অমরনাথ যাত্রায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত যাত্রাপথ, অভিজ্ঞতা শোনালেন শিক্ষক শুভ্রনীল

এনএফবি,বালুরঘাট :

সকাল থেকে আবহাওয়া অনুকূলেই ছিল। ভোরবেলা রওনা হয়ে মন্দির পর্যন্ত পৌঁছাতে কোনও সমস্যাই হয়নি। বিকেলে অমরনাথ দর্শন করে ফেরার পথেই আচমকা বৃষ্টি শুরু হয়। মাইকে ঘোষণা করা হতে থাকে আরও জোরে বৃষ্টি হতে পারে, সতর্ক করা হয়। কিন্তু আচমকা মেঘ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হতেই, অমরনাথে পবিত্র গুহার কাছে জলের স্রোত দেখে হাড়হিম হয়ে যাওয়ার দশা। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক সেইখানে পাহাড়ের দুদিক থেকেই বড় বড় চাই ভেঙে পড়তে শুরু করে। তাবুগুলির উপরে পড়তে থাকে। কয়েকজন মহিলা, পুরুষ জখম হন। তারা পরে বেঁচে রয়েছে কিনা জানা নেই। ততক্ষণে হাজার হাজার পুণ্যার্থী, যে যে তাবুর নিচে পারে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। ঠাসাঠাসি ভিড়, আমরা কোথাও দাঁড়াবার জায়গা পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল মৃত্যু অবধারিত। কথাগুলো বলতে গিয়ে এখনও যেন গলা কেঁপে উঠছে দক্ষিণ দিনাজপুরের পাগলীগঞ্জের বাসিন্দা তথা হাইস্কুল শিক্ষক শুভ্রনীল মুন্সীর। কার্যত মৃত্যুকে ছুঁয়েই যেন বাড়ি ফিরবেন শুভ্রনীল সহ তাঁর বন্ধুরা।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই বাসে করে প্রথমে শিলিগুড়ি ও ৬ তারিখে শিলিগুড়ি বাগডোগড়া থেকে বিমানে চেপে দিল্লি হয়ে শ্রীনগরে পৌঁছান বালুরঘাট ব্লকের পাগলীগঞ্জের শুভ্রনীল ও তার ছয় বন্ধু। শুভ্রনীল বাবু ছাড়াও ওই দলে রয়েছেন দুর্লভপুরের পুষ্পজিত চক্রবর্তী, মাহিনগরের রজত সরকার, পাগলীগঞ্জের তোতন হালদার, সুরঞ্জন দে দাস, তাপস ঘোষ ও মুকুল সরকার। এদের বেশিরভাগই শিক্ষক ও ব্যবসায়ী।

শ্রীনগর থেকে বালাতল বেস ক্যাম্প থেকে ভোর সাড়ে তিনটেয় পাহাড়ে উঠতে শুরু করেন এই দলটি। দিনভর হেঁটে বিকেলে মন্দিরে পৌঁছে অমরনাথ দর্শন করে ফেরার পথেই বিপত্তি।
জানা গেছে, অমরনাথ দর্শনের পরে লঙ্গরখানা থেকে এগোতেই বৃষ্টি শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই মেঘভাঙা গর্জন আর মানুষের আর্তনাদ। উপর থেকে ধেয়ে আসছে বড় বড় পাথরের চাই আর জল । প্রাণভয়ে যে যেদিকে পারছে ছুটতে শুরু করে আশ্রয় নেওয়ার তাগিদে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার মাথায় পাথর পড়ে। অনেকেই জখম হতে থাকে। জলের তোড় ভয় পাইয়ে দেবার মত।

গতকাল রাত্রে ফোনে কথাগুলো বলতে গিয়ে এখনও যেন গলা কেঁপে উঠছে পাগলীগঞ্জের শুভ্রনীলের । শুভনীল বলেন, গতকাল প্রায় ঘন্টা দেড়েক এমন বিপর্যয় চলার পর আচমকা আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। রাস্তাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় পঞ্চতরনী বেস ক্যাম্পে। আমরা পাঁচ কিমি হেঁটে সেই ক্যাম্পে পৌঁছাই। পুরো বৃষ্টিতে ভিজে থাকা শরীর নিয়েই আমরা রাত্রি পার করি। এদিন সকাল থেকে আমাদের ফের প্রথমে বালাতোলে আনা হয়,পরে সেখান থেকে গাড়ি করে শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা করে আর্মিরা। কিন্তু এদিন সন্ধ্যের মধ্যে শ্রীনগরে পৌঁছাবার কথা থাকলেও আমাদের এদিন মাঝপথে এক আর্মি ক্যাম্পে আটকে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের রাত্রি কাটাতে বলা হয়েছে। অথচ আগামীকাল সকাল সাতটায় শ্রীনগর থেকে আমাদের ফ্লাইট রয়েছে, কিভাবে পৌঁছাব বুঝতে পারছি না।

অমরনাথের দুর্ঘটনা শোনার পর থেকেই উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার-পরিজনরাও। অমরনাথ যাত্রা করতে যাওয়া প্রতিটি সদস্যের পরিবারই এই নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।
ওই দলে থাকা পুষ্পজিত চক্রবর্তীর স্ত্রী টুশি চক্রবর্তী বলেন, গতকাল থেকে আমাদের খাওয়া-দাওয়া প্রায় নেই বললেই চলে। টিভিতে ওই ঘটনা দেখছি, আর এদিকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওর চিন্তায় আমাদের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। আমার ছেলে ভালো করে পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেনি।
মুকুল বাবুর স্ত্রী সীমা সরকার বলেন, গতকাল থেকে ফোনে কোন কথা হচ্ছিল না। ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আজ বিকেলে ফোনে কথা হওয়ার পর স্বস্তি পেয়েছি। খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।