উইলিয়ামসের হ্যাটট্রিকে আবাহনী জয় এটিকে মোহনবাগানের

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

ডেভিড উইলিয়ামসের অসাধারণ হ্যাটট্রিক এটিকে মোহনবাগানকে এএফসি কাপের মূলপর্বে তুলে দিল। মঙ্গলবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এ বারের হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্ট এটিকে মোহনবাগান ৩-১-এ হারাল বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে। প্রথমার্ধে দু’টি ও দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোল করেন অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড ডেভিড। আবাহনীর কোস্তা রিকান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কোলিন্দ্রেস দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোল শোধ করেন। এই জয়ের ফলে আগামী মাসে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল সবুজ-মেরুন বাহিনী।

এ দিন প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগান আধিপত্য বিস্তার করলেও দ্বিতীয়ার্ধে তাদের পাল্টা চাপে ফেলে দেয় আবাহনী। কিন্তু সেই চাপ সামলে শেষ পর্যন্ত সাফল্য অর্জন করে নেয় এটিকে মোহনবাগান। গত ম্যাচের দলে দু’টি মাত্র পরিবর্তন করে এই ম্যাচের প্রথম এগারো নামান সবুজ-মেরুন কোচ। এ দিন গোলে অমরিন্দর ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ বিভাগে লিস্টন কোলাসোও ফেরেন কিয়ান নাসিরির জায়গায়।

শুরু থেকেই বিপক্ষকে চাপে রাখার প্রবণতা দেখা যায় এটিকে মোহনবাগানের মধ্যে। ছ’মিনিটের মাথাতেই তারা এগিয়ে যায় ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে। মাঝমাঠ থেকে লিস্টন কোলাসোর পাস পেয়ে বাঁ দিকের উইং বরাবর ওঠেন জনি কাউকো। তাঁর মাপা ক্রস গোলের সামনে পৌঁছলে তা জালে জড়িয়ে দেন ডেভিড।

গোলের ১৫ মিনিট পরেই ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পায় এটিকে মোহনবাগান। মাঝমাঠে হুগো বুমৌসের পা থেকে বল পেয়ে ডান উইং দিয়ে উঠে প্রবীর দাস গোলের সামনে জনি কাউকোকে ক্রস দেন, যা বারের অনেক ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ফিনল্যান্ডের তারকা।

এর দু’মিনিট পরেই ধাক্কা খায় ঢাকা আবাহনী। তাদের অধিনায়ক মহম্মদ নাবিব জীবন চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন মহম্মদ জুয়েল রাণা।

ডেভিড উইলিয়ামসই ফের ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ২৯ মিনিটের মাথায়। দ্বিতীয় গোলটিও অনেকটা প্রথমটির মতোই। এ বার মাঝমাঠ থেকে বুমৌসের পাস পেয়ে ডান উইং দিয়ে ওঠেন প্রবীর এবং কোণাকুনি লম্বা সেন্টার করেন বক্সের মধ্যে একেবারে ঠিক জায়গায় থাকা ডেভিডের উদ্দেশ্যে। গোলে বল ঠেলতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি তিনি (২-০)।

৩৫ মিনিটের মাথায় হ্যাটট্রিকের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ডেভিড। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে অনেকটা দৌড়ে যখন বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, তখন সামনে গোলকিপার সোহেল ছাড়া আশেপাশে বিপক্ষের আর কেউই ছিলেন না। সোহেল এগিয়ে এসে তাঁকে বাধা দেন এবং প্রায় অবধারিত গোল আটকে দেন।

দু’গোলে পিছিয়ে থাকা আবহনী ব্যবধান কমানোর চেষ্টা শুরু করে এবং ৩৯ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে গোল করার সুযোগও পেয়ে যায়। বক্সের মধ্যে ফ্রি কিক উড়ে এলে তা ফ্লিক করে গোলের সামনে নেদো তুর্কোভিচকে দেন জুয়েল রাণা। কিন্তু ঠিকমতো বলে পৌঁছতেই পারেননি নেদো।

তবে এটিকে মোহনবাগানের ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা অব্যহত ছিল। প্রথামার্ধের শেষ মিনিটের ডান দিক দিয়ে ওঠা লিস্টন কোলাসো নিজেই গোলে শট নিলে গোলকিপার তা আটকে দেন। কিন্তু বল তার হাত থেকে ছিটকে ডেভিডের দিকে এলেও ঠিক জায়গায় ছিলেন না তিনি। কোলাসো আগেই ডেভিডকে ক্রস দিলে হয়তো হ্যাটট্রিকটি পেয়ে যেতেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগানের বল পজেশন ছিল ৬১%।

আবাহনী কিছুটা আক্রমণাত্মক মেজাজে শুরু করলেও ৫২ মিনিটের মাথায় মনবীর সিং মাঝমাঠে কাউকোর পাস থেকে বল পেয়ে একাই দৌড় শুরু করেন গোলের দিকে। কিন্তু বক্সে ঢুকে যে শট নেন, তা বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটেই গোলের সামনে থেকে সুযোগ হাতছাড়া করেন নেদো। ৫৫ মিনিটের মাথায় কোলাসোর কর্নারে প্রীতম কোটাল জোরালো হেড করলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

আবাহনী অবশ্য গোল শোধের চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং ৫৯ মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক সামনে থেকে ফ্রি কিক পায় তারা। ড্যানিয়েল কোলিন্দ্রেসের ফ্রি কিক ওয়ালে লেগে ফিরে আসে। তবে পরের মিনিটেই আর গোলের সুযোগ নষ্ট করেননি ড্যানিয়েল। রকিব হোসেন তাঁকে পাস দিলে কিছুটা দৌড়ে বক্সে ঢোকার ঠিক আগেই গোল লক্ষ্য করে দূরপাল্লার মাপা শট নেন ড্যানিয়েল এবং অমরিন্দর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তা জালে জড়িয়ে যায় (২-১)।

ব্যবধান কমে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসে এটিকে মোহনবাগান এবং ৬৫ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসো দূরপাল্লার শট প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু গোলকিপার সোহেল বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বলে হাত লাগিয়ে দেওয়ায় তা গোলের বাইরে চলে যায়।

আবাহনীও সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং ৬৭ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে আসা ক্রসে শট নেন জুয়েল রাণা, যা দ্বিতীয় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। কোস্টারিকান ফোরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কোলিন্দ্রেস ও প্রাক্তন হিরো আইএসএল ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল আগুস্টোর জুটি ক্রমশ এটিকে মোহনবাগানের ওপর চাপ বাড়ায়।

এরই মধ্যে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ৭৯ মিনিটে গোলের প্রায় সামনে থেকে দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন লিস্টন। এর পরেই লিস্টনের জায়গায় কিয়ান নাসিরিকে নামান কোচ ফেরান্দো এবং প্রথম মিনিটেই বাঁ দিকের উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে গোলে বল ঠেলেন তরুণ তারকা। কিন্তু এ বারেও দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। দুই দলেরই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ম্যাচ তখন রীতিমতো জমে ওঠে।

তবে এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসে সবুজ-মেরুন শিবিরই এবং ফের গোলের নায়ক হয়ে ওঠেন ডেভিড উইলিয়ামস। মাঝমাঠ থেকে যখন বল বাড়ান হুগো বুমৌস, তখন সেন্টার লাইনের ওপারে ডেভিড উইলিয়ামস কার্যত একা। তিনি বল নিয়ে দৌড় শুরু করলে তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন গোলকিপার সোহেল। কিন্তু তাঁকে পরাস্ত করে গোলের সামনে গিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন ডেভিড (৩-১)। কিন্তু গোলের পরেই চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় জয়ের নেপথ্য নায়ক বুমৌসকে।

নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে বিপক্ষের বক্সের বাঁ দিক থেকে ফ্রিকিক পেলেও অবশ্য ইতিবাচক কিছু করতে পারেননি কিয়ান। শেষ দিকে একাধিক বার গোলের সুযোগ তৈরি করেও ব্যর্থ হন তিনি। তবে ততক্ষণে জয়ের ভিত তৈরি করে ফেলেছে এটিকে মোহনবাগান।

এই ম্যাচে জিতে এটিকে মোহনবাগান এএফসি কাপের মূলপর্বে ‘ডি’ গ্রুপে জায়গা করে নিল, যেখানে উঠে রয়েছে গোকুলাম কেরালা, বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস ও মলদ্বীপের মাজিয়া এসআরসি। গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচগুলি হবে ১৮ মে থেকে কলকাতায়। এই পর্বে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলার পরে গ্রুপের এক নম্বর দল ইন্টার জোন প্লে অফ সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। গত বারও এই স্তর পর্যন্ত উঠেছিল এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু সফল হতে পারেনি।