অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার্সের চূড়ান্ত পর্ব আর মাস খানেক পরেই। তার আগে প্রস্তুতির শেষ ধাপে পরপর কয়েকটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে ভারতীয় দল। সে জন্যই সোমবার বেলারিতে প্রস্তুতি শিবির শেষ করে কলকাতায় এসে পৌঁছেছে ভারতীয় দল। জাতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ মঙ্গলবার কলকাতায় বসে এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, বুধবার এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলবেন তাঁরা। এর পরে আই লিগের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল কলকাতাতেই খেলবে ১৭ ও ২০ তারিখে।
এই তিন ম্যাচের পরে ভারতীয় দল দোহা উড়ে যাবে ২৫ তারিখে, জাম্বিয়ার জাতীয় দলের বিরুদ্ধে ও তার তিন দিন পরে জর্ডনের বিরুদ্ধে খেলার জন্য। ৩০ তারিখে কলকাতায় ফিরে এসে প্রস্তুতির অন্তিম পর্ব সারবে তারা। প্রস্তুতি শিবির শুরুর আগে থেকেই রহিম আলি ও চিঙলেনসানা সিংয়ের চোট ছিল। তাই ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে একটি প্রস্তুতি ম্যাচের সময় নরিন্দর গেহলট চোট পান। বুধবার মুম্বই সিটি এফসি-র বিপিন, আপুইয়া ও রাহুল ভেকে শিবিরে যোগ দেবেন। এটিকে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের এই মাসের ২৫-২৬ তারিখ পর্যন্ত পাবে না ভারতীয় শিবির। কারণ, তাঁরা এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে ব্যস্ত থাকবে।
এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ছ’টি গ্রুপের জয়ীরা যেমন মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, তেমনই দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলগুলির মধ্যে থেকে সেরা পাঁচটি দলকে মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ভারত টানা দ্বিতীয়বারের জন্য এই টুর্নামেন্টের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে নামবে।
এদিন স্টিমাচ জানালেন, “একটা স্থায়ী প্রথম একাদশ তৈরি করতে আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ওরা জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে আমরা ওদের সঙ্গে নিয়ে আরও ৯-১০ দিন অনুশীলন করার সুযোগ পাব। ওদের যদি শুরুর দিকে খেলাতে নাও পারি, তা হলে পরের দিকে হয়তো খেলাব। এএফসি কাপের ম্যাচগুলিতে এটিকে মোহনবাগান খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখব, যেমন মুম্বই সিটি এফসি-র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও দেখেছি। ওখানকার পারফরম্যান্স দেখেই তিনজনকে শিবিরে ডেকেছি।
একেবারেই চাপে নেই আমি। প্রত্যাশা সব সময়ই থাকে। ফুটবলার ও স্টাফদের সঙ্গে নিয়ে আমাকে যে ভাবে এগোতে হবে, সে ভাবেই এগোব। আমি আত্মবিশ্বাসী। প্রস্তুতির জন্য যতটা সময় আমরা পেয়েছি, তাতে কয়েকজন খেলোয়াড় দলে না থাকলেও আমরা ভাল খেলার অবস্থায় থাকব। আমাদের খেলোয়াড়দের যা মান, তাতে অসুবিধা হবে না। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে উঠতে হলে যা যা করতে হয়, তা সবই করব আমরা।”
৩৭ বছরের সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে স্টিমাচ জানালেন,”সুনীল এখনও যথেষ্ট ভাল শেপে আছে। বাহরিন, বেলারুশের বিরুদ্ধে ও দলে ছিল না, কারণ, গত দু’বছরে যে ছোটখাটো চোটগুলো নিয়ে খেলতে হয়েছে ওকে, সেগুলো সারিয়ে ফিরে আসতে চেয়েছিল ও। যথেষ্ট ভাল রিকভারি হয়েছে ওর। প্রস্তুতি শিবিরে প্রতিদিন তা প্রমাণ করেছে ও। এখনও ভারতীয় দলের আক্রমণে প্রধান অস্ত্র সুনীলই। তবে ইদানিং যে ছেলেটি সুনীলের ভাল জুটি হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, সেই রহিম আলিকে আমরা এখন পাচ্ছি না। ও সুনীলের কাজটা অনেক সহজ করে দিতে পারে। ও বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ব্যস্ত রেখে সুনীলকে অনেকটা খোলা জায়গায় করে দিতে সাহায্য করে। রহিম গত কয়েক মাসে দারুণ উন্নতি করেছে। তরুণ ফুটবলারদের সমস্যা হল, ওরা ছোটখাটো চোট নিয়েও খেলে বলে ওই চোটগুলোই বড় হয়ে ওঠে ও দীর্ঘকালীন সমস্যায় পরিণত হয়। রহিমের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছে। ওর এখন অন্তত ৬-৭ সপ্তাহের বিশ্রাম দরকার।”
এশিয়ান কাপ ২০২৩-র মূলপর্বে ভারতের যোগ্যতা অর্জন করার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি জানান,”বাছাই পর্বে আমাদের গ্রুপে আমরাই ফেভারিট। আমরা সাফল্যের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। আমার মনে হয় ভারত মূলপর্বে খেলবে। এই নিয়ে আমার খুব একটা সন্দেহ নেই। আশা করি, কলকাতার মানুষ আমাদের সমর্থন করবেন। আশা করি, শেষ ম্যাচের পরে আমরা সবাই মিলে সাফল্য উদযাপন করতে পারব।
মানসিক শক্তি। ইতিবাচক মানসিকতা। প্রস্তুতি যে রকম হয়েছে, তার ফলে আমরা সবাই আত্মবিশ্বাসী। দলে এমন অনেক তরুণ ফুটবলার আছে, যাদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। ওদের দল হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরাই এখন আমার লক্ষ্য।
গ্রুপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা যে অনেক বেশি শারীরিক হবে, সেটা আমাদের জানাই আছে। ওদের বিরুদ্ধে আমরা আগেও খেলেছি। ওরা অনেক শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাতেও ওরা এগিয়ে। কম্বোডিয়া ও হংকংকে নিয়ে এখনও চর্চা করতে হবে। ওদের ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়রা ওদের অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। তবে আফগানিস্তানই সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ হতে চলেছে।”