জুলাই 8, 2024
Latest:
স্থানীয়

মেয়ের জন্য লড়াই ‘লালমোহনবাবুর’

এনএফবি, পূর্ব মেদিনীপুরঃ

লালমোহন নামটি শুনলেই প্রথমেই যে ছবিটি মনে আসে তা হল মাথায় টাক, নাকের নিচে ছাঁটা গোঁফ, ধুতি – পঞ্জাবি পরা এক মাঝ বয়সি বাঙালির। সত্যজিৎ সৃষ্ট ফেলুদা গল্পে এক রসময় চরিত্র। যিনি নিজেও রহস্য গল্প লেখেন। যার প্রধান চরিত্র প্রখর রুদ্র।
তবে এই লালমোহনের গল্পে কোনো প্রখর রুদ্র নেই,তবে রয়েছে এক লড়াকু মনোভাব। মেয়েকে নিয়েই যিনি লড়ে চলেছেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। কাঁথির লালমোহনবাবুর জীবন কোন গল্পের থেকেও কম নয়। বাবা ডাক শোনাও হয়নি তাঁর।

ঈশিতা মন্ডল, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

মুখে নেই ভাষা, জন্ম থেকেই বধির মেয়ে ঈশিতা। মানুষের মুখে উচ্চারিত কোনো শব্দ শোনার সৌভাগ্যও হয়নি । মনের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেনা কাউকে। মানুষের মুখের ইশারা দেখেই অনেক কষ্টে সবকিছু বুঝতে হয় তাঁকে। জন্মগত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চায় ঈশিতা। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের অযোধ্যাপুর গ্রামের লালমোহন মন্ডলের কন্যা ঈশিতা মন্ডল, এবারের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী। জন্ম থেকেই মুক ও বধির ঈশিতা।

ঈশিতার মা।

পিতা লালমোহন মন্ডল পেশায় কাঁথি পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে অভাব অনটনের সংসার লালমোহন বাবুর। মেয়ে জন্মের পর লালমোহন বাবু যখন জানতে পারেন, মেয়ে শ্রবণ শক্তি ও বাক শক্তি হারিয়েছে, তখন থেকেই লালমোহন বাবুর জীবনে শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। মেয়েকে বাক শক্তি ও শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিতে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু শেষমেষ সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন মেয়ে চিরতরে বাক শক্তি হারিয়ে বধির হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের কথা শুনে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন লালমোহন বাবু। নিজের মনকে শক্ত করে মেয়েকে পড়াশোনায় উৎসাহ জোগাতে থাকেন। জন্মগত ভাবে মুক ও বধির শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষার্থী দের থেকে আলাদা। এই কারণে এদের শিক্ষাদান পদ্ধতিও আলাদা। প্রাথমিক শিক্ষা মুক ও বধির স্কুলে নিলেও পরে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে কাঁথি চন্দ্রামনি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন শুরু করে ঈশিতা। স্কুলের শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে, ঈশিতা এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। জীবনের প্রথম বড়ো পরীক্ষায় বসছে মেয়ে খুশির সাথে বাবার চোখেমুখে রয়েছে উৎকণ্ঠা।