ফিচারভ্রমণ

রথযাত্রা উপলক্ষ্যে মহিষাদল রাজবাড়ীতে রাজকীয় নিশি যাপনের সুযোগ

এনএফবি, পূর্ব মেদিনীপুরঃ

সামনেই রথ। পুরী, মাহেশর পর বিখ্যাত রথযাত্রায় স্থান করে নিয়েছে মহিষাদলের রথ। রথ দেখার সঙ্গে সঙ্গে মহিষাদল রাজবাড়ীতে নিশিযাপনের ব্যবস্থা করেছে মহিষাদল রাজ পরিবার। পর্যটকদের থাকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে একাধিক বিলাশ বহুল থাকার রুম। সারা বছর পরিষেবা চালু থাকলেও রথের কয়েকটা দিন বিশেষ ভাবে সাজে মহিষাদল রাজবাড়ী।

আর সেই রাজবাড়ীতে রাত্রি যাপন করতে হলে কি কি করতে হবে তা তুলে ধরলেন মহিষাদল রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ। সপ্তাহান্তের ছুটিতে কাছে পিঠের জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার ঝোঁক ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সময় সুযোগ পেলেই ঘরের কাছের কোনও জায়গায় বেড়িয়ে আসতে চান অনেকেই। এমনই একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মহিষাদল রাজবাড়ী। সপ্তাহান্তের ছোট্ট ছুটিতে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়। কেমন করে থাকতেন রাজরাজারা তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে এখানে এলে। দেখার সুযোগ মিলবে সংগ্রহ শালার নানা সংগৃহীত তথ্যসমূহ। মহিষাদল রাজবাড়ী এখন অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মহিষাদল রাজ বাড়ীর সবই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে রাজকীয় মেজাজে পর্যটকদের থাকার সব বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রাচীন আমলের দালান থেকে শুরু করে রাজার পালঙ্ক সেই আদলেই সাজানো হয়েছে পর্যটকদের ঘরগুলি। তার সঙ্গে খাবারের আয়োজন তো রয়েইছে। শ্বেতপাথরের টেবিলে কাঁসার থালা বাসনে খেতে মন্দ লাগবে না। সব রাজ বাড়ীরই নিজস্ব একটা ইতিহাস থাকে। মহিষাদল রাজবাড়িরও একটা ইতিহাস রয়েছে। ষষ্ঠদশ শতকে জনার্দন উপাধ্যায় প্রথম এই রাজবাড়ীটি তৈরি করে ছিলেন। ক্রমে বংশ পরম্পরায় সেই প্রাসাদ ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। মহিষাদল রাজবাড়ী এখন তিনটি প্রাসাদ নিয়ে তৈরি। প্রথম প্রাসাদের নাম রঙ্গিবসান। দ্বিতীয়টির নাম লালকুঠি এবং তৃতীয়টির নাম ফুলবাগ। তবে সব রাজবাড়ীতে পর্যটদের প্রবেশাধিকার নেই। কেবল মাত্র ফুলবাগেই পর্যটকদের থাকতে দেওয়া হয়। সেই ফুল বাগই একদিনে দেখে শেষ করতে পারেন না পর্যটকরা।

নিজস্ব চিত্র
কি রয়েছে এই ফুলবাগ প্রাসাদে?

এমনিতেই রাজ প্রাসাদ ঘিরে সকলের কৌতূহল থিকে । রাজপ্রাসাদের একটা আলাদা আভিজাত্য রয়েছে। চওড়া দালান। কড়িকাঠের সিলিং। কারুকার্য করা দরজা জানলা। তাতে আবার সেই পুরনো দিনের খরখরি দেওয়া জানলা। সেই আভিজাত্য তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দিঘি, পুকুর, কুলদেবতা মদনগোপাল জিউয়ের মন্দির। দুর্গামণ্ডপ। তাতে লাগানো ঝাড়বাতি। রয়েছে একটা বিশাল কামান। আগে নাকি দুর্গা পুজোর সময় এই কামান দাগা হত এখন আর সেসব হয় না। এই রাজ বাড়িতেই আবার রয়েছে একটা মিউজিয়াম। অনেকে আবার রাজবাড়ীর আশপাশের গ্রামও ঘুরে দেখেন।

নিজস্ব চিত্র
কি ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে মহিষাদল রাজবাড়ী যাওয়ার পথ খুবই সোজা। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। গরমের দিনে একটু সকাল সকাল বেরোলে দুপুরে গিয়ে এলাহি আয়োজনে ভূড়িভোজ সেরে দিবানিদ্রা দেওয়া যায়। কলকাতা থেকে আসতে হবে বম্বে রোড ধরে। নন্দকুমার মোড় পার করে ৮ কিলোমিটার যেতে হবে। তার পরেই পড়বে কাপাসএ্যড়া মোড়। সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে মহিষাদল রাজবাড়ি। কেউ বাসে আসতে চাইলে কাপাসএ্যড়া মোড় থেকে টোটো করেও পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। পাশাপাশি হলদিয়া মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে মহিষাদল সিনেমা মোড়ে নিমে ৫ মিনিটে পায়ে হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় মহিষাদল রাজবাড়িতে। নরুপর হয়ে লঞ্চে করে গেঁওখালী হয়েও আসা যায়। তবে রাজবাড়িতে থাকতে গেলে আগে থেকে বুকিং করে আসতে হবে।

নিজস্ব চিত্র
কি কি দেখতে পাবেন?

মহিষাদল রাজবাড়ির কয়েকশ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা আম্রকুঞ্জ, বড় বড় দিঘি, প্রয়োজনে বোটে করে ঘুরতে পারেন। কাছেই রয়েছে গান্ধী কুটির, স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ চন্দ্র সামন্ত, সুশীল ধাঁড়ার বাড়ি, মহিষাদল রাজ কলেজ, রাজ হাই স্কুল, রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপালজিউ মন্দির, আগের দিনে রাজ পরিবারের শিকার করার হাতিয়ার, শিকার করা পশুপাখি, বাঘ, সিংহ প্রভৃতি যেমন দেখতে পাওয়া যাবে তেমনি ৫ কিলোমিটার দূতে ত্রিবেনী সঙ্গম রয়েছে সেখানেও সময় কাটাতে পারবেন।

নিজস্ব চিত্র
কত টাকায় রুম পাওয়া যাবে?

৪ ধরনের রুম রয়েছে পর্যটকদের জন্য। প্রতিটি রুমেই রয়েছে এসি, টিভি, আলাদা আলাদা বাথরুম। ৮ হাজার , ৬ হাজার, ৩ হাজার , ২ হাজার টাকার রুমে পর্যটকদের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট দেওয়া হবে ৷লাঞ্চ ও ডিনার করতে হলে আগে থেকে জানাতে হবে, রাজবাড়ীর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হবে। তবে রথ দেখা আর রাজবাড়ীতে থেকে রাজকীয় আনন্দ উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে মহিষাদল রাজবাড়ীর অতিথি নিবাসে।