এনএফবি, কলকাতাঃ
রাজ্যে নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বৃহস্পতিবার দক্ষিণেশ্বরে এক কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দমদমের সাংসদ বলেন, “মহিলাদের উপর অত্যাচার নিয়ে সকলেই চিন্তিত। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স করতে হবে। কোনও ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব বরদাস্ত করা যাবে না। যে রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে একটা অত্যাচারের ঘটনাও লজ্জার। আশা করব, পুলিশ প্রশাসন এই বিষয়ে নজর রাখবেন।“
দেগঙ্গা, মাটিয়া, ইংরেজবাজার, বাঁশদ্রোণী, হাঁসখালিতে সম্প্রতি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। সেই প্রেক্ষিতেই এ দিন সৌগত রায়ের মন্তব্য তাৎপর্যবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
হাঁসখালির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,” আপনি রেপড ( ধর্ষিতা) বলবেন? প্রেগনেন্ট ( অন্তঃসত্ত্বা) বলবেন? না লাভ-অ্যাফেয়ার্স( প্রেম ঘটিত সম্পর্ক) বলবেন? পুলিশ কে জিজ্ঞাসা করলাম। ঘটনাটা খারাপ, গ্রেফতার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির নাকি লাভ- অ্যাফেয়ার্স ছিল শুনেছি।“ তিনি আরও বলেন,” একটা ছোট ঘটনা যেটা আমি পচ্ছন্দ করি না।… তা সত্ত্বেও হয়ে যায়… বার বার (টিভিতে) দেখাচ্ছে, একটা বাচ্চা মেয়ে নাকি রেপড হয়ে মারা গিয়েছে। মেয়েটা ৫ তারিখ মারা গিয়েছে, পুলিশ জেনেছে ১০ তারিখ। আপনারা বলুন, ৫ তারিখ যদি মারা গিয়ে থাকে, অভিযোগ থাকলে ওই দিনই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন? বডিটা পুড়িয়ে দিলেন!”
সংবেদনশীল বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, কমলেশবর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা ঋদ্ধি সেন, সাহিত্যিক বাণী বসু পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান।
মঙ্গলবার হাঁসখালিতে নির্যাতিতার বাড়িতে যান কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সেদিন তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “ ঘটনাটি ভীষণই নাক্ক্যারজনক। যে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে সে দুষ্কৃতী। তার অন্য কোনও পরিচয় হতে পারে না। রাজনৈতিক পরিচয় দেখতেও চাই না আমি। যে ঘটনা ঘটিয়েছে সে মোটেই নাবালক নয়। বয়স ২১-এর উপরে।“ একইসঙ্গে মহুয়া বলেন,” পকসো আইন কী বলে! সম্মতিক্রমে কোনও নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হলেও, আইনের চোখে তা অবৈধ, ধর্ষণ। তাই মেয়েটি হ্যাঁ বলেছে, নাকি না বলেছে, আইন তা দেখে না। এটা ধর্ষণ। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। একটি ১৪ বছরের মেয়ে এভাবে মারা গিয়েছে।“
সৌগত রায়ের এই মন্তব্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বলছেন নারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ‘অপপ্রচার’, সেখানে সৌগত রায় বলছেন যে রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে একটা অত্যাচারের ঘটনাও লজ্জার। তাহলে কী তিনি মেনে নিলেন যে, রাজ্যে নারীদের উপর অত্যাচার হচ্ছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, রাজ্যে নারীদের উপর অত্যাচার ও দলের অবস্থান নিয়েও শাসক দলের অন্দরে যে মত-পার্থক্য রয়েছে তা মহুয়া মৈত্র সৌগতবাবুর বক্তব্যে কার্যত পরিস্কার হয়ে গেল।
এই প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, “মুখ্য়মন্ত্রী মহিলা না পুরুষ, এ ক্ষেত্রে তা বিচার্য নয়। আসল কথা হল এসবের জন্য আমাদের রাজ্যের মাথা নত হচ্ছে। সৌগতবাবু সঠিক কথা বলেছেন। তবে যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে বললে হত তা তিনি পারেননি।“
বিজেপির রাজ্য সভাপতি পরামর্শ যে, “সৌগত রায় বিষয়টি উপলব্ধি করতে পাচ্ছেন। কিন্তু দক্ষিণেশ্বরেরর থানা উদ্বোধনের মঞ্চে না বলে ওনার উচিত সত্যি কথাগুলো কালীঘাটে গিয়ে বলা।“
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “সৌগতবাবু মেনে নিলেন রাজ্যে মহিলাদের উপর আক্রমণ চলছে এবং পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ। অধ্যাপক সৌগত রায় আসলে হাঁসখালি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রেগন্যান্ট, লাভ অ্যাফেয়ার তত্ত্বকেই খারিজ করেছেন।“