CM-এর নাম পাল্টে MP, সুপারস্টার একেই বলে: দেবকে কটাক্ষ কুণালের, পাল্টা জবাব দিলেন দেব

এনএফবি কলকাতাঃ

দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিলেন অভিনেতা ও তৃণমূল সাংসদ দেব। আর্টিস্ট ফোরামের জমায়েতে হাজির হয়ে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলেছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর এবার দেবকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তবে কি এর পেছনে রয়েছে আরজি কর কাণ্ড? পাল্টা দিলেন দেবও। তৃণমূলের অন্দর-কোলাহল প্রকাশ্যে আসছে আবারও!

শনিবার কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডেলে দেবকে নিশানা করে লেখেন, “ঘাটাল হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ১২ মার্চ ভার্চুয়ালি। স্থানীয় কর্তাব্যক্তিরাও ছিলেন। এবার ৪ সেপ্টেম্বর ঐ একই ইউনিটের উদ্বোধন করলেন সাংসদ দেব। উদ্বোধক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর নাম পাল্টে এমপি। সুপারস্টার একেই বলে। এলাকার মানুষ তো অবাক!! অভিনন্দন দেব।”

কিন্তু কুণাল ঘোষ কেন এমন মন্তব্য করলেন? উল্লেখ্য, বুধবার ঘাটালে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে একটি সমাবেশে দেব বলেন, “এই কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বেটি বাঁচাও প্রকল্পের কোনও মানে নেই যদি না আমরা আমাদের দেশের মেয়েদের বাঁচাতে পারি। সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে কেন্দ্রীয় বৈঠক ডেকে আলোচনা করা উচিত যে কীভাবে এই ধরনের অপরাধ রোধ করা যায় এবং অপরাধীদের কী শাস্তি দেওয়া উচিত।” দেব আরও বলেন, “এটা কেবল বাংলা বা কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যের সমস্যা নয়, এটা গোটা দেশের ইস্যু।”

মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েও তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত। মুখ্যমন্ত্রীকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আর কোনও মেয়ের নাম তিলোত্তমা না রাখতে হয়।” দেবের এই বক্তব্য ও আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কুণালের এই কটাক্ষ রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে দেবকে কটাক্ষ করেছিলেন কুণাল ঘোষ। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে দেবকে নিয়ে মন্তব্য করার পরেই তাঁকে দলীয় মুখপাত্রের পদ হারাতে হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তৃণমূল নেতৃত্ব দেবের বিরুদ্ধে করা কটাক্ষ ভালোভাবে নেয়নি। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় দেবকে কুণালের কটাক্ষ দলের অন্দরেই আলোচনা তৈরি করেছে।
দেব লিখেছেন “দিদিকে আমি অনুরোধ করেছিলাম ঘাটাল হাসপাতালে ডায়ালিসিস এবং সিটি স্ক্যান মেশিনের ব্যবস্থা করার জন্য, এবং দিদি মার্চ মাসে ভার্চুয়ালি সেই ঘোষণা করেছিলেন। এক সপ্তাহ আগে মেশিনগুলো এসে পৌঁছায়, এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমি এই মেশিনগুলো উদ্বোধন করি, যাতে সাধারণ মানুষ ঘাটাল হাসপাতালের এই পরিষেবাগুলির বিষয়ে জানতে পারে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে পারে।

আমি মনে করি, এর ফলে কোনও মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, সুপারস্টার বা মুখপাত্রের নয়, বরং সাধারণ মানুষেরই উপকার হবে। তোমাকে ধন্যবাদ, কারণ তোমার মাধ্যমে এই পরিষেবার খবর আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে গেল।

শেষে আমি শুধু একটাই কথা বলব, আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তাতে তথ্য যাচাই না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মন্তব্য না করাই ভালো।

আরেকবার সকলকে জানিয়ে রাখছি, ঘাটাল সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে ডায়ালিসিস পরিষেবা শুরু হয়ে গেছে। এখন আর আপনাদের কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা কলকাতায় ছুটতে হবে না। এছাড়াও, সিটি স্ক্যানের পরিষেবা এই মাসের শেষ থেকেই কার্যকরী হবে।”

দেবকে উদ্দেশ্য করে কুণাল ঘোষ আবারও কটাক্ষ করে লিখেছেন, “দিদি যে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন, সেটা ছবিতেই স্পষ্ট। উদ্বোধন দুবার হয় না। দুটো যন্ত্র এলেও হয় না।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, একটি পরিষেবার উদ্বোধন একবারই হয়, এবং একই পরিষেবার জন্য বারবার উদ্বোধনের প্রয়োজন নেই।

কুণাল ঘোষ আরও লিখেছেন, “চলতি পরিস্থিতির কথা যদি বলো, আমরা সৈনিকরা বিষপান করেও লড়ছি, অপ্রিয় হচ্ছি। যারা দল, সরকারকে গালমন্দ করছে, পেশা ও সৌজন্যের নামে তাদের সঙ্গে আদিখ্যেতা করি না।” তিনি যেন ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন, দলের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও লড়াই কঠোর হলেও তারা একাগ্রভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং যারা দলের সমালোচনা করছে, তাদের প্রতি তিনি কোনও সহানুভূতি দেখাচ্ছেন না।

দেবকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, “দিদির উদ্বোধন ছবিতেই স্পষ্ট। যত যন্ত্র আসুক, উদ্বোধন দুবার হতে পারে না। উদ্বোধক বদলায় না। এসব টুপি সিনেমায় দিও।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা, শ্রমজীবী সৈনিকরা বিষপান করে লড়ে অপ্রিয় হচ্ছি। তুমি চৈতন্যদেব সাজছো। পেশা, সৌজন্যের নামে কুৎসাকারীদের সঙ্গে আদিখ্যেতা করছ।” কুণালের এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি দেবের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ এবং অবস্থানের সমালোচনা করেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, বিশেষত তৃণমূলের অন্দরেই কোলাহল বাড়ছে।