মুর্শিদাবাদের বড়নগরকে ভারতের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ এর স্বীকৃতি পর্যটন মন্ত্রকের, আপ্লুত মমতা

মুর্শিদাবাদ: ভারতের পর্যটন মন্ত্রক আয়োজিত ‘বেস্ট ট্যুরিজম ভিলেজ প্রতিযোগিতা’-র কৃষি-পর্যটন বিভাগে দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ ব্লকের লালবাগ মহকুমার বড়নগর গ্রাম। এই সম্মানজনক পুরস্কার ২৭শে সেপ্টেম্বর, বিশ্ব পর্যটন দিবসে প্রদান করা হবে।

বড়নগর গ্রামের প্রধান ঐতিহ্য পর্যটন আকর্ষণ হল ‘রানি ভবানীর প্রাসাদ’ এবং ‘বড়নগর টেরাকোটা মন্দির কমপ্লেক্স’, যা ১৮শ শতকে রানি ভবানীর উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। এই সময়ে বারানগরকে ‘বাংলার বারাণসী’ বলে ডাকা হতো। এই মন্দিরগুলি শিব, বিষ্ণু ও কালী সহ বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত। মন্দিরগুলির শিল্পকলা হিন্দু পুরাণ, লোককাহিনী এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা দৃশ্যকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এগুলি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়।

‘বড়নগর টেম্পল কমপ্লেক্স’ পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের জন্য এক জনপ্রিয় গন্তব্য, যারা বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে উপলব্ধি করতে চান। এই কমপ্লেক্সে রয়েছে চারবাংলা মন্দির, ভবানীশ্বর মন্দির, রাজেশ্বরী মন্দির, গঙ্গেশ্বর শিব মন্দির, পঞ্চমুখী শিব মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, আদ্যা মন্দির এবং বিনোদ আখড়া।

বড়নগর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঐতিহ্য রক্ষা ও প্রচারের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। তাঁরা গ্রামীণ হস্তশিল্পের মাধ্যমে বড়নগরের ঐতিহ্যকে জীবিত রাখার চেষ্টা করছেন। বড়নগর তাঁত বুনন শিল্পের জন্য বিখ্যাত, বিশেষত বলুচরী, জামদানি এবং টাঙ্গাইলের মতো উন্নত মানের সুতি কাপড়ের জন্য। স্থানীয় বাজারে এবং মেলা ও উৎসবের সময় পর্যটকদের কাছে তাঁরা বাঁশের বেতের হস্তশিল্প, মৃৎশিল্পের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করে থাকেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা মন্দির কমপ্লেক্সের কাছে একটি স্থানীয় শৌচালয় পরিচালনা করেন, এবং দুধজাত পণ্য, জাম ও জেলি, মুড়ি, আচার ইত্যাদি খাবার ও পানীয় বিক্রি করে থাকেন। পর্যটকদের থাকার জন্য গ্রামে অনেক হোমস্টেও রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মুর্শিদাবাদ জেলার বড়নগর গ্রামকে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ‘বেস্ট ট্যুরিজম ভিলেজ’ হিসেবে নির্বাচিত করেছে কৃষি-পর্যটন বিভাগে। আমরা আমাদের রাজ্যের এই অনন্য সম্পদগুলিকে সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে বাংলার রত্নসমূহ দেখানোর জন্য কাজ করে চলব।”

এই স্বীকৃতি বড়নগর গ্রামবাসীদের পরিশ্রম এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে সম্মানিত করে। আসুন, আমরা সবাই মিলে বাংলার এই অপরূপ রত্নসমূহকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য আরও উৎসাহিত হই।