এনএফবি, বালুরঘাটঃ
সরকারি হাসপাতাল ফেরত প্রসূতি মহিলার শরীরে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাটের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে। অসুস্থ মৃতপ্রায় মহিলাকে ভর্তি করাতে কলকাতায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বালুরঘাটের এক হতদরিদ্র পরিবার।
এদিকে বুধবার অভিযুক্ত চিকিৎসক সঙ্গীতা দাসের শাস্তির দাবি জানিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছেন রোগীর বাড়ির লোকেরা। বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে এদিন ৷
জানা গেছে বালুরঘাট শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের একে গোপালন কলোনি এলাকার বাসিন্দা পেশায় মুরগি বিক্রেতা রনজিত দাসের স্ত্রী অম্বিকা কুমারী দাস গত ১০ই জানুয়ারি অসহ্য পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয় সেখান থেকে। ১৩ জানুয়ারি তারিখে ফের পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই প্রসূতি মহিলা। এরপর ১৪ জানুয়ারি ওই মহিলাকে আবারও ছুটি দিয়ে দেয় বালুরঘাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ। এরপর কোন উপায় না পেয়ে প্রথম থেকে চিকিৎসা করানো ডাক্তার সঙ্গীতা দাসের শরণাপন্ন হয় অসহায় ওই পরিবার। এরপর বালুরঘাটের একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই মহিলার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক সঙ্গীতা দাস বলে অভিযোগ। ১৪ জানুয়ারী যেখানেই একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় অম্বিকা কুমারী দাস নামে ওই মহিলা। এরপর ওইদিন রাতেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই মহিলাকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেয় বালুরঘাটের ওই বেসরকারী নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ করা হয়। মালদায় চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে বাড়ির লোকেরা জানতে পারে, সিজার করবার সময় অম্বিকার মূত্রথলি কিছুটা কেটে গিয়েছে। যেখান থেকেই তার রক্তক্ষরণ ঘটছে বলে জানা গেছে ৷ মালদা মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৭ জানুয়ারী কলকাতায় তাকে রেফার করে দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে সরকারি হাসপাতালে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চিকিৎসা করাতে অসমর্থ হন বালুরঘাটের হত দরিদ্র ওই পরিবার। এরপর বাড়ি বন্দক রেখে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে অসুস্থ ওই মহিলার চিকিৎসা করান তার পরিবারের লোকেরা। কিন্তু টাকা না থাকায় ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে সেখান থেকে ছুটি করিয়ে একপ্রকার বাধ্যতামূলক ভাবেই বাড়িতে নিয়ে আসেন বাড়ির লোকেরা। ১৫ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে আবারও বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করান তারা। কিন্তু তারপরে ফের কলকাতায় রেফার করে বালুরঘাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ ওই মহিলাকে ফের কলকাতায় নিয়ে গেলেও সরকারি কোন হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে দ্বারে দ্বারেই ঘুরছেন তার পরিবারের লোকেরা। এদিকে এদিন দুপুরে চিকিৎসক সঙ্গীতা দাস এর শাস্তির দাবি জানিয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এর দ্বারস্থ হয়েছেন অসুস্থ মহিলার পরিবারসহ এলাকার মহিলারা। দেখানো হয়েছে বিক্ষোভও।
আরও পড়ুনঃ জঙ্গিপুরে অটো উল্টে মৃত ২, আহত ১১
অসুস্থ মহিলার শ্বশুর মন্টু দাস বলেন, বাড়ি বন্দক রেখে চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ হয়নি বৌমা। সামান্য সন্তান প্রসবও হচ্ছে না সরকারী হাসপাতালে। বারংবার ভর্তি করেও ফেরত দিয়েছে হাসপাতাল। এখন কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। সঙ্গীতা দাস নামে ওই চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।
প্রতিবেশী তথা বিক্ষোভকারী বিজয়া দাস ও মৌ দাসরা বলেন, সরকারি হাসপাতাল কোন চিকিৎসা না করিয়ে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রসূতি মহিলাদের সন্তান প্রসবও হচ্ছে না সরকারী হাসপাতালে। বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ওই মহিলার মূত্রাশয় কেটে দিয়েছে সঙ্গীতা দাস নামে এক চিকিৎসক। নিজেদের ভুলের কারণে নার্সিং হোমে ভর্তি করার জন্য ৫০ হাজার টাকাও তারা নেন নি। অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।
সঙ্গীতা দাস নামের ওই চিকিৎসক কে এদিন ঘটনা জানিয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঠিক নয়। ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক বিবেক কুমার জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ছুটি বাদে খোলা থাকবে লাইব্রেরি ,ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে পাকড়াও