অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
চোখে মুখে একরাশ স্বপ্ন। তার সঙ্গে আছে জেদ ও এগিয়ে যাওয়ার উদ্দিপনা। জীবনের প্রথমবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামবেন শ্রীরামপুরের সৃঞ্জয় দত্ত।
ইন্টার ন্যাশনাল শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন(আই এস এস এফ) এর আসর বসছে ইজিপ্টে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ৮ মার্চ চলবে বিশ্বকাপ শ্যুটিং প্রতিযোগিতা। ৬০ দেশের ৫০৪ জন শুটার বিভিন্ন ইভেন্টে নামবে তাদের সেরা পারফরম্যান্স দিতে।সৃঞ্জয়ের ইভেন্ট ১০ মিটার এয়ার রাইফেল। ২০১৯ ও ২০২১ সালে জাতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সেখানে তিনজনকে নির্বাচিত করা হয়। তার মধ্যে সৃঞ্জয় নিজের জায়গা করে নেন। সেই উপলক্ষে এদিন কলকাতার ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে সৃঞ্জয়কে সংবর্ধনা দেওয়া হল, লন্ডন অলিম্পিকে চতুর্থ হওয়া প্রাক্তন শুটার জয়দীপ কর্মকারের উদ্যোগে। এছাড়া হাজির ছিলেন দুই শুটার সৌরভ কোঠারি ও চল্লিশটা বিশ্বকাপ খেলে রেকর্ড গড়া কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন রঞ্জি জয়ী বাংলা অধিনায়ক সম্বরণ বন্দোপাধ্যায়।
১০.৯ অল শট অ্যাচিভ করতে পারলে প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট আসবে। বর্তমানে তার স্কোর ৬.৩০। দিল্লীতে হবে খেলো ইন্ডিয়ার ক্যাম্প। আর সেখান থেকে ইজিপ্টের কায়রোর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে সৃঞ্জয়দের ২৫ জনের দল। তবে সৃঞ্জয় প্যারিসে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তার আইডল বেজিং অলিম্পিকে সোনা জয়ী অভিনব বিন্দ্রা। যিনি দশ মিটার এয়ার রাইফেলে সোনা জেতেন। সেই বিভাগেই নামছেন সৃঞ্জয়। তার কথায়,”অভিনব স্যার তো সবসময়ই আমার প্রেরণা। উনার মত দেশের হয়ে পদক জেতাই আমার টার্গেট। আশা করছি এখানে ভালো পারফরমেন্স করে প্যারিস অলিম্পিকে সুযোগ পাবো। দেশকে মেডেল এনে দেব।”
আরও পড়ুনঃ জরিমানা বেড়েছে দশগুন, সচেতনতা প্রচার পুলিশের
নিজে খেলোয়াড় না হয়েও ছেলেকে সমস্তরকম শুটিং সুবিধা দেওয়াই শুধু নয় ছেলের কোচ হিসেবে গাইডও করেন সৃঞ্জয়ের বাবা শঙ্কর দত্ত। নিজের বাবার উদ্দেশ্য সৃঞ্জয় জানান, “লকডাউন যখন ছিল, বাবা বাড়িতেই আমার কোচিংয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করে দেন। কোনো ত্রুটিই রাখেনি আমার।” এদিকে প্রাক্তন অলিম্পিয়ান শুটার জয়দীপ কর্মকার সৃঞ্জয়কে পরামর্শ দেন,”একটা সেকেন্ড শুটিংয়ে তোমার সব কিছু বদলে দিতে পারে। তাই যখন বড় কিছু অর্জন করবে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে না। আবার খারাপ হলেও ভেঙে পড়বে না। ধৈর্য্যটা সবসময় রাখবে, এই খেলায় যেটা সবথেকে বেশি দরকার। মনে রাখবে শুটিং রেঞ্জে তুমি একা থাকবে। পাশে কেউ থাকবে না।” প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরন বন্দোপাধ্যায় আবার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উপদেশ দিচ্ছেন, “আমারা রঞ্জি খেললে পঞ্চাশ টাকা পেতাম। কিন্তু এখনকার ক্রিকেটাররা এক লাখ আশি হাজার টাকা পায়। সব খেলাতেই টাকা আসে তাই কখনও মাথা যেন না ঘোরে। ক্রিকেটের মত এটা এক বলের খেলা। স্বপ্নকে তারা করে বেরাও তুমি সফল হতে বাধ্য।”
সৃঞ্জয়ের বাবা শঙ্কর দত্ত বলেন,”আমার ছেলের আর আমার স্বপ্ন কিন্তু এখানেই থেমে নেই। ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকে খেলতে হবে আর পদকও আনতে হবে। যতটা পেরেছি করোনার সময় ছেলের অনুশীলনের জন্য সব রকম ব্যবস্থা করতে পেরেছি।আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথমবার যাচ্ছে। তাই চাপ থাকলেও খোলা মনে পারফর্ম করতে বলেছি।” জয়দীপ কর্মকারের পরে শুটার উঠে এলেও অলিম্পিক মঞ্চে বাংলার হাল খারাপ। জয়দীপ জানান, “আমি পদক পাইনি অলিম্পিকে, এটা আমার আক্ষেপ। কিন্তু প্রথম যখন কেউ শুটিংয়ে বাংলা থেকে অলিম্পিক পদক পাবে, আমার থেকে খুশি বোধহয় কেউ হবে না। তবে সরকারের পাশাপাশি বাবা, মাকে এগিয়ে আসতে হবে। একটা ছোটো শুটিংরেঞ্জের আর কতই বা দাম! এইটুকু যদি বাবা মায়েরা সন্তানদের জন্য খরচ করে শুটিংয়ের রেঞ্জ বাড়িতে ছোট জায়গায় তৈরী করতে পারে আমার মনে হয় কোনো অসুবিধাই হবে না। সৃঞ্জয়ের বাবা দৃষ্টান্ত। আশা করি বাকিরাও এগিয়ে আসবে আর বাংলার শুটিং এগিয়ে যাবে।”
আরও পড়ুনঃ ডার্বিতে ছেলেদের লড়াই দেখে খুশি মারিও