এনএফবি, কোচবিহারঃ
বাড়ী ফেরার পথে রহস্যজনক ভাবে খুন হলেন অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলা ৷ গুরুতর জখম হলেন তার স্বামী ৷
জানা গিয়েছে, মাথাভাঙ্গা ২ ব্লকের লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারিকামারী গ্রাম এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক একজন ভুটানের বিল্ডিং ঠিকাদার এবং একজন ব্যবসায়ী। স্থানীয় কুশিয়ার বাড়ি বাজারে একটি দোকান রয়েছে তার। খুব অল্প দিনের মধ্যে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং বিত্তবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
জানা যায়, প্রায় নয় বছর আগে দেখাশোনা করে একরামুলের সঙ্গে পুন্ডিবাড়ি শুটিং ক্যাম্প এলাকার মাজেদা বিবির বিয়ে হয়। তাদের একটি সাত বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে এবং বর্তমানেও মাজেদা বিবি ৮ মাসের গর্ভবতী।
একরামুলের পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার একরামুল তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে রাখতে বোনের স্বামীর বাড়ী রাঙালি বাজনা এলাকায় যান। এরপর তার একটি আর্থ মুভার বিক্রি করেছে বীরপাড়া এলাকায় যা একরামুলের স্ত্রীর নামে ছিল এবং নাম বদলি করতে একরামুল তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বীরপাড়ায় যায়। কিন্তু ওমিক্রণ পরিস্থিতির কারণে বৃহস্পতিবার বীরপাড়া সব দোকান বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকভাবে সেই কাজ না হওয়ায় তার স্ত্রীকে নিয়ে জয়গাঁ এলাকায় তার দিদির বাড়িতে যান।
একরামুলের বাবা মোকসেদ আলী জানায়, ছেলের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয় বিকাল সোয়াপাঁচটা নাগাদ। ছেলে জানায় আমি জয়গাঁয় দিদির বাড়িতে এসেছি বাড়ি ফিরছি। এরপর রাত প্রায় সাতটা নাগাদ তিনি জানতে পারেন হাসিমারা ব্রিজ সংলগ্ন ফাঁকা রাস্তায় তার গাড়িতে থাকা পুত্রবধূ তথা একরামুলের স্ত্রী মাজেদা বিবির (২৮) গলায় কে বা কারা ছুরি দিয়ে নলি কেটে দেয় ৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাজেদার। এবং গুরুতর জখম অবস্থায় কোনমতে পালিয়ে বাঁচেন একরামুল হক । এরপর পুলিশ খবর পেয়ে একরামুল হককে প্রথমে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল এবং পরে পরিবারের লোকজন একরামুলকে কোচবিহারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মাদারিহাট ফাঁড়ির পুলিশ সহ আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ।
এদিকে ঘটনায় খুন হওয়া মাজেদা বিবির পরিবারের এক আত্মীয় ছালেয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, একজন মহিলাকে সহজে কেউ গায়ে হাত দেয় না একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হঠাৎ করে কেউ একজন গাড়ি দাঁড় করিয়ে গলার নটি কেটে দিল। বিষয়টি রহস্যজনক এবং খুব তাড়াতাড়ি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দোষীদের বের করে শাস্তির দাবি রাখেন তিনি।
পাশাপাশি একরামুল হকের বাবা মোকসেদুল হক অভিযোগ করেন, যে জায়গায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শুনেছি ওই জায়গায় বেশ কয়েকবার খুন হয়েছে। একটা পুরো ফাঁকা জায়গা পুলিশ কেন সেই জায়গায় কোন প্রোটেকশন মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা। পুরো ঘটনায় তিনি পুলিশ প্রশাসনের উপর আঙুল তুলেছেন এবং তিনিও খুব দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে কঠোরতম শাস্তির দাবি রেখেছেন।
তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। শুক্রবার মাদারিহাট ফাঁড়ির পুলিশ এবং ফালাকাটা থানার বিশেষ পুলিশ বাহিনী তদন্তের স্বার্থে দ্বারিকামারী গ্রামে আসেন এবং একরামুলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। যেহেতু একরামুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাই ঠিক কি ঘটেছিল তা স্পষ্ট জানা যায় নি। তবে গোটা ঘটনায় রহস্যময় বলে মনে করছেন অনেকে।