এনএফবি,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
এক সময় তাকে নিয়ে হইচইয়ের সীমা ছিল না রাজ্য জুড়ে । বছর আটেক আগেও গ্রামের রাস্তার ধুলো উড়িয়ে শাসক এবং বিরোধী দলের নেতা নেত্রীরা সহায়তার প্রতিযোগিতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল তার বাড়ি। কিন্তু এখন সে সব শুধু অতীতের ধুসর স্মৃতি মাত্র। ২০১৩ সালে পৃথিবীর একমাত্র অতিকায় মহিলা হিসেবে গ্রীনিস বুকে স্বীকৃতি পাওয়া দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের অসুস্থ সিদ্দিকা পারভিনের অন্তরালের জীবন সংগ্রামে এখন কিন্তু আর কেউ সামিল নেই। এমনকি কিভাবে অতিকায় চলনশক্তিহীন প্রায় অথর্ব্য তরুণীটির দিনকাটছে তার খোজও রাখেনা কেউ। আজ পর্যন্ত জোটেনি দিন গুজরানের কোন সরকারি ভাতা। হয়নি আধার কার্ড। ভারতীয় অতিকায় তরুণী হিসেবে গ্রীনিস বুকে স্থান পাওয়া সিদ্দিকা তো বটেই তার পরিবারও এব্যাপারে আজ ক্ষুদ্ধ।
কেমন আছে সিদ্দিকা এই সময় তার খোজ নিতে গিয়ে সেই ক্ষোভের আঁচ পেলাম আমরাও । সিদ্দিকা পারভীন তো তার ছবি পর্যন্ত তুলতে দিতে নারাজ, আর তার বাবা মায়ের অভিযোগ অনেকে তাদের মেয়ের ছবি ও তাদের পরিবারের ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের নিজ ভাগ্য ফেরালেও তাদের মেয়ের বা তাদের কোন হাল ফেরেনি। বরং অতিকায় মেয়েকে নিয়ে তারা অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন। বরং অবহেলা অপমানের হাত থেকেও এখন নিস্তার নেই বিরল রোগে আক্রান্ত মেয়েটির।
পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমারের সমস্যায় ২৩ বছর বয়স থেকে সিদ্দিকার চেহারা দীর্ঘ হতে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাঁর খাবারের চাহিদা। রোজ প্রায় দু’কেজি চালের ভাত খাওয়ার চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয় গরিব পরিবারটিকে। সিদ্দিকা এরপর ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এক সময় নেতা, মন্ত্রীর সুপারিশে দলীয় কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে সিদ্দিকা চিকিৎসা করতে ট্রেনে কলকাতা থেকে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিল। তারপর দিল্লি থেকে সেই যে বাড়িতে সবাই নামিয়ে দিয়ে গেল আর খোজ রাখে না কেউ। এখনও সুস্থ নন। ক্ষোভে সকলের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলাও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে অভিমানী সিদ্দিকা , সোজা হয়ে হাঁটতে পারা তো দূরের কথা ।
এহেন তেত্রিশ পেরনো সিদ্দিকাকে নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটচ্ছে তার দিনমজুর বাবা আফাজুদ্দিন ও তাঁর মা মানসুরা বিবির। তাঁদের বক্তব্য, সরকার তাঁদের মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা তো করতে পারল না এবার অন্তত একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দিক। যাতে ভবিষ্যতে সিদ্দিকার অল্প হলেও নিশ্চিত সংস্থান থাকে। আর সেই দিনের পথ চেয়ে বসে রয়েছে সিদ্দিকা ও তার পরিবার।