ক্রীড়া

চাপ বাড়লো বাগানে, আইএসএল থেকে চোটের জ্বালায় ছিটকে যাওয়ার পথে কাউকো

স্পোর্টস ডেস্ক, এনএফবিঃ

চলতি আইএসএলের মাঝপথে বড় দুঃসংবাদ নেমে এল এটিকে মোহনবাগান শিবিরে। আপাতত কয়েক মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার জনি কাউকোকে। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তাঁর হাঁটুতে চোট লেগেছে, যারা জেরে সম্ভবত হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ জন্যই তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই মরশুমে তিনি আর মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

গত রবিবার এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগান অপ্রত্যাশিত ভাবে ০-৩-এ হেরে যায়। এই প্রথম এফসি গোয়ার কাছে হারতে হয় সবুজ-মেরুন শিবিরকে। তাও এমন অভাবনীয় হার। কিন্তু হারের সঙ্গে সঙ্গে কাউকোর চোটের দুঃসংবাদও ঝড়ের মতো আছড়ে পড়ে এই শিবিরে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাব জানিয়েছে, আপাতত দীর্ঘদিনের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে কাউকোকে। ওয়াকিবহাল মনে করছে, এ বারের লিগে সম্ভবত খেলা হবে না উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে আসা ফিনল্যান্ডের এই তারকা ফুটবলারের।

গত মরশুমে ভারতে এসে শুরুর দিকে কিছুটা শ্লথ থাকলেও ক্রমশ নিজের ছন্দ ফিরে পান কাউকো। হয়ে উঠেছিলেন দলের নির্ভরযোগ্য এক সদস্য, যিনি গোটা দলটাকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে রাখতেন। যখন তাঁকে নেওয়া হয়, তখন নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছিল হুগো বুমৌস দলে থাকা সত্ত্বেও কাউকোকে এনে কী করতে চায় এটিকে মোহনবাগান? যেহেতু চারজনের বেশি বিদেশি প্রথম এগারোয় রাখার নিয়ম নেই, তাই এই প্রশ্ন আরও বেশি করে ওঠে। কিন্তু দু’জনকেই দারুন ভাবে ব্যবহার করেন দুই কোচ হাবাস ও ফেরান্দো।

গত মরশুমে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তেমন কার্যকরী না হয়ে উঠতে পারলেও এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। লাল-হলুদ রক্ষণে চিড় ধরাতে তাঁর ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিন গোলের জয়ে একটি গোলে তাঁর প্রত্যক্ষ মদতও ছিল, যা দেখার পরে কাউকোকে নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন সমর্থকেরা। হাবাস তাঁকে নিয়মিত প্রথম দলে রাখলেও কাউকোর পছন্দের জায়গায় ব্যবহার করেননি। যেটা ফেরান্দো এসে করেন এবং আরও বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠেন তিনি।

গত বার গোয়ায় যে সময়ে দল চোট-আঘাত ও করোনায় জর্জরিত, ফেরান্দো প্রথম এগারোয় নিজের পছন্দমতো চার বিদেশিকে রাখতে পারা তো দূরের কথা, পছন্দের এগারোও নামাতে পারছিলেন না, সেই সময়ে কাউকোই দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সদস্য হয়ে ওঠেন। এটিকে মোহনবাগান যে টানা ১৫টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল, তাতে কাউকোর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে তিনি তিনটি গোল করেন ও করান। গড়ে প্রতি ম্যাচে ৩১টি করে পাস খেলেন তিনি, যার মধ্যে ৮০.২২ শতাংশ ছিল নিখুঁত। ছ’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেন তিনি। শুধু আইএসএল নয়, এএফসি কাপেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। প্রাথমিক পর্বে শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টারের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন এবং গ্রুপ পর্বে বসুন্ধরা কিংস ও মাজিয়া এসআরের বিরুদ্ধেও দু’টি গোল করেন।
আসলে শারীরিক সক্ষমতা এবং সুঠাম ও দীর্ঘ শরীরের অধিকারী হওয়ায় প্রতিপক্ষের দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারদের মোকাবিলা করতে সুবিধা হয় তাঁর। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে এটা তাঁর একটা বড় সুবিধা। ফলে বুমৌসের মতো স্কিল বা রয় কৃষ্ণার মতো শট নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও শুধু নিখুঁত পাসিং ও কার্যকরী উপস্থিতি দিয়ে বাজিমাত করে দিতে পারেন কাউকো। বিশেষ করে দূরপাল্লার শটে গোল করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য।

চলতি মরশুমে ছ’টি ম্যাচ খেলে ইতিমধ্যেই দুটি গোল করে ফেলেছিলেন ৩২ বছর বয়সি এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩৫টি করে পাস খেলেন তিনি। একাধিক গোলের মুভও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। এ রকম একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়কে কার্যত সারা মরশুমে পাওয়া যাবে না, এই খবরে হতাশার কালো মেঘ জমতে শুরু করে দিয়েছে এটিকে মোহনবাগান শিবিরের আকাশে। এর আগে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরি প্রায় সারা মরশুমের জন্যই ছিটকে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় যাঁকে আনা হয়েছে, সেই ফ্লরেন্তিন পোগবারও চোট। এ বার কাউকোও ছিটকে যাওয়ায় দুঃসময় ঘনিয়ে এল সবুজ-মেরুন শিবিরে।