এনএফবি, কলকাতাঃ
হাঁসখালিতে নাবালিকাকে ‘ধর্ষণ’ করে ‘খুন’ মামলার তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপরেই ভরসা কলকাতা হাইকোর্টের। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলা ওঠে। সবদিক বিবেচনা করে দেখার পর ওই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-কে দেওয়া হয়। আদালতের নজরদারিতে হবে এই তদন্ত। অবিলম্বে মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত তদন্তের সব নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশকে।
আগামী ২ মে এই মামলার তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট সিবিআইকে জমা দেওয়ার নির্দেশ উচ্চ আদালতের। এরপূর্বে রামপুরহাটের বগটুই গণহত্যা মামলা, ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর খুন মামলায় সিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, “হাঁসখালিকাণ্ডে নির্যাতিতার মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি দেহ দাহ করে দেওয়া হয়েছে। ফলত তদন্তের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দিয়েছে। খুঁটিনাটি তদন্ত করার প্রয়োজন রয়েছে বলেই আমরা মনে করছি। এক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে হতে পারে।”
সোমবারই হাঁসখালি ধর্ষণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। হাঁসখালির নির্যাতিতার সঙ্গে অভিযুক্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা সেই জল্পনাই উস্কে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ দায়ের নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিষয়টি খুন নাকি ধর্ষণ নাকি লাভ অ্যাফেয়ার তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ছেলেটির নাকি মেয়েটির লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল। ইজ ইট আ ফ্যাক্ট?”
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ দায়ের নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গত ৫ তারিখে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি জানানো হচ্ছে ১০ তারিখে। কেন? দেহ সৎকার হল কেন? তাহলে তো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া সম্ভব নয়। এটা কি উত্তরপ্রদেশ যে আমরা লাভ জেহাদ নিয়ে আলোচনা বসাব? এটা বাংলা। গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনওরকম রং না দেখেই গ্রেফতার করা হয়েছে।“
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “কেস ডায়েরি এবং তদন্তের রিপোর্ট দেখে মনে হয়েছে তদন্তে প্রচুর গাফিলতি রয়েছে। মৃতের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অভিযুক্তের পরিবারে রাজ্যের শাসক দলের নেতা এবং পঞ্চায়েতের সদস্যও রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে পুলিশের উপর ঠিকমতো তদন্ত না করার যে অভিযোগ উঠছে তাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছে না।”
এদিন আদালতে শুনানি চলাকালীন কেস ডায়রির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি একাধিক বিষয় উত্থাপন করেন। প্রশ্ন তোলা হয় এফআইআর-এর সময় বিলম্বিত হওয়ায়। পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গলের (PRB) প্রসঙ্গে তুলে উল্লেখ করা হয়, এফআইআর করতে দেরি হলে তার কারণ দর্শাতে হয়। এছাড়াও এই ধরনের মামলায় ভিডিয়োগ্রাফি করে সাক্ষীদের জবানবন্দি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হয়নি। যেখান থেকে ওই নির্যাতিতাকে উদ্ধার করা হয়েছিল সেখান থেকে রক্তের কোনও নমুনা নেওয়া হয়েছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে বলে আদালত।
এফআইআর হয়ে থাকলে নিগৃহীতা বা তাঁর পরিবারের নাম ব্লার করা হয়েছে কিনা, ইন্টারনেটে আপলোড হয়ে থাকলে সেটি তুলে নেওয়ার কথাও জানায় আদালত। সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন (Supreme Court Guideline) অনুযায়ী, এই তথ্য কখনই প্রকাশ্যে আনা উচিত না বলে স্মরণ করিয়ে দেয় আদালত।
এ দিকে হাঁসখালির ঘটনায় তদন্ত শেষের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিরোধীরা তো বটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হন বিশিষ্টদের একাংশও। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা ঋদ্ধি সেনরা মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের সমালোচনা করেন।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যের চার ধর্ষণকাণ্ডের তদন্তে দময়ন্তী- নির্দেশ আদালতের