প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে পিংলার পটচিত্র

এনএফবি,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লীর রাজপথে শোভা পাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কোচিত শৌর্য বিষয়ক পটচিত্র ৷ স্থান পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পটুয়াদের সৃষ্টিও!

রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার এক অখ্যাত গ্রামে তাঁর জন্ম। তৎসত্ত্বেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শৌর্য, দেশের অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে আঁকা তাঁর পটচিত্র জিতে নিয়েছে বিশ্বের সমাদর।বাহাদুর চিত্রকর পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা অঞ্চলের নয়াগ্রামের বাসিন্দা। পটচিত্রের নামী শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম সর্বজনবিদিত- যে পটচিত্র চিরায়তভাবে কাহিনিমূলক। বাহাদুর এবং তাঁর ছাত্রছাত্রী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে এই চিরায়ত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। তিনি কালীঘাট পটচিত্রের বিশেষজ্ঞ-ও বটে। তাঁর আঁকা ছবির মধ্যে এর সঙ্গেও স্থান পেয়েছে নেতাজি, ক্ষুদিরামের ফাঁসি, মাতঙ্গিনী হাজরার শৌর্য এবং বিশেষ ভারতমাতার ছবি যা ফুটে উঠেছে তাঁর পটচিত্রে।গল্পের মতো করে আঁকা ছবিগুলি ইতিমধ্যেই নানা জায়গায় স্বীকৃতি পেয়েছে। বাহাদুরের ভাষায়, বার্তা প্রেরণের কাজ যখন সংবাদপত্র ছিলনা তখন তা করেছে এই পটচিত্র।বাহাদুর এবং পশ্চিমবঙ্গে তাঁর পটুয়া ভাইরা যেমন মনোরঞ্জন চিত্রকর, চাঁদনী চিত্রকর, মহিউদ্দিন চিত্রকর, কুরবান চিত্রকর, সাবিনা চিত্রকর, মলয় চিত্রকর এবং সমীর চিত্রকরের আঁকা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের শৌর্য নিয়ে সৃষ্টি পটচিত্র এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে দেশের অন্যান্য রাজ্যের পটুয়াদের সৃষ্টির সঙ্গেই নতুন দিল্লীর ‘রাজপথে’ প্রদর্শিত হবে।

আরও পড়ুনঃ শখ পর্যবসিত পেশায়, চয়ন এখন পরিচিত মৃৎশিল্পী

আগে চিত্রকররা মূলত পৌরাণিক কাহিনি নিয়েই ছবি আঁকতেন। কিন্তু এখন এই সম্প্রদায়ের অনেক শিল্পীই রাজনীতি, সামাজিক বিষয়, আন্তর্জাতিক ঘটনা ইত্যাদি থেকে প্রেরণা খুঁজে নেন। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুধুমাত্র বিষয়ে সীমিত নয় বরং তাদের কাজের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে। এখন হাতে তৈরি কাগজ ছাড়াও কাঠ, বস্ত্র, টেরাকোটাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।পটুয়া শিল্প বা পটচিত্র অন্যান্য লোকশিল্পের মতো ততটা জনপ্রিয় না হলেও চড়া রঙের ব্যবহার এবং আকর্ষণীয় বিষয় প্রদর্শিত হওয়ায় তা দেশ-বিদেশে প্রশংসা অর্জন করেছে।বাহাদুর ইতিমধ্যেই তাঁর গ্রাম নয়ায়, তাঁর নিজের বাড়িতে একটি সংরক্ষণাগার তৈরি করেছেন ‘পট’ শিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে, যাতে দেশের মানুষ এই শিল্প সম্পর্কে সচেতন হন। এছাড়াও, এই বিষয়ে গবেষকদের সাহায্য করতে তিনি তৎপর। বাহাদুরের এই প্রয়াস সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বাহাদুর চিত্রকর এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্য পটুয়ারা ‘কলা কুম্ভ- আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এ অংশ নেন সম্প্রতি। যোগ দেন আনুমানিক ৭৫০ মিটার লম্বা স্ক্রল আঁকার শিল্পীদের কর্মশালায় যেখানে আঁকা হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা-অচেনা নায়কদের শৌর্যের গল্প।ভুবনেশ্বর এবং চন্ডীগড়ে সম্প্রতি এটি অনুষ্ঠিত হয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সহযোগিতায়।

আরও পড়ুনঃআমলাদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে আপত্তি জানিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মমতার