জুলাই 5, 2024
Latest:
স্থানীয়

জীবনের সুর হারিয়ে শিল্পী এখন ব্যবসায়ী

এনএফবি,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

করোনার দাপটে জীবন থেকে হারিয়েছে ‘সুর’, বাউলশিল্পী এখন ব্যবসায়ী ! এক সময় তাঁর বাউল গান শোনার জন্য পাগল ছিলেন মানুষ। করোনার দাপট বদলে দিয়েছে সব কিছুই। পেটের দায়ে একসময়ের বাউল শিল্পী এখন টোটোতে দশকর্মার পসরা সাজিয়ে নিয়ে গ্রামে গঞ্জে বিকি কিনি করে কোনরকমে পরিবার নিয়ে দিন গুজরান করতে বাধ্য হচ্ছেন। করোনার থাবা সমাজকে পালটে দিয়েছে আজ কতখানী তা এই দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রখ্যাত বাউল শিল্পি লক্ষন দাসকে দেখলেই বুঝে নিতে কারো অসুবিধে হওয়ার নয়।

হিলির বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মণ মালো। বয়সের ভাড়ে আজ বৃদ্ধ। বাউল সংগীতশিল্পী হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে তাঁর। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাউল সংগীতের অনুষ্ঠান করেছেন। বেতারেও একাধিক সংগীত সম্প্রচারিত হয়েছে তাঁর । অনেক গানের রেকর্ডের অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল একদা। বাউলের দীক্ষা নিয়ে লক্ষ্মণ মালো থেকে নাম হয়েছিল লক্ষ্মণ দাস। বাউলের সঙ্গে খ্যাতি বাড়তেই লক্ষ্মণ দাস বাউল বলে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। তাঁর গান সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিল। আর তিনিও নিজে গান ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারতেন না। সব সময় থাকতেন গান নিয়েই। গানই ছিল তাঁর কাছে সব কিছুই। তবে করোনার জেরে বদলে যায় সব।

একদা পুজো আসার আগেই বেজে ওঠে বাজনা। গলা ছেড়ে শুরু হয় রেওয়াজ। আর সেই সঙ্গে একের পর এক বায়না শুরু হয় শিল্পীদের। তাদের অনুষ্ঠান ঘিরে উষ্ণতা বাড়ে গ্রাম বাংলায়। বাউল শিল্পী থেকে লোক গানের দল, আলকাপ থেকে যাত্রাপালা। কিন্তু হায় করোনা কালে এ সব এখন অতীত। আগে তাও সরকারি কিছু অনুষ্ঠানে ডাক পড়ত, কিন্তু গতবছর পর্যন্ত সেসবও বন্ধ সরকারি নির্দেশে। তাই ছয় জনের সংসারের পেট চালাতে সেই সময়ই সংকটে পড়েন বাউল শিল্পী । সংসার সামলাতে বাউল ছেড়ে উপার্জনের অন্য পথ বেছে নিতে হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই উপার্জনের প্রচেষ্টা শুরু করেন। অগত্যা টোটোতে করে কাঠের মালা, নামাবলী সহ দশকর্মার সামগ্রী বিক্রি করতে শুরু করেন। আর এভাবেই এখন বাউল ছেড়ে ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন একদা বাউল শিল্পী লক্ষ্মণ দাস। তবুও আশা ছাড়েন নি, রাতে বাড়ি ফিরে হাতে তুলে নেন একতারা, গুণ গুণ করে গেয়ে ওঠে তার অন্তর দিয়ে ভালবাসার বাউল গান। এই আশায় হয়তো একদিন কেটে যাবে করোনার কালো মেঘ আবার পুজোর দিন গুলোতে গ্রামে গঞ্জে বসবে মাটির বাউল গানের আসর। আর সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে গাইবেন গান।