জামশেদপুরকে ভাঙাই চ্যালেঞ্জ হাবাসের

Habas

অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ

মুম্বাই সিটি এফসি-র কাছে ১-৫ হারের পরে এটিকে মোহনবাগান শিবিরের আকাশে যে হতাশার কালো মেঘ জমেছে, তা সরাতে গেলে সোমবার বাম্বোলিমে তাদের জিততেই হবে। না হলে সেরা চার থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে হতে পারে গতবারের রানার্স-আপ দলকে। প্রথম দুই ম্যাচে রীতিমতো দাপটের সঙ্গে খেলার পরে মুম্বাইয়ের কাছে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারটা যে মোটেই সম্মানের নয়, তা সেদিন ম্যাচের পরে কোচ, খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়াতেই বোঝা গিয়েছে। যদিও ফিরতি লিগে মুম্বাইকে না হারানো পর্যন্ত শান্তি পাবেন না কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ও তাঁর দলের ছেলেরা। তবে সোমবার ইস্পাতনগরীর দলকে হারাতে পারলে অন্তত তাদের কাটা ঘায়ে কিছুটা হলেও মলমের প্রলেপ পড়বে।

সোমবার তাদের প্রতিপক্ষ জামশেদপুর এফসি এ পর্যন্ত অপরাজিত। তিন ম্যাচের একটি জিতে ও দু’টিতে ড্র করে তারা এখন লিগ তালিকার পাঁচ নম্বরে। এখন পর্যন্ত সেরা চারে থাকা কোনও দলের বিরুদ্ধে অবশ্য খেলেনি তারা। এই প্রথম শীর্ষস্থানীয় কোনও দলের বিরুদ্ধে খেলবে এ বারের লিগে। তাই তাদের সে ভাবে পরীক্ষিত বলা যায় না। কিন্তু গতবারের ছ’নম্বর দল যে অঘটন ঘটাতে পারে, তার প্রমাণ তারা আগেও দিয়েছে। প্রসঙ্গত, গতবারের মোলাকাতে প্রথমবার ২-১-এ জেতে জামশেদপুর ও পরেরবার ১-০-য় জিতে তার বদলা নিয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগান। দুই ম্যাচেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল।

সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স

এটিকে মোহনবাগান: কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় দিয়ে এ বারের মরশুম শুরু করেছে এটিকে মোহনবাগান। কেরালার ব্লাস্টার্সকে ৪-২-এ হারায় তারা। গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই সিটি এফসি থেকে নিয়ে আসা ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস দু’টি অনবদ্য গোল করেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেন রয় কৃষ্ণা এবং অনবদ্য গোল পান লিস্টন কোলাসোও। বুমৌস সে দিন নিজে দুটি গোল করা ছাড়াও একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন। কলকাতা ডার্বিতে এটিকে মোহনবাগানের আধিপত্য বিন্দুমাত্র কমেনি। ২৩ মিনিটের মধ্যেই তিন গোলে এগিয়ে যাওয়া এটিকে মোহনবাগানকে বাকি সময়টা কোনও রকমে ঠেকিয়ে রাখে এসসি ইস্টবেঙ্গল। নিজেদের ভুলেও ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করে রয় কৃষ্ণারা। না হলে, ম্যাচটা আরও বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তারা। ১৪ মিনিটের মধ্যে রয় কৃষ্ণা ও মনবীর সিং দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে ২৩ মিনিটের মাথায় ফের চিরপ্রতিদ্বন্দীরা ধাক্কা খায় লিস্টন কোলাসোর সুযোগসন্ধানী গোলে। কিন্তু মুম্বাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে বড় ধাক্কা খায় সবুজ-মেরুন শিবির। গত বুধবার প্রথমার্ধে বিক্রম প্রতাপ সিংয়ের জোড়া গোল ও ইগর অ্যাঙ্গুলোর গোলে এগিয়ে যায় মুম্বাই । দ্বিতীয়ার্ধে মুর্তাদা ফল ও বিপিন সিং ব্যবধান বাড়িয়ে নেন। ম্যাচ শেষের আধ ঘণ্টা আগে এটিকে মোহনবাগানকে একটি গোল এনে দেন পরিবর্ত হিসেবে নামা ডেভিড উইলিয়ামস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যেতে হয় এটিকে মোহনবাগানের ডিফেন্ডার দীপক টাঙরিকে। তার জেরে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে গতবারের রানার্স-আপরা।

জামশেদপুর এফসি:


আইএসএলের এ বারের মরশুম এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র দিয়ে শুরু করে জামশেদপুর। ১৭ মিনিটে দেওয়া গোলে প্রথমার্ধের শেষ মিনিট পর্যন্ত এসসি ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে থাকলেও সেই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি কলকাতার ক্লাব। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে জামশেদপুরের অধিনায়ক পিটার হার্টলে তাঁর দলকে সমতা এনে দেন। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই জয়সূচক গোলের জন্য মরিয়া চেষ্টা করলেও গোলের দরজা খুলতে পারেনি কেউই। দ্বিতীয় ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৩-১-এ জেতে আওয়েন কোইলের দল। জোড়া গোল করেন লিথুয়ানিয়ান স্ট্রাইকার নেরিয়ুস ভাল্সকিস। অপর গোলটি ছিল জর্ডান মারের। হায়দ্রাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করে ১-১ ড্র করে তারা। ৪১ মিনিটে জামশেদপুরের স্কটিশ ফরোয়ার্ড গ্রেগ স্টিউয়ার্ট দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে ৫৬ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করেন হায়দ্রাবাদের দলে এ বছরই যোগ দেওয়া ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। সমানে সমানে লড়াইয়ে দুই দলেরই এর পরে একটি করে শর্ট ছিল গোলে। কিন্তু কোনওটিতেই গোল আসেনি।

দলের খবর

এটিকে মোহনবাগান:
হাবাসের চিন্তা ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে তাঁর দলের রক্ষণ বিভাগ। গত ম্যাচে মুম্বাই সিটি এফসি-র কাছে পাঁচ গোল খেয়েছেন তাঁর ডিফেন্ডাররা। এই ম্যাচে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরিকে দেখা যেতে পারে। তিনি সুস্থ বলে জানিয়েছেন কোচ নিজেই। তবে ম্যাচফিট কী না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এমনিতেই গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না দীপক টাঙরি। হাবাসের হাতে রয়েছেন ভারতীয় দলের ডিফেন্ডার আশুতোষ মেহতা, প্রীতম কোটাল, কার্ল ম্যাকহিউ, শুভাশিস বোসরা। কিন্তু গত ম্যাচে মুম্বাইয়ের অ্যাটাকাররা এঁদের হিমশিম খাইয়েছেন। বিশেষ করে দুই উইং দিয়ে আক্রমণ রোখার কাজে এঁরা পুরোপুরি ব্যর্থ হন। তাই এই ম্যাচে রক্ষণ বিভাগে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। সুমিত রাঠি, প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজদের হয়তো প্রথম এগারোয় দেখা যেতে পারে।

ফিজিয়ান ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণা ভাল ফর্মে থাকলেও এ বার প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করছেন। গত দুই ম্যাচে হাবাসের দলের ফরোয়ার্ডরা প্রায় ২৫টি গোলের সুযোগ পেয়েছিল, যার মধ্যে আটটি গোল দিতে পেরেছে তারা। অস্ট্রেলিয়ান তারকা ডেভিড উইলিয়ামস তিন ম্যাচে ৭৯ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যতটুকু খেলেছেন, তাতে তাঁকে চেনা মেজাজেই পাওয়া গিয়েছে। মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে একমাত্র গোলটিও তিনিই করেন। আইরিশ মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউকে এ পর্যন্ত রক্ষণের দায়িত্ব দিয়েই রাখা হয়েছে। তিরি প্রথম দলে ফিরলে তাঁকে বসতে হতে পারে। আবার তাঁকেই প্রথম দলে রেখে তিরিকে পরে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামানোও হতে পারে। পরখ করে দেখার জন্য, তিরি কতটা ম্যাচফিট।

ফিনল্যান্ডের ইউরো দলের সদস্য জনি কাউকো এবং গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই সিটি এফসি থেকে নিয়ে আসা ফরাসি তারকা হুগো বুমৌসকেও ভাল ফর্মেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু গত ম্যাচে বিপক্ষের কড়া মার্কিংয়ে দু’জনই আটক হয়ে যান। ফলে একেবারেই কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেননি দু’জনের কেউই। এই ম্যাচে তাঁদের কী ভাবে ব্যবহার করবেন হাবাস, সেটাই দেখার। হায়দ্রাবাদ এফসি থেকে নিয়ে আসা প্রতিশ্রুতিবান স্ট্রাইকার লিস্টন কোলাসোর শুরুটাও দুর্দান্ত হয়েছিল। দু’টি ম্যাচে দু’টি দর্শনীয় গোল করেন তিনি। কিন্তু গত ম্যাচে পুরো আক্রমণ বিভাগের সঙ্গে তিনিও ফ্লপ করেন। এই ম্যাচে তাঁকে শুরু থেকে দেখা যাবে কি না, তা অনিশ্চিত।