জুলাই 3, 2024
Latest:
ফিচারবিনোদন

ছক ভাঙা গল্প ‘ইস্কাবন’ আসছে রূপালি পর্দায়

নিউজ ডেস্কঃ

এক টাকা থেকে কুড়ি পয়সা মেরে দিলে কিছু যায় আসে না। ২০০৮-০৯ সালের জঙ্গলমহলে দাঁড়িয়ে এই কথা গুলো বলছেন এক লাল পার্টির নেতা। সেই নেতার ভ্রান্ত রাজনীতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে জঙ্গলমহল। খুনের পর খুন। রিয়েল থেকে রিলে, বাস্তবের সুখাডাঙা থেকে এবার রূপালি পর্দায় আসছে এমনই চমকপ্রদ ঘটনা নিয়ে নতুন বাংলা ছবি “ইস্কাবন”
এই জঙ্গল, রাজনীতি, প্রেম, হত্যা, ষড়যন্ত্রের ছবিটির শুভ মুক্তি আগামী ১৭ ই জুন।
গত ২৯ মে, কলকাতার নাগেরবাজারের ডাইমণ্ড প্লাজাতে বৈকাল ৫ টায় হয়ে গেলে ছবির গান মুক্তির জমকালো অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন ছবির গল্পকার লেখক রাধামাধব মণ্ডল, পরিচালক মন্দীপ সাহা, সংগীত পরিচালক অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়, ছবির স্ক্রিপ্ট রাইটার অর্ণব ভৌমিক, এছাড়াও ছিলেন ছবির নবাগত নায়ক সঞ্জু, অনামিকা চক্রবর্তী, সৌরভ দাসরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিল গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তীর উপস্থিত থাকা। তিনি নিজে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছবির প্রশংসা করেন। বলেন,” বহুকাল পরে এমন একটি ছবি আসছে। আপনাদের ভালো লাগবে। আমি এই ছবিতে গান গেয়েছি। এছাড়াও সেদিনের অন্ধকার জঙ্গলমহলে আজকে আলো ফেরার দিন।” আলো ফেরানোর সেই দিনের ছবিতে অভিনয় করেছেন খরাজ মুখার্জ্জি, দুলাল লাহিড়ী, পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অরিন্দম গাঙ্গুলী, সুমিত গাঙ্গুলী, দ্যুতিমান ভট্টাচার্য এবং ছবিতে সংগীত গেয়েছেন শান, নচিকেতা চক্রবর্তী, রূপঙ্কর বাগচি, অন্বেষা দত্তগুপ্তরা। সংগীত মুক্তির অনুষ্ঠানে ডাইমণ্ড প্লাজাতে ছিলেন ছবির কলাকুশলীদের সঙ্গে নচিকেতা চক্রবর্তীও।
বহুদিন পর বাংলা ছবিতে নচিকেতার গান, বাড়তি পাওনা। তাহলে এবার কী বাংলা সিনেমায় চমক নিয়ে আসছে “ইস্কাবন”!

ছবির প্রচার শুরু হতেই, কলকাতা শহর জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র গুঞ্জন! কী হতে চলেছে এই প্রেম, বিরহ আর লড়াই এর গল্পকে ঘিরে! এবার কী তাহলে জঙ্গলের মাও নেতারা শহরের রাস্তায় ঘুরবে? কেউ সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এবিষয়ে ছবির পরিচালক মন্দীপ সাহাকে এখন থেকেই করা হচ্ছে হেনস্থা বলে অভিযোগ।  এবং ছবির নির্মাতা শুধু নয়, সেইসঙ্গে ছবির গল্পকারকেও দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল সাইটে হুমকি বলে জানান “ইস্কাবন” ছবির গল্পকার লেখক রাধামাধব মণ্ডল।  
বাংলার জঙ্গলমহলের জেলা গুলোতে ইতিমধ্যেই মাও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার কয়েকটি জায়গায় পড়ছে লাল পোস্টার। সেই আবহেই গ্রেফতারের তালিকা দীর্ঘ হয়েছে। আর জঙ্গলমহলের সেই পুরোনা চেনা আতঙ্কই এবার ফিরতে চলেছে গ্রাম, শহরের রূপোলী পর্দায়। 

ছবিটি হলে এলেই চোখে শান্তি নামবে। দৃশ্যের পর দৃশ্যে সবুজের জঙ্গল। দূরে দেখা যাচ্ছে রোদবেলা! কঠিন পাথুরে রোদে শুকিয়েছে বাবুইঘাস। হালকা হাওয়াই উড়ছে ঘাস এবং শুকনো ঘাসের ধুলো। ক্যামেরার লেন্সের এপাড়ে তরুণ এক পরিচালক ছোট স্কিনে চোখ রেখে চিৎকার করে উঠলেন ‘অসাধারণ’। ক্যামেরা পিছিয়ে নিয়ে গেলেন ঈশ্বর বারিক। ক্যামেরার ওপারে কয়েকজন জোয়ান মিলিত ভাবে, প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েছে। তাদের মধ্য একজন তরুণ অফিসার। শিব মুখার্জী। ঝাড়গ্রাম জঙ্গলমহলের চিরুগরা জঙ্গল পেরিয়ে, পাহাড়ের কোল আঁচলে সবুজে সাজানো একটি মাঠে শেষের দৃশ্য। SMD ENTERTAINMENT র নতুন ছবিটির এডিট রুমে বসে, প্রণয় দাশগুপ্তর এডিট সহায়তা করতে গিয়ে আবারও আপন মনে চিৎকার করে উঠলেন পরিচালক মন্দীপ সাহা। তিনি বললেন, ছবিটি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হবে বাংলা সিনেমার দর্শক। বহুদিন পর বাংলা সিনেমার পর্দায় এমন ছবি আসছে। আমাদের প্রিয়, তরুণ লেখক রাধামাধব মণ্ডলের ‘রেড স্টারের ক্যাম্প’ গল্পের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত SMD ENTERTAINMENT-র প্রয়োজিত “ইস্কাবন” ছবিটি এখন শুধু মুক্তির অপেক্ষায়।

YouTube player

রাধামাধব মণ্ডলের গল্পের ভাবে, নিখুঁত চিত্রনাট্য গেঁথেছেন অর্ণব ভৌমিক ও অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। এইমুহূর্তে বাংলা চলচিত্রের ব্যস্ততম চিত্রনাট্য লেখক অর্ণব ভৌমিক বলেন, “ইস্কাবন’ টিমের সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। তরুণ তুর্কীদের এই কাজ আগামীকে ধরবে, এ আমার দৃঢ বিশ্বাস।”
কয়েকদিন আগে ছবির প্রথম পোস্টার লুক এসেছে বাজারে। ইতিমধ্যেই সেই নিয়ে হইচই তৈরি হয়েছে বাংলা ছবির বাজারে। অনেকেই মনে করছেন সাহিত্য নির্ভর, এই বাণিজ্যিক ছবিটি মুক্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা। আবারও একবার নতুন করে “ইস্কাবন” মুক্তির পরই বক্স অফিসে তুলবে ঝড়, এমনটা মনে করছেন অনেকে। অভিনেতা সৌরভ দাস এবার একেবারেই ছকভাঙ্গা লুকে। পোস্টারে তাঁকে দেখেই, কৌতুহলের জন্ম হয়েছে। এই সময়ের শক্তিশালী অভিনেতা সৌরভ দাস নিজের চরিত্র নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও, তিনি বলেন ইস্কাবন’ ছবিতে আমি রেড স্টারদের একজন লিডার। জঙ্গলজীবনের আন্দোলনে আছি ছবির গোলবিবি  বাজারের আশপাশের জঙ্গলমহলে। হত্যা, ষড়যন্ত্র, বিস্ফোরণ আর কূটনৈতিক চালে চরিত্রের বাঁকবদল ঘটেছে ক্ষণে ক্ষণে।
সেদিনের শাসক দলের নেতার ভূমিকায়, সময়ের ছবিকে নিজের মধ্যে এঁকেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা খরাজ মুখার্জী। তিনিও এছবি জুড়ে ছকভাঙ্গা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সৌরভ, অনামিকা আর সঞ্জু এ ছবির তিন মূলচরিত্রে উজ্জ্বল। সঞ্জু আর সৌরভের মাঝে প্রেমের দোটানাতে নিজেকে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন অভিনেত্রী অনামিকা চক্রবর্তী। টানটান শরীরের গঠনে ডেরা জীবনের তিনিই মুখিরাণী। তাঁকে ঘিরেই ইস্কাবনের বিবিরাজ্যের বিস্তার। নতুন লুকে তাঁকেও প্রথম দেখবে দর্শক। ছবি মুক্তির পর, সাফল্য নিয়ে আশাবাদী ছবির প্রযোজক সেখ আব্দুল লালন থেকে শুরু করে ছবির পরিচালকসহ ছবির কলাকুশলীরাও। সেখ আব্দুল লালন বলেন, “একেবারেই নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে এছবি। রহস্য এছবির প্রাণ। প্রকৃতি, প্রেম আর বিপ্লবের এই ছবি জনপ্রিয় হবেই।” এমনকি ছবিটির শুটিং হওয়া ঝাড়গ্রাম, বোলপুরের কালিকাপুরের মানুষ গুলোও ছবি নিয়ে আশাবাদী। তারাও বলছেন এছবি বক্স অফিসে তুলবে ঝড়। আবার হইহই করে মানুষ ফিরবে হলে।
জঙ্গলমহলের প্রেম, যৌনতা, ষড়যন্ত্র, খুন, বিস্ফারণ, হত্যা আর জটিল রাজনীতি নিয়ে আসছে নতুন এই বাংলা ছবি ‘ইস্কাবন’। এক অভিনব চরিত্রে দেখা যাবে নবাগত সঞ্জুকে। ছবি মুক্তির আগে ছবির পরিচালক মন্দীপ সাহা বলেন, “আমার ছবির লেখক, চিত্রনাট্য লেখক, প্রডিউসার, থেকে শুরু করে ছবির কলাকুশলীরাও সকলেই মনে করছেন এছবি মাইলস্টোন হবেই।” সেই সঙ্গে নবাগত নায়ক সঞ্জুকে নিয়েও বেশই আশাবাদী নতুন এই পরিচালকও। 
বাংলা সিনেমায় বেশ কয়েক বছর পর এই ছবিতে অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা ও সুরে গান গেয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। এছাড়াও আরও কয়েকটি গান ‘ইস্কাবন’ সিনেমাতে গেয়েছেন শান, রূপঙ্কর বাগচি, অন্বেষা দত্তগুপ্ত। ছবির বিজিএম করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।
ভারতের ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলে নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের গোপন যাপন, সেখানকার মানুষের জীবন ও সেখানেই তৈরি হওয়া একটি প্রেমের সম্পর্ক- এই তিনের সমাপতন ঘটিয়ে নির্মিত হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘ইস্কাবন’। এই ছবির প্রধান চরিত্র কি কিষাণ জি-র আদলে তৈরি? পরিষ্কার করে কোনো স্পষ্ট উত্তর মেলে নি। শুধু প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন প্রবীণ অভিনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সকলেই সুচতুর ভাবে বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু কেন? উত্তর মিললো না।
ছবির নবাগত নায়ক সঞ্জু বলেন, “বড় পর্দায় কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রথম হলেও, আমি কয়েকটি ছোট ছবি করেছি। আমার জীবনের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে ছবি। ছেলেবেলায় পড়াশুনো ফেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে বড় পর্দার ছবি দেখতে যেতাম, পাঁচ টাকার টিকিট কেটে। সিনেমার প্রতি প্রেমটা আমার ছোট থেকেই। ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন হওয়ার পর বুঝতে পারি এটাই আমার ভালো লাগা আর ভালোথাকার এক অনন্য জায়গা। বেঁচে থাকার আশ্রয়। তবে জীবনে ভিত্তিপ্রস্তরের সূচনা হয়েছিলো মঞ্চ দিয়ে। আমি মনে করি সহজাত যা একসময় প্রকাশ পাবেই। জীবনটাই আসল অভিনয় আমার কাছে। আমাদের দুঃখ, কষ্ট, রাগ, আবেগ, হতাশা সবকিছুই যেন লেন্সের পরিধি জুড়ে আটকে থাকে! জীবনই তো একটা মস্ত ছবি, ছবিই তো।
এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আমি বহু মানুষ দেখেছি। আবার ছবির প্রডিউসার লালন বাবুর মতো ঈশ্বরকেও দেখেছি। “ইস্কাবন” ছবির ইউনিটের সকলের থেকে ছোট বলে, তিনি আমাকে কাছে ডেকে গল্প করতেন, শুটিংএর ফাঁকে। সাহস যোগাতেন। এটাই পাওনা।”
ছবির গল্পই হিরো। তবে প্রধান এক চরিত্রের নাম শিব আর এক চরিত্র গোলাপি। তবে ছবির নরেণজী, সত্য কিংবা শুকুরাও কি কম যায়! এছবিতে শিব একজন আর্মি অফিসার। তার কাছে তার ভালোবাসা, তার স্বপ্ন, তার আদর্শ সব কিছুই তার দেশকে নিয়ে। খুব চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। সেই চরিত্রেই দেখা যাবে নবাগত অভিনেতা সঞ্জুকে।
সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আগামী জুনেই মুক্তি পাবে ছবিটি হলে, বলছেন পরিচালক। তবে ছবির প্রথম লুকেই রয়েছে চমক। নিউ পোস্টার লুকে, গাছবন্দুক আর ছবির চরিত্র গুলোই যেন ফুটে উঠেছে সৌরভ, অনামিকা আর সঞ্জুর আদলে। তাহলে কি বাড়তি আকর্ষণ থাকছে, অগ্নিযুগের সেই জঙ্গলমহলকে নিয়ে। চেনা জঙ্গলমহলের অচেনা কাহিনি কি এবার আঁকবেন খরাজ মুখার্জী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সুমিত গাঙ্গুলী, অরিন্দম গাঙ্গুলী, দুলাল লাহিড়ী, পুষ্পিতা মুখার্জীরা। জানা যাবে ‘ইস্কাবন’ মুক্তির পর।