অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
সদ্য এটিকে মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়েছেন। আইএসএলের সফলতম কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের ছেড়ে দেওয়া দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তাঁরই দেশের নতুন প্রজন্মের কোচ হুয়ান ফেরান্দো। আর দায়িত্ব নিয়েই তাঁর সামনে তাঁর সদ্য প্রাক্তন দল এফসি গোয়া। কী বলছেন এই ম্যাচ নিয়ে। নতুন দল নিয়েই বা কী বক্তব্য তাঁর? মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন তিনি!
নতুন দলকে নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ অনুশীলনের পরে দল সম্পর্কে কী ধারণা হল আপনার?
উত্তরঃ এই পরিস্থিতিতে এখন দলের ফুটবলাররা ভাবছে কোচ কাকে বেশি চাইছে বা চাইছে না। আর কোচ হিসেবে আমি চাইছি খেলোয়াড়দের সামনে যথাসম্ভব সুযোগ এনে দিতে। এখন যত দিন যাবে, অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে আমাদের। তবে এখন কাজটা খুব কঠিন। কারণ, এখন নতুন করে শুরু করা বা নতুন কৌশল বোঝানো বা সেই অনুযায়ী খেলার পরিকল্পনা তৈরি করার মতো যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে নেই। আমরা এখন মরশুমের মাঝামাঝি জায়গায় চলে এসেছি। তবে আমি খুশি যে দলের ছেলেদের শেখার আগ্রহ আছে। ওরা অনেক কিছু জানতে চাইছে। এটা আমাদের পক্ষে ভাল।
দলের মান নিয়ে কী বলবেন?
উত্তরঃ অবশ্যই যথেষ্ট উঁচু মানের দল। তবে এখন ছেলেদের বোঝাতে হবে ফুটবল শুধু গুণ বা মান দিয়ে হয় না। দল হিসেবে খেলাটা জরুরি, প্রতিদিন উন্নতি করাটাও জরুরি। যে পরিকল্পনায় খেলতে হবে, সেই পরিকল্পনার ওপর আস্থা রাখাটাও খুবই জরুরি।
আপনি বলেছেন, আপনার স্টাইলে ফুটবল খেলাবেন এটিকে মোহনবাগানকে দিয়ে। সেটা ঠিক কী রকম?
উত্তরঃ আমাদের লক্ষ্য আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা। সম্ভব হলে মাঠে ৯০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখো, আগ্রাসী ফুটবল খেলে বিপক্ষকে চাপে রাখো। পজিশনাল অ্যাটাক জরুরি। প্রয়োজন হলে রক্ষণের খেলোয়াড়রাও আক্রমণে সাহায্য করো। মাঠের মধ্যে জায়গা ভাল ভাবে বুঝতে হবে, সামনে ও পিছনে। কোন সময়ে একজনের বিরুদ্ধে দু’জন আক্রমণে উঠবে, কখন একজনের বিরুদ্ধে একজন আক্রমণ করবে। আমাদের এরকমই নিয়ম। আশা করি, যত দিন যাবে এই ব্যাপারগুলো সবাই বুঝতে পারবে এবং এ ভাবেই খেলে যাবে।
পরের ম্যাচ এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। এই ম্যাচ নিয়ে কী বলবেন?
উত্তরঃ এই সপ্তাহটা আমার কাছে বেশ অবাক করার মতো। সদ্যপ্রাক্তন হওয়া দলের বিরুদ্ধে নতুন দলকে নামানো। সাধারণত, ক্লাব বদল করলে মাঝখানে সময় পাওয়া যায় শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য। কিন্তু এক্ষেত্রে সে রকম কিছুই পাইনি। আমি কিছুটা বিভ্রান্ত বলতে পারেন। কিছুটা অবাক। কিছু কিছু মুহূর্তের কথা বলে বোঝানো কঠিন। তবে আমি পেশাদার। সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব। এখন আমাকে দলটা তৈরি করতে হবে। ম্যাচের আগে ও পরের মুহূর্তগুলো আলাদা। আগের মুহূর্তগুলো জেতার জন্য দলকে প্রস্তুত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গত ১৭ মাস আপনি এফসি গোয়ার কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এর ফলে কি কালকের ম্যাচে আপনি কোনও বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন?
উত্তরঃ এটা বোঝানো সোজা হবে না। মাত্র দু’দিনে আমাকে অনেক কিছু বদলে ফেলতে হয়েছে। আমার পক্ষেও এত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল না। তবে এখন আমার ফোকাসে শুধুই ক্লাব। এটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এফসি গোয়ার প্রতি অবশ্যই শুভেচ্ছা রইল। আসলে কিছু কিছু সময় এমন আসে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়ে।
কয়েক দিন আগে পর্যন্ত এফসি গোয়ার কোচ হিসেবে কাজ করার সুবাদে ওদের প্লাস-মাইনাস আপনার জানাই আছে। এটা কি আপনার দলের পক্ষে একটা বাড়তি সুবিধা?
উত্তরঃ আমার কিন্তু তা মনে হয় না। কারণ, ওদের নতুন কোচ এসেছেন। ওরা নিশ্চয়ই একশো শতাংশ নতুন পরিকল্পনা নিয়ে খেলবে। ওদের এখন যিনি হেড কোচ (ডেরেক পেরেইরা), তিনি সব সময় প্রথম এগারোর খুব কাছাকাছি থেকেছেন। উনি দলটাকে খুব ভাল করে চেনেন। আশা করি উনিও নতুন পরিকল্পনা করেছেন। এটা আমার ধারণা। তবে আমি নিজের দল নিয়ে বেশি ভাবব। নিজেদের খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশি চিন্তা করব। আশা করি আমাদের পরিকল্পনা সফল হবে।
এফসি গোয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড় কে বা কারা?
উত্তরঃ আমার মনে হয় ওদের দলের ২৯জন খেলোয়াড়ই বিপজ্জনক। যথেষ্ট ভাল খেলোয়াড় ওরা। প্রিস্টন, গ্ল্যান, দেবেন্দ্র, রোমারিওর মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে। বিদেশি ফুটবলাররাও প্রত্যেকে পরিশ্রমী।
আপনার দলের গোলকিপার অমরিন্দরের পারফরম্যান্স খুব একটা ভাল হচ্ছে না। ডিফেন্ডারদের সঙ্গে গোলকিপারের বোঝাপড়ার অভাবও দেখা দিচ্ছে। আপনি কি একমত?
উত্তরঃ আমার কাছে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। দু’সপ্তাহ আগে যা হয়েছে, তা ভুলে যাওয়াই ভাল। নর্থইস্ট ম্যাচের পর থেকে কী কী হয়েছে, সেটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। নতুন স্টাইল, নতুন পরিকল্পনায় খেলাতে হবে এই দলকে। পরে পরে আরও উন্নতি করতে হবে।
এটিকে মোহনবাগান সেট পিস থেকে অনেক গোল খেয়েছে, বিশেষ করে কর্নার থেকে। এই জায়গাটাতে কী ভাবে শোধরাবেন?
উত্তরঃ দলের আবেগ, অনুভূতি এগুলো ঠিক করতে হবে। দলের ওঠা-নামায় গতি আনা প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই উন্নতি দরকার। তবে এটাই দলের একমাত্র সমস্যা নয়। তা ছাড়া আইএসএলের সাত-আটটা দলের এই একই সমস্যা রয়েছে। এই বিষয়ে অবশ্যই সংশোধন প্রয়োজন।
ইদানীং দেখা যাচ্ছে হুগো বুমৌস ও রয় কৃষ্ণাকে কড়া মার্কিংয়ে রাখা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ওদের সঠিক ভাবে ব্যবহার করবেন?
উত্তরঃ আমার মনে হয় দু-একজনকে নিয়ে কথা বলার চেয়ে সবাইকে নিয়ে বলা ভাল। আমার কাছে দলের সবার একই মানের ফুটবল খেলাটা বেশি জরুরি। সে রয় হোক বা ডেভিড বা হুগো। এটাই আমার লক্ষ্য। যাদের কথা বলছেন, তারা নিঃসন্দেহে ভাল খেলোয়াড়। তবে তিরি, কার্ল, কাউকো, হুগো, প্রীতম, রয় সবাই একসঙ্গে সমান ভাল খেলুক, একই পরিকল্পনা নিয়ে খেলুক এটাই আমার লক্ষ্য।
নক আউটে যোগ্যতা পাওয়ার জন্য প্রথম লিগে কত পয়েন্ট নিয়ে শেষ করাটা লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনি?
উত্তরঃ অবশ্যই একটা লক্ষ্য থাকা উচিত। নক আউটে যেমন প্রতি ম্যাচে জেতার লক্ষ্য নিয়ে নামতে হয়, লিগেও তাই। প্রতি ম্যাচে জেতাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
সদ্য ছেড়ে আসা দলের বিরুদ্ধে দল নামানোটা কি আপনার কাছে বাড়তি চাপের?
উত্তরঃ হ্যাঁ, চাপের তো বটেই। তবে এই চাপটা আমি উপভোগ করি। এটা আমার কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই ক্লাব যে আমার ওপর আস্থা রেখেছে, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
শেষ প্রশ্ন, আপনার দলে কোনও চোট-আঘাত রয়েছে?
উত্তরঃ না না, আমাদের মেডিক্যাল স্টাফরা খুব ভাল কাজ করছেন। প্রত্যেকেই ফিট রয়েছে। এই ম্যাচে আমি সেরা এগারো বেছে নেওয়ার পুরোপুরি সুযোগ পাচ্ছি।