ট্রফিই পাখির চোখ সুনীলের

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, এনএফবিঃ

যে ভাবে লিগ টেবলের একেবারে নীচ থেকে ক্রমশ উঠে এসে অবশেষে ফাইনালে পৌঁছেছে বেঙ্গালুরু এফসি, তা বহুকাল মনে রাখবে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস। লিগের প্রথম দশটি ম্যাচে মাত্র তিনটি জয় ও ছ’টি হারই তাদের শুরুতেই অনেকটা পিছিয়ে দেয়।

ইস্টবেঙ্গল এফসি দুই ম্যাচেই বেঙ্গালুরুকে হারায়। ইস্টবেঙ্গলের কাছে ফিরতি লিগে হারের পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ান সুনীলরা এবং টানা আটটি ম্যাচে জিতে লিগ টেবলে চার নম্বরে থেকে প্লে অফে পৌঁছয়। এই সাফল্যের দৌড় এখনও চলছে। শনিবারও এই ছন্দ বজায় রাখতে চান সুনীল ছেত্রী এবং ট্রফিটা জিততে চান। না হলে এতদিনের পরিশ্রম, ঐতিহাসিক ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও মূল্যই কারও কাছে থাকবে না বলে মনে করেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি।

শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই কথাই বলেন। তাঁর মতে, “যতই আমরা ভাল খেলি, দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়াই, টানা ১১টা ম্যাচে জিতি, ভাল ভাল দলকে হারাই, চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে সব বৃথা হয়ে যাবে। কেউই এ সব মনে রাখবে না। তাই কাল জেতাটা আমাদের পক্ষে খুবই জরুরি। না হলে গত কয়েক মাসে আমরা যা যা ভাল করেছি, যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, লোকে সে সব মনেই রাখবে না।”

এটিকে মোহনবাগান যে সম্প্রতি তাদের সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দীদের অন্যতম হয়ে উঠেছে, তা স্বীকার করে নিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, “এটা ঠিকই যে গত দশ বছরে মোহনবাগান এবং এটিকে মোহনবাগান আমাদের সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। আগে আইলিগে, এখন আইএসএলে আমরা বেশ কিছু কঠিন ম্যাচ খেলেছি ওদের বিরুদ্ধে, যা অনেকদিন মনে রাখার মতো। কালও আশা করি, সে রকমই আর একটা ম্যাচ হতে চলেছে। তবে অতীতে যাই হয়ে থাকুক, কাল একটা নতুন দিন, একটা নতুন ম্যাচে নামতে চলেছি আমরা। দুই দলের চিরপ্রতিদ্বন্দিতা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের দল ফাইনালে উঠেছে। সেটা নিয়েই বেশি ভাবছি।”

সবুজ-মেরুন শিবিরের সঙ্গে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীতা নিয়ে আলোচনা করে দলের সতীর্থদের ওপর অযথা চাপ বাড়াতেও রাজি নন সুনীল। তাঁর সোজাসাপ্টা কথা, “আমাদের সোজা কথাটা হল আমরা ট্রফিটা জিততে চাই। দলের প্রত্যেকেই চায় এটিকে মোহনবাগানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে। এর মাঝে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুতার কোনও ব্যাপার নেই। দলের ছেলেদের ওপর অযথা চাপ বাড়াতে রাজি নই আমরা। এই যে টানা সাতটা ম্যাচে জিতে আমরা প্লে অফে উঠেছি, তার মাঝখানে কিন্তু কোনও ফুটবলারের ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। আমাদের কোচিং স্টাফ আমাদের একটাই কথা বারবার বলে এসেছে, প্রতিটা ম্যাচ ধরে ধরে এগোও। কালও সেটাই করব। ম্যাচটা আমরা জিততে চাই। যে ভাবে গত দশ-এগারোটা ম্যাচে জিতেছি। এর বাইরে কিছু ভাবছি না।”

কী ভাবে চরম দুঃসময় কাটিয়ে উঠলেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সুনীল বলেন, “ডুরান্ড কাপের পর আমাদের দলের কয়েকজন সিনিয়র ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। যতটা পরিশ্রম করার কথা ছিল তাদের, তা করতে পারেনি। তবে এটা ভাল যে লিগের শুরুতে আমাদের সবারই সময় খারাপ যাচ্ছিল। তখন আমরা ছন্দে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। যখন সবাই ছন্দে ফিরতে শুরু করলাম, তখন সাফল্যও আসতে শুরু করল। এখানেই সুরেশ, শিবশক্তি, রওশন, রোহিতদের মতো দলের তরুণ খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ দিতে হবে। ওদের জন্যই আমরা নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা শুরু করি। অনুশীলনে ওদের উন্নতি দেখেই গুরপ্রীত, সন্দেশ, অ্যালেক্স, হাভি, রয় এবং বাকিরা ক্রমশ উঠে দাঁড়াতে শুরু করে। এ ভাবেই আমরা ঘুরে দাঁড়াই এবং শেষ ১১টি ম্যাচে টানা জিততে পেরেছি। এটা পুরো দলগত প্রচেষ্টা।”

সেই দুঃসময়ের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে বেঙ্গালুরু এফসি-র দলনেতা বলেন, “ইস্টবেঙ্গল ও নর্থইস্টের কাছে হারার সময় আমরা মানসিক ভাবে একেবারে তলানিতে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা হাল ছাড়তে রাজি ছিলাম না একেবারেই। অনুশীলনে নিজেদের মধ্যে অশান্তিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। এক দিন সন্দেশ ঝিঙ্গনকে মেজাজ হারাতে দেখি। একদিন রয়-ও খুব রেগে গিয়েছিল। আমিও একদিন মেজাজ হারাই। তার কারণ, যে জায়গায় চলে গিয়েছিলাম, সেখানে থাকতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই ওই জায়গা থেকে নিজেদের টেনে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করি। ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারার পরে আমাদের বাকি আটটা ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতেই জিততে হত। আনাদের সব কিছু হারাতে বসেছিল। এত বছর ধরে অর্জন করা সুনাম, ভারতীয় দলে ডাক, সবই হারাতে বসেছিলাম। সেই জন্যই হাল ছাড়িনি এবং অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের ফিরিয়ে আনি।”

নিউজ ফ্রন্ট বাংলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *