অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতোই মহিলারদের ওয়ান-ডে বিশ্বকাপের শুরুটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে হলেও খেলার ফলাফল আলাদা হল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারতকে বাবর আজমের দল ১০ উইকেটে হারিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম জয় তুলে নিয়েছিল। কিন্তু মহিলা ভারতীয় দল সেই হারের মধুর বদলা নিল। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই দাপট দেখিয়ে ১০৭ রানে জয় তুলে নেয় মিতালি রাজের ভারত। ম্যাচের সেরা হল পূজা বস্ত্রকার।
রবিবার (৬ মার্চ) টসে জিতে মাউন্ট মাউনগানুইয়ে প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মিতালি। ভারতীয় দলের হলে ওপেন করতে নামেন সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধনা ও শেফালি বর্মা। তবে ভারতের শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি। ২.৬ ওভারে ডায়নার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন শেফালি। ৬ বল খেলেও খাতা খুলতে পারেননি শেফালি। পরিবর্তিত ব্যাটসম্যান হিসেবে মন্ধনার সঙ্গে বড় রানের লক্ষ্য নিয়ে লড়াই শুরু করেন দীপ্তি শর্মা। মন্ধনার সঙ্গে জুটি বেঁধে ১৩তম ওভারে দলগত ৫০ রানের গণ্ডি টপকান দীপ্তি। ২১.৬ ওভারে ফের ধাক্কা খায় ভারত। মন্ধনা অর্ধশতরান করার ঠিক পরের বলেই (সান্ধুর বলে) বোল্ড হন দীপ্তি। ২টি বাউন্ডারির সৌজন্যে ৫৭ বলে ৪০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দলগত ৯৬ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায়। পরিবর্তিত ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন অধিনায়ক মিতালি। ২৪.১ ওভারে ফের ধাক্কা খায় ভারত। ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করে আনাম আমিনের বলে তাঁর হাতেই ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন স্মৃতি। ৩টি চার ও ১টি ছক্কার সৌজন্যে ৭৫ বলে ৫২ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। পাশাপাশি ওয়ান ডে ক্রিকেটে ২৫০০ রানের মাইলস্টোন টপকে যান মাত্র ৬৫টি ইনিংসেই। পরিবর্তিত ব্যাটসম্যান হিসেবে হরমনপ্রীত কউর। তবে তিনি বেশিক্ষণ মাঠে লড়াই চালাতে পারেননি। ২৮.৪ ওভারে নিদা দারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ১৪ বলে মাত্র ৫ রান করে আউট হন তিনি। পরিবর্তিত ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে আসেন রিচা ঘোষ। তবে তিনিও বেশিক্ষণ মাঠে টিকতে পারেননি। ৩০.৫ ওভারে নিদা দারের বলে মাত্র ১ রানেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ভারতের এই উইকেটরক্ষক। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে আসেন স্নেহ রানা। এরপর ৩৩.১ ওভারে সান্ধুর বলে ডায়নার হাতে ধরা ক্যাচ দিয়ে ৩৬ বলে ৯ রান করে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক মিতালি। পরিবর্তিত ব্যাটসম্যান হিসেবে পূজা বস্ত্রকার মাঠে নেমে রানাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন ম্যাচে ফেরার লড়াই। পার করেন দলগত ২০০ রান এবং ১০০ রানের পার্টনারশিপও। এরপর ৪৯.১ ওভারে ফতিমা সানার বলে বোল্ড হন পূজা বস্ত্রকার। স্নেহ রানাকে সঙ্গে নিয়ে রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়ার পাশাপাশি ৮টি বাউন্ডারির সৌজন্যে ৫৯ বলে ৬৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। ভারত ২৩৬ রানে ৭ উইকেট হারায়। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে রানার সঙ্গে যোগ দেন অভিজ্ঞ ঝুলন গোস্বামী। নির্ধারিত ৫০ ওভারের শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান তোলে ভারত। ৪টি বাউন্ডারির সৌজন্যে ৪৮ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকেন স্নেহ রানা এবং ১টি বাউন্ডারির সৌজন্যে ৩ বলে ৬ রান করে অপরাজিত থাকেন ঝুলন গোস্বামী। পাকিস্তানের হয়ে নিদা দার ও সান্ধু ২ টি করে উইকেট পান। ডিয়ানা, আমিন ও ফাতিমা একটি করে উইকেট পান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালই করেছিল পাকিস্তান। তবে উইকেট না তুলতে পারলেও বেশ আটোশাটো বল করতে দেখা যায় ভারতকে। ১০.৬ ওভারে পাকিস্তানকে প্রথম ধাক্কা দেয় ভারত। অভিজ্ঞ ঝুলনের হাতে ধরা পড়েন জাভেরিয়া। ১টি বাউন্ডারির সৌজন্যে ২৮ বলে ১১ রান করে ফেরেন তিনি। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে আসেন বিসমাহ মারুফ। সিদরা আমিনকে সঙ্গী করে কিছুটা নরাই চালানোর চেষ্টা করেন মারুফ। তবে তিনিও স্কোর বোর্ডে খুব একটা রান যোগ করতে পারেননি। ১৭.৪ ওভারে দীপ্তি শর্মার বলে রিচা ঘোষের দস্তানায় ধরা পড়েন বিসমাহ মারুফ। ২টি বাউন্ডারির সৌজন্য ২৫ বলে ১৫ রান করেন তিনি। এরপরেই ভেঙে পরে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরতে থাকেন সাজঘরে। কেউই বেশি লড়াই চালাতে পারেননি। ১৮.২ ওভারে রানার বলে দীপ্তির হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪ বলে ৫ রান করে মাঠ ছাড়েন ওমাইমার। এরপর ২১.২ ওভারে ঝুলনের বলে উইকেটরক্ষক রিচার হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩টি বাউন্ডারির সৌজন্যে ৬৪ বলে ৩০ রান করে মাঠ ছাড়েন সিদরা আমিন। এরপর ২৩.১ ওভারে ১০ বলে ৪ রান করে ঝুলনের বলে রিচার হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন নিদা দার। ২৯.৬ ওভারে রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ের বলে আলিয়া রিয়াজকে স্টাম্প আউট করেন রিচা ঘোষ। ২৩ বলে ১১ রান করে মাঠ ছাড়েন আলিয়া। ফের ৩৩.১ ওভারে আরও একটি উইকেট তুলে নেন রাজেশ্বরী। এলবিডব্লিউ করে ৩৫ বলে ১৭ রানে ফেরান ফতিমা সানাকে। ১০০ রানের গণ্ডি টপকানোর আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্থান। এরপর ৩৫.৫ ওভারে আবারও একটি উইকেট তুলে নেন রাজেশ্বরী। এলবিডব্লিউ করে ১৯ বলে ১২ রানে সাজঘরে ফেরান সিদরা নওয়াজকে। ৩৬.৫ ওভারে নাশরা সান্ধুরকে সাজঘরে ফেরান স্নেহ রানা। ৫ বল শূন্য রানেই রিচার হাতে ধরা পড়েন সান্ধু। ম্যাচের শেষ উইকেটটি তুলে নেন মেঘনা সিং। ৩৫ বলে ২৪ রানে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই ৪৩ ওভারে শেষ হয়ে যায় পাকিস্থানের ইনিংস। ভারত জয় পায় ১০৭ রানে।