প্রথম রহস্য উপন্যাস লিখে রাতারাতি বিখ্যাত সোনিয়া তাসনিম খান

ফারুক আহমেদ

“কেনিয়া ভয়ংকর” নামটাতেই কেমন একটা গা ছমছম ভাব রয়েছে। রহস্য উপন্যাস ধর্মী এই বইটার প্রতি শুরু থেকেই একটা আগ্রহ জন্মেছিলো। পড়বার পর মনে হলো এই কৌতুহল অমূলক ছিলো না মোটেও। গোটা বই এ লেখক তার লেখনীর মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন দারুণ ভাবে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যারেন এবং ঊষা। যারা মূলত ভ্রমণ পিপাসু রহস্য অনুসন্ধানকারী জুটি। দেশ বিদেশ চষে বেড়াবার সঙ্গে সঙ্গে তারা সমাধান করে থাকে দারুণ সব লোমহর্ষক রহস্য। সেই ধারাবাহিকতার সুঁতো ধরেই এদের আগমন ঘটে কেনিয়াতে। এদের তকমাটাও জব্বর বটে। “ব্রেভার্স”। শব্দটা এক অ্যাডভেঞ্চার এবং আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

দুরন্ত এই জুটি রোমাঞ্চকর কেনিয়াতে আসবার পরই বরাবরের মতো ভ্রমণ ক্ষুধা নিবারণের পূর্বেই জড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত রহস্যে। কেনিয়ার মাসাই অধূস্যিত ছোট গ্রাম “কোগেলো”তে কয়েক মাস যাবত একের পর এক মারা পড়ছিলো বন্য পশু। তবে মিলছিলো না এমন মৃত্যুর পেছনে কোন পোক্ত কারণ। স্থানীয় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছিলো এর কূল কিনারা খুঁজে বের করতে। অগত্যা বাধ্য হয়ে ব্রেভার্সদের শরণাপন্ন হয় তারা। তার জের ধরে ঊষা এবং অ্যারেন কগেলোতে পৌঁছুনোর পরপরই শুরু হয়ে ভিন্ন এক রহস্য গাঁথা। স্থানীয় গোরস্থান থেকে হঠাৎ হঠাৎ উধাও হতে থাকে মৃতদেহ। পৈশাচিক এই কর্মযজ্ঞে হতবিহবল হয়ে পড়ে সকলে৷ আচম্বিত এই ঘটনা সবাইকে ক্রমশ এক গোলকধাঁধায় আটকে ফেলছিলো। এরপর…? এরপরের কাহিনী টানটান উত্তেজনা আর চমকে ভরা। আর এই রহস্য গোলকধাঁধা থেকে উতরে আসবার পথটাই খুঁজে নিতে ব্রেভার্সদের সাহসিকতা আর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের খেলাটাই দেখানো হয়েছে এই “কেনিয়া ভয়ংকর” উপন্যাসটিতে।

পুরো উপন্যাসকে বিশ্লেষণ করে আমার যে বিষয়গুলো খুব চমৎকার বলে মনে হয়েছে, তা হলো, ঘটনা প্রবাহের মাঝে চুম্বক আকর্ষণ। পাঠক ধরে রাখবার ব্যাপারে এখানে লেখকের দক্ষতা সত্যি বাহবা পাবার দাবীদার। বিশেষ করে রহস্য গল্পের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। আমার বিচারে এই প্রথম শর্তে লেখক নিঃসন্দেহে উতরে গিয়েছেন৷ এরপর আসি, পর্যটনের বিষয়টাতে। বইয়ের নামেই বুঝা যায় কাহিনীটা আফ্রিকা মহাদেশের শ্যামল দেশ কেনিয়া নির্ভর। এই গোটা পুস্তকে কেনিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, বিশেষ করে মাসাই মারা গ্রামের যে নিখুঁত ছবি লেখক তার কলমে এঁকেছেন, তা এক কথায় অনবদ্য। বলা চলে, লেখকের দক্ষ কলমে চেপে গোটা কেনিয়াই ভ্রমণ করা যাবে চমৎকার ভাবে। একটা কথা না বললেই নয়, বইটার সুবাদে কেনিয়ার টুকটাক কিছু ভাষাও শেখা হয়ে গিয়েছে আমার। আর এরপর যে বিষয়টা দেখবার মতো, সেটা হলো, গল্পের প্রধাণ দুই চরিত্রের মাঝে রসায়ন সৃষ্টির কলা কৌশল৷ বলা বাহুল্য, নাম শুনলেই বেশ বুঝা যায় লিড ক্যারেক্টারের একজন ইউরোপীয় আর একজন এশিয়ান। ইউরোশিয়ার এই চমকপ্রদ মেলবন্ধনের আবেগের রঙ লেখক তার শুভ্র শ্বেত ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে। আমার কাছে বইটির ভাষাগত এবং গুণগত মান বাস্তবিকই দুর্দান্ত লেগেছে। এই বইটি পাঠে রহস্যের পাশাপাশি আরো অনেক কিছুই শিখে নেবার মতো বিষয়বস্তু রয়েছে। সব বয়সী পাঠকদের জন্য বইটা এক কথায় চমৎকার।

অনিন্দ্য এই বইটি রচনা করেছেন বাংলাদেশের সম্ভনাময় তরুণ কথাসাহিত্যিক সোনিয়া তাসনিম খান। বলে নেই ” কেনিয়া ভয়ংকর” প্রতিশ্রুতিশীল এই লেখকের রচিত তৃতীয় উপন্যাস। অমর একুশে বইমেলা ২০২২ উপলক্ষে দারুণ এই বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রকাশন “শিখা প্রকাশনী।” বইটি এবং লেখকের জন্য রইলো অবিরাম শুভ কামনা এবং অভিনন্দন।

বইয়ের নাম: কেনিয়া ভয়ংকর
জনরা, রহস্য উপন্যাস
লেখক: সোনিয়া তাসনিম খান, ঠিকানা: ঢাকা, বাংলাদেশ,
প্রকাশনী: শিখা প্রকাশনী
প্রকাশকাল: অমর একুশে বইমেলা ২০২২।