জুলাই 8, 2024
Latest:
ক্রীড়া

শারীরিক দিকে না পারলে প্ল্যানিংয়ে আফগান বধ করতে চান স্টিমাচ

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ২-০-র দাপুটে জয় দিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব শুরুর পর এ বার ভারতের সামনে আফগানিস্তান, যারা প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের কাছে হেরে যাওয়ায় এই ম্যাচে জিততে মরিয়া হয়ে উঠবে। নিজেদের শারীরিক সক্ষমতা ও ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই ম্যাচে ভারতকে তারা কোণঠাসা করার চেষ্টা করবেই। এক বছর আগে এক গোলে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ড্র করেছিল ভারত। সেই হতাশাজনক ম্যাচের স্মৃতি নিয়েই হয়তো এই ম্যাচে নামবে ভারতীয় দল। শনিবার এই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে নামার আগের দিন কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ অবশ্য জানিয়ে দিলেন, তাঁর দলের সাজঘরে এখন আত্মবিশ্বাসের বাতাবরণ। তবে পাশাপাশি এও স্বীকার করে নিচ্ছেন, আফগানদের হারানো মোটেই সোজা হবে না।

এদিন তিনি জানালেন,”ড্রেসিংরুমে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অবশ্যই সাহায্য করেছে ওই তিন পয়েন্ট। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। সে সবের পর জয় দিয়ে এই টুর্নামেন্ট শুরুই করতে চেয়েছিলাম। সেটাই করতে পেরে এখন আমাদের সাজঘরের অসাধারণ। খুবই ইতিবাচক। আগেও এমনই ছিল। তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট না পেলে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে তিন পয়েন্টও অর্থহীন হয়ে যাবে। প্রতি ম্যাচেই শূন্য থেকে শুরু করি আমরা। তাই সোজা কথাটা হল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জিততেই হবে আমাদের।”

সুনীল ছাড়া দলের বাকিদের গোল করার ক্ষমতা নেই সেই উত্তরে ভারতীয় কোচ জানালেন,”কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটা আপনারা সহজ ছিল বলছেন। কারণ, সেই ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি। ভাল না খেললে এই ম্যাচটাকেই কঠিন মনে হত। অবশ্যই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা অন্য রকম হবে। হংকংয়ের বিরুদ্ধে ওদের ম্যাচটা দেখলে বুঝবেন, অনেক ভাল ভাল মুভমেন্ট, পাসিং, জায়গা বদল, বক্সের মধ্যে ক্রস হয়েছে। অফগানিস্তান উড়ে আসা বল দখলে যেমন ভাল, তেমনই আক্রমণেও দুরন্ত। এগুলোই আমাদের সামলাতে হবে। আমাদের মনসংযোগ, শেপ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দ্রুত আক্রমণে উঠতে হবে। বল পজেশন বেশি রাখতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। সুনীল যখন দলে রয়েছে তখন ও ছাড়া অন্য কেউ গোল করল কি না, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। ও যখন দলে থাকবে না, তখন অন্যেরা গোল করবে। কিন্তু প্রতি ম্যাচে একজনই দুটো করে গোল করে যাবে, সেটাও আশা করা ঠিক নয়।এখনও প্রথম একাদশ ঠিক করতে পারিনি।”

আফাগানিস্তানের ফুটবলাররা শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে এগিয়ে ভারতের থেকে। কী পরিকল্পনা থাকবে!স্টিমাচ জানান,”ঠিক জায়গায় থাকতে হবে সকলকে, ভাল গেমরিডিং প্রয়োজন। শেপ ঠিকমতো আঁটোসাঁটো রাখতে হবে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে। এই ম্যাচে সব ডুয়েলে হয়তো আমরা ওদের সঙ্গে পেরে উঠব না। সে জন্যই শারীরিক দিক থেকে ওরা এগিয়ে। কিন্তু আমাদের অনেক ধূর্ত হতে হবে। বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হবে।

আমি আমার হাতে থাকা সেরা এগারোজনকেই খেলাতে চাই। আপনারা হয়তো ভাবেন, কোচ কেন প্রতি ম্যাচেই দল বদলাচ্ছেন। কিন্তু এখনকার ফুটবলে এই ব্যাপারটার কোনও অস্তিত্ব নেই। আধুনিক ফুটবলে কোনও দলই টানা দুটি ম্যাচে সাধারণত একই দল খেলায় না। কারণ, প্রতি ম্যাচেই বিভিন্ন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়। তাই একই দল খেলানো সম্ভব না। বিশেষ করে আমাদের মতো দলের পক্ষে তা সম্ভব না। আমরা এশিয়াতেও সেরা দল নই। ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলোতে যখন আমরা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হই, তখন আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দল নামাতে পারি না। আইএসএলে সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে দল গড়া সম্ভব হয় না তখন। সে ভাবে ভাবলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা অনুযায়ী যে জায়গায় যে খেলোয়াড় ফিট হয়, যারা সবচেয়ে ভাল কন্ডিশনে রয়েছে, যারা দুর্দান্ত দৌড়তে পারছে, অনুশীলনে যারা ভাল গোল করতে পারছে, তাদেরই দলে রাখা হয়।”

কম্বোডিয়া ও আফগানিস্তানের পার্থক্য আছে। ভারতীয় কোচের কোথায়,”দুই দলের অনেক তফাৎ পার্থক্য। কম্বোডিয়া পরের দুটি ম্যাচেও নিজেদের বদলাবে বলে মনে হয় না। কারণ, নিজেদের বদলে ওরা যদি ঘন ঘন আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে, তা হলে ওদের আরও বেশি সমস্যা হতে পারে। সেটা ওরা জানেও। আর আফগানিস্তান জেতার জন্যই মাঠে নামবে। ওদের ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওরা যেখানে খেলে, সেখানকার ফুটবলের মান আইএসএলের চেয়ে ভাল। সে জন্যই ওদের ছেলেরা মাঠে নেমে কিছুটা ঔদ্ধত্য দেখায়। সেটা মেনে নিতেই হবে। এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। তবে আমাদের সে সব সামলানোর জন্য তৈরি থাকতে হবে। বল দখলের লড়াইয়ে জেতার জন্য তৈরি থাকতে হবে। ওদের পিছনে বেশি না দৌড়ে ওদের অনেক বেশি দৌড় করাতে হবে। আমাদের বল দখলে রেখে খেলা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ম্যাচের রাশ আমাদের হাতেই রাখতে হবে।”