এনএফবি,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
জীবন যুদ্ধে টানা ৫৫ দিনের যে লড়াইটা ১৪’র ৩’জুন সোমবার দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালে, তা শেষ হয়ে গিয়েছিল,কেষ্টর গ্রেফতারির পর আবার যেন নতুন ভাবে সে লড়াইটা শুরু হল। সাত-সাতটা অস্ত্রোপচারের পরও বাঁচেননি দুবরাজপুর টাউন থানার ওসি অমিত চক্রবর্তী। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, পেটে বোমার আঘাতে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হওয়া এবং তার জেরে ‘সিভিয়ার সেপ্টিসেমিয়া’।
সালটা ২০১৪-র ৩ জুন দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের আউলিয়া-গোপালপুরে তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বোমার আঘাতে মারা যান বছর পঁয়ত্রিশের অমিত চক্রবর্তী নামে দুবরাজপুর থানার পুলিশ অফিসার। যদিও এই ঘটনায় প্রথমে তিনি আহত হয়ে প্রায় ৫৫ দিন দুর্গাপুর হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর চিকিৎসকদের সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও মৃত্যুর সাথে লড়াই চালিয়েও হেরে যান । বালুরঘাটের বাড়িতে বসে স্বামীর সেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের বেদনাদায়ক স্মৃতি এখনও হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তার বিধবা স্ত্রী পুতুল চক্রবর্তী। পুতুলদেবীর অভিযোগ ছিল, বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মন্ডল পুলিশকে বোম মারার কথা প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে বলায় তার স্বামীর এই করুণ পরিণতি হয়েছিল। তবে দীর্ঘ আট বছর পর সিবিআই’র জালে অনুব্রত ধরা পড়তেই তিনি আজ খুশি।
বালুরঘাটের বাড়িতে বসে দুচোখের পাতা এতদিন পরেও বার বার জলে ভিজে উঠলেও অনুব্রত মন্ডলকে সিবিআই ধরেছে এখবর জানার পর থেকেই তিনি জানিয়ে আসছেন তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল। পুতুলদেবীর অভিযোগ, অনুব্রত মন্ডলের চাপেই সে সময় এই ঘটনার তদন্ত ভালমত করা হয় নি। এমনকি অনুব্রত মন্ডলের চাপে তদন্তকারি পুলিশ অফিসার তার স্বামীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দী নিতে চায় নি। তার আরও অভিযোগ, “একজন পুলিশ সহকর্মী যখন তদন্ত করবে তখন তার উপরে কিসের চাপ? উপরওয়ালার চাপ, উপরওয়ালার চাপ মানে এখানে অনুব্রতর চাপ ছিল বলেই আমি মনে করি।” এই ঘটনার জন্য অনুব্রতই দায়ী বলে অভিযোগ জানিয়ে পুতুলদেবী বলেন, “সেদিনের সভায় দাঁড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডল যদি উস্কানিমূলক পুলিশকে বোমা মারো মন্তব্য না করতেন তাহলে এই ঘটনা ঘটত না।” তার স্পষ্ট অভিযোগ, তার এই বক্তব্যের কিছুদিন পরেই অমিতের এই অবস্থা হয়। পুতুলদেবী এর পাশাপাশি পুলিশমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিকেও অভিযোগ তুলে বলেছেন, তৎকালীন পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীও অনুব্রতর এই মন্তব্যের কোন স্টেপ নেননি। যদি স্টেপ নিতেন তাহলে হয়তো এভাবে তার স্বামীকে সরকারি কর্তব্য করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাতে হত না। বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে আসে তাঁর। তার মধ্যেও হয়তো একটাই স্বান্তনা সিবিআই’র জালে তার স্বামীর হত্যার জন্য দায়ী অনুব্রত মন্ডল।