জুলাই 3, 2024
Latest:
ক্রীড়া

নর্থইস্টকেও হারাতে পারল না এসসি ইস্টবেঙ্গল

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

লিগ টেবিলের দশ নম্বর দলের বিরুদ্ধেও তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পারল না এসসি ইস্টবেঙ্গল। সোমবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে ১-১ ড্র করে ১১ নম্বরেই রয়ে গেল তারা। এই ড্র দিয়েই এ বারের আইএসএলে অভিযান শেষ করল গতবারের সেমিফাইনালিস্ট নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। লাল-হলুদ বাহিনীর কাছে নিজেদের সর্বশেষ অবস্থান থেকে টেনে তোলার এটাই ছিল সবচেয়ে ভাল সুযোগ। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে না পারায় তারা ১১ নম্বরেই রয়ে গেল।
সোমবার সারা ম্যাচে দুই দলই লড়াকু ফুটবল খেলে। প্রথমার্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে একেবারে শেষ মুহূর্তে অস্ট্রিয়ার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মার্কো সাহানেকের গোলে এগিয়ে যায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা দশ মিনিট গড়িয়ে যাওয়ার পরে পেনাল্টি পায় এসসি ইস্টবেঙ্গল, যা থেকে গোল করে সমতা আনেন ক্রেয়োশিয়ান তারকা ফরোয়ার্ড আন্তোনিও পেরোসেভিচ। এর পরে দুই দলই একাধিক বার গোলে শট নিলেও একবারও জালে বল জড়াতে পারেনি।

ড্যারেন সিডোল ম্যাচের আগে ওয়ার্ম আপ করার সময় আহত হয়ে প্রথম এগারো থেকে ছিটকে যান। তাঁর জায়গায় নামেন জয়নার লরেন্সো। অন্য দিকে, মার্সেলিনহো এ দিন নর্থইস্টের প্রথম এগারোর বাইরেই ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে নামেন তিনি। এ দিন শুরু থেকে দুই দলের পারফরম্যান্সেই তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়। একে অপরকে চাপে রাখার প্রবণতা দেখা যায় শুরু থেকেই। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসসি ইস্টবেঙ্গল ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে।
আট মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে একটি দূরপাল্লার জোরালো গোলমুখী শট নেন হনামতে, যা বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে বাঁচান নর্থইস্টের গোলকিপার মিরশাদ মিচু। বলটা আর একটু ওপর দিকে গেলে বা বলে আরও গতি থাকলে গোল হতে পারত। ১৭ মিনিটের মাথায় নাওরেম মহেশ ফের দূরপাল্লার শট নেন, যা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটেই নর্থইস্টের ভুল ক্লিয়ারেন্স থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে ফের লম্বা শট নেন হনামতে। তবে বিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা গোলের বাইরে চলে যায়। ৩৫ মিনিটের মাথায় পেরোসেভিচের দীর্ঘ শটও পোস্টের অল্প দূর দিয়ে গোলের বাইরে চলে যায়।
নর্থইস্টেরও পাল্টা আক্রমণ চালানোয় কোনও জড়তা ছিল না। যদিও তা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। ২০ মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন নর্থইস্টের মার্কো সাহানেক। ইমরান খানের পাস থেকে তিনি গোলের সামনে ক্রস দেন, যা ফ্রানিও পর্চে ব্লক করে দেন। ভিপি সুহের, দেশর্ন ব্রাউনরা এদিন গোলের জন্য ছটফট করলেও লাল-হলুদ ডিফেন্ডার হীরা মন্ডল, নাওচা সিংদের তৎপরতায় আটক হয়ে যান একাধিকবার। বিপক্ষের অ্যাটাকারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে হীরা নাকে গুরুতর চোটও পান, যার জেরে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে নাকে চওড়া ব্যান্ডেজ করে খেলতে হয়।
তবে বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগেই আকস্মিক গোল খেয়ে যায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। ডানদিকের উইং থেকে যে লম্বা সেন্টার করেছিলেন ভিপি সুহের, তা সোজা দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে নিখুঁত শটে জালে বল জড়িয়ে দেন সম্পুর্ণ অরক্ষিত সাহানেক (১-০)।
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ায় নর্থইস্ট দ্বিতীয়ার্ধে চাঙ্গা হয়ে ওঠে এবং শুরু থেকেই ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করে তারা। এই সময়ে দেশর্ন ব্রাউন ছ’গজের বক্সের মধ্যে ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন। সামনে ছিলেন শুধু গোলকিপার শঙ্কর। কিন্তু তাঁর গোলমুখী শট অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে নেন শঙ্কর।
ধাক্কা সামলে ক্রমশ ম্যাচে ফিরে আসতে শুরু করে এসসি ইস্টবেঙ্গল। ৫৪ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে পাওয়া ফ্রি কিক গোলে রাখেন ফ্রান সোতা, যা মিরশাদ বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে আটকে দেন। পরের মিনিটেই পেনাল্টি আদায় করে নেন সোতা এবং সেই পেনাল্টি থেকে গোল পেয়ে যান পেরোসেভিচ। পেনাল্টি বক্সে উড়ে আসা বলে হেড করতে লাফানো সোতাকে উড়ন্ত অবস্থায় পিছন থেকে ধাক্কা মারেন প্যাট্রিক ফ্লটম্যান, যা দেখে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেরোসেভিচ বাঁ দিকে ওপরের কোণ দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন (১-১)।
সমতা আনার পরই হনামতের জায়গায় মার্সেলো রিবেইরোকে নামান কোচ মারিও রিভেরা এবং এসসি ইস্টবেঙ্গল ফের দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ৬২ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন সৌরভ দাস, তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন।
৭০ মিনিটের মাথায় অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ফ্লটম্যানকে তুলে নিয়ে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার মার্সেলিনহোকে নামায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। এর পর থেকেই বিপক্ষের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে নর্থইস্ট। পরের মিনিটেই আর এক পরিবর্ত খেলোয়াড় জাস্টিন জর্জ ছ’গজের বক্সের মধ্যে থেকে গোলে শট নেন, যা এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে গোলের বাইরে বেরিয়ে যায়।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে আদিল খান ও ওয়াহেংবাম লুয়াংকে নামান রিভেরা। তুলে নেন রফিক ও সৌরভকে। ৮২ মিনিটের মাথায় মহেশকেও তুলে নেন কোচ, নামান বিকাশ জায়রুকে। এই পরিবর্তনগুলি ক্রমশ রক্ষণাত্মক হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে। তবু শেষ দিকে সুযোগের সন্ধানে ছিলেন সোতা, পেরোসেভিচ, রিবেইরো-রা। কিন্তু যথার্থ ফিনিশিং-এর অভাবে ব্যর্থ হন তাঁরা।