলা কলিতা সরেন বলেন, ৯০০ টাকা করে জমা দিয়েও শৌচালয় পাননি। হীরামনি মার্ডি বলেন, ২০ বছর ধরে শৌচালয় নেই। চুড়কি হাসদা বলেন, দিদির সুরক্ষা কবচ নিয়ে নেতারা গ্রামে এসেছিল তবে তারা সমস্যার কথা না শুনেই চলে গেছে তাই ভোট দিতে অনিচ্ছুক তিনি।একইসাথে কারো বাড়িতে শৌচালয় নেই তাই মেয়েদের সমস্যার কথা কেউ বোঝেনা বলে তিনি জানান।

গ্রামবাসীদের দুর্দাশার কথা লোকমুখে প্রচারিত হতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, টাকা নেওয়ার পরেও এতদিন কেন শৌচালয় হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত অফিসের প্রবেশ দ্বারে “মাঠে ঘাটে পায়খানা-মৃত্যুর পরোয়ানা”, “মিশন নির্মল বাংলা – প্রচারে ৭নং রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত” টাঙ্গানো হোডিং তুলছে আরো প্রশ্ন। জেলাবাসীরা শিকারপুর গ্রামের অনুন্নয়নের ছবি কে প্রশাসনের লজ্জা বলেছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস বন্ধ থাকায় পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এই প্রসঙ্গে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ জানান, শিকারপুরের বাসিন্দারা যাতে শৌচালয়গুলি পায় তিনি সেই ব্যবস্থা করবেন। পাশাপাশি ব্লকের তরফ থেকে আসা কাগজগুলিকে তিনি নিজে এন্ট্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রত্যেকটি পরিবার যাতে এই সুযোগসুবিধাগুলি পায় তিনি সেই চেষ্টাই করবেন। তিনি আরও বলেন কোন এনজিও এই কাজটি করেছিল, সেই এনজিও-কে ধরবার চেষ্টা করে তিনি বিডিও-কে জানানোর কথা জানান। তিনি আরও জানান, তাদের ব্লকের টিম এই তদন্তে যাবে।
সুতরাং বর্তমানে আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুন্নয়নের কারণে ক্ষোভে ফুসছে আদিবাসী অধ্যুষিত শিকারপুর গ্রাম। যন্ত্রনাভরা কন্ঠে শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা পানসারি বেসরা-র ভোট চাইতে আসলে নেতাদের ঝাটাপেটা দেবেন এই হুঙ্কার তুলেছেন।

নিউজ ফ্রন্ট বাংলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।