অভিজিৎ হাজরা, এনএফবিঃ
উদয়নারায়ণপুর হাওড়া জেলার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নাম। উদয়নারায়ণপুরের গড়ভবানীপুর একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এই এলাকায় কান পাতলেই রাণী রায়বাঘিনী ভবশঙ্করীর দোর্দন্ডপ্রতাপের কথা এখনও শোনা যায়। এই প্রাচীন ইতিহাসকে সকলের কাছে তুলে ধরতে এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও এলাকার বিধায়ক সমীর কুমার পাঁজা। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠছে রায়বাঘিনী রাণী ভবশঙ্করী স্মৃতি পর্যটন কেন্দ্র।
জানা যায়, আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম পর্যন্ত গড়ভবানীপুর ছিল ভুরিশ্রেষ্ঠ পরগনার রাজধানী।চতুরানন মহানিয়োগী হুগলি জেলার দিলাকাশ থেকে এই রাজধানী গড়ভবানীপুরে নিয়ে যান। বর্তমান হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও মেদিনীপুর নিয়ে কলিঙ্গ (বর্তমান ওড়িশা) সীমা পর্যন্ত এই রাজ্য বিস্তৃত ছিল। দ্বিতল রাজবাড়ির পাশে গোপীনাথ জিউ মন্দির সহ গড়পুকুর,ফুলপুকুর ও ঘটপুকুরের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি সুড়ঙ্গ পথে একের সঙ্গে অপরের যোগাযোগ ছিল। এই রাজপরিবারের বীরাঙ্গনা রাণী ছিলেন রাজা রুদ্রনারায়ণের পত্নী রাণী ভবশঙ্করী। তিনি পাঠান সুলতান কোতল খাঁর সেনাপতি ওসমান খাঁ কে পরাজিত করেন। তাঁর এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আকবর সেনাপতি মানসিংহ কে গড়ভবানীপুরে পাঠান এবং রাণীকে রায় বাঘিনী রাণী ভবশঙ্করী উপাধিতে ভূষিত করেন।
রায়বাঘিনী রাণী ভবশঙ্করী স্মৃতি রক্ষা সমিতি সূত্রে জানা যায়,২০২১ সালে রাজ্যে নতুন করে তৃণমূল কংগ্রেস শাসন ক্ষমতায় আসার পরেই এই জায়গাটিকে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই এই পর্যটন কেন্দ্রকে সাজাতে স্থানীয় সাংসদ ও বিধায়ক এলাকার উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি সংস্কৃতি কেন্দ্র,১০ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি শৌচাগার এবং ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি নজর মিনার। এছাড়াও পর্যটন কেন্দ্রটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে উলুবেড়িয়ার সাংসদ সাজদা আহমেদের অর্থানুকুল্যে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে তিনটি সুদৃশ্য তোরণ তৈরী করা হয়েছে। স্মৃতি রক্ষা সমিতি সূত্রে আরও জানা যায়, উদয়নারায়ণপুর কেন্দ্রের বিধায়ক সমীর কুমার পাঁজা- র উদ্যোগে ১৬ লক্ষ টাকায় স্থানীয় মণিণাথ পুকুর ও মন্দির চত্ত্বর সৌন্দ্যর্যায়ন করা হয়েছে । হাওড়া জিলা পরিষদ, উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতি,স্থানীয় গড়ভবানীপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েত আর্থিক ও পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।
পর্যটন কেন্দ্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটন কেন্দ্রের ভিতরে একটি মিউজিয়াম,লাইট অ্যান্ড সাউন্ড,মুক্তমঞ্চ, শিশু উদ্যান,বায়ো ডাইভার্সিটি
পার্ক,কটেজ, অতিথি নিবাস,হস্ত শিল্প কেন্দ্র,মূর্তি সহ ল্যান্ডস্কেপ এবং বোটিং এর ও ব্যবস্থা থাকবে। ইতিমধ্যেই হাওড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মাস্টার প্ল্যান রাজ্য পর্যটন দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে। মধ্যযুগের বীরাঙ্গনা রাণী ভবশঙ্করীর চাপা পড়া ইতিহাস এর তিনি আবিস্কারক। ইতিহাস রুদ্ধ গড় ভবানীপুর এর জনপদ তথা উদয়নারায়ণপুর তাঁর হাত ধরে রাজ্য পর্যটন মানচিত্রে অঙ্গীভূত হয়েছে।
ইতিহাস বিশ্রুত গড়ভবানীপুরে”রায়বাঘিনী রাণী ভবশঙ্করী স্মৃতি মেলা” – র নবম বর্ষ(২৭ ডিসেম্বর-১লা জানুয়ারী) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইতিহাস ধূলি ধুসরিত,সম্প্রীতির আলোকে উদ্ভাসিত বর্ণময় সংস্কৃতির অঙ্গনে ৬ দিন ব্যাপী মেলায় থাকছে প্রতিভা অন্বেষণ, লোকসংস্কৃতির মাটির ছোঁয়া,মনোজ্ঞ বিনোদন,কবি সম্মেলন, আর গুনীজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের এক মনোমুগ্ধকর সমন্বয়।
২৭ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার দুপুর ৩ টায় ৯ম বর্ষ “রায়বাঘিনী রাণী ভবশঙ্করী স্মৃতি মেলা” -র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় ৷ তিনি সকলকে কোভিড বিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অরূপ রায়, ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সমবায় দপ্তর। এই বর্ণময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোনারপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িকা লাভলি মৈত্র, উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক বিদেশ বহু, উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী, আমতা কেন্দ্রের বিধায়ক সুকান্ত পাল,জগৎবল্লভপুর কেন্দ্রের বিধায়ক সীতানাথ ঘোষ,সাঁকরাইল কেন্দ্রের বিধায়িকা প্রিয়া পাল , হাওড়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়িকা নন্দিতা চৌধুরী, হাওড়ার জেলা শাসক মুক্তা আর্য, হাওড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি অজয় ভট্টাচার্য, হাওড়া জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ-সমবায় কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল, হাওড়া জেলা গ্ৰামীণ পুলিশ সুপার সৌম্য রায়, উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসক শমীক ঘোষ, উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক প্রবীর কুমার শিট, উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুলেখা পাঁজা প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সভাপতির আসন অলংকৃত করেন গড়ভবানীপুর রায়বাঘিনী রাণী ভবশঙ্করী স্মৃতি রক্ষা সমিতির সভাপতি তথা উদয়নারায়ণপুর কেন্দ্রের বিধায়ক সমীর কুমার পাঁজা।