জুলাই 3, 2024
Latest:
উৎসব আয়োজন

করোনা আবহ কাটিয়ে মহিষাদলের কেশবপুরের মাইতি পরিবারের দুর্গাপুজোকে ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে

এনএফবি,পূর্ব মেদিনীপুরঃ

আকাশ জুড়ে ডানা মেলছে মেঘের দল। শহর ছেড়ে একটু গ্রামের দিকে পা বাড়ালেই দেখা মিলছে কাশের বন।তারই মাঝে বাজারেও ব্যস্ততার ছাপ স্পষ্ট। সব মিলিয়ে পুজোর গন্ধে ম ম করছে বাংলার আকাশ-বাতাস। করোনা কাঁটা বিগত কয়েক বছর ধরে সুর কেটে ছিল পুজোর আমেজের। বর্তমানে করোনা বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় নতুন করে পুজোর সাজে সেজে উঠছে বাংলা। তবে এখনও বাংলার নানা প্রান্তে এমন কিছু পুজোর খোঁজ মেলে যার আচার, যার ইতিহাস জানলে বিস্মিত হতে হয় সকলকে। তেমনই একটি পুজো হল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কেশবপুরের মাইতি পরিবারের দুর্গা পুজো।

জানা গিয়েছে, প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে কয়েক হাজার মানুষ। এখানে সন্ধি পুজোতেই হয় দেবী চামুণ্ডার আরাধনা। মানুষের বিশ্বাস এই দেবীর খড়্গ ধোয়া জল খেলে পূরণ হয় মনের বাসনা। খড়্গ ধোয়া জল খেলেই নাকি সেরে যায় দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি । আর সেই কারণেই দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন সেই জলের আশায়। ছাগ বলি ঐতিহ্যতেও আজও ভাটা পড়েনি মাইতি বাড়িতে। ইতিহাস বলছে এখানে আগে হত ঘট পুজো। শোনা যায়, কিছু বছর ঘট পুজো হওয়ার পর একটি স্বপ্নাদেশ পান কুলপুরোহিত। রূপনারায়ণ নদের সঙ্গে সংযুক্ত একটি খাল গিয়েছে এখানের মন্দিরের পাশ দিয়ে। ওই নদীর পাশে একটি গাছে প্রতিমার কাঠামো আটকে রয়েছে, সেই কাঠামো তুলেই প্রতিষ্ঠার জন্য স্বপ্নাদেশ পান কুল পুরোহিত। পরদিন সকাল সকাল কুল পুরোহিত মাইতি পরিবারের বাকি সদস্যদের তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা জানান। তারপর থেকেই ঘট পুজোর পরিবর্তে প্রতিমা পুজো শুরু হয়। সেই থেকে একই ভাবে এক কাঠামোর পুজো হয়ে আসছে। শুধু পুজোর দিন নয়, বছরের অন্যান্য দিনও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন শুধুমাত্র খড়্গ স্পর্শ করা জল পান করার জন্য। বর্তমান সময়ে প্রায় ১২ টি পরিবার খরচ সামলান এই পুজোর। অষ্টমীর দিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের ভিড় হয় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য। আগে ছিল বলি প্রথা। শত শত ছাগ বলি পড়ত। এখন সেই বলি প্রথায় ভাটা পড়েছে। নিয়ম মেনে এখনও হয় বলি। আগের মতো জাঁক জমক আর নেই। বলি প্রদত্ত ছাগের সংখ্যাও কমে গিয়েছে। পুজো শুরু হয় মহাষষ্ঠীর দিন। তবে রীতি আর পাঁচটা পুজোর থেকে খানিক আলাদা। মহাষষ্ঠীর রাতেই ঘট উত্তোলন পর্ব চলে। মহা সপ্তমীতে রূপনারায়ণের পাশে থাকা খালে চলে নবপত্রিকা স্নান। ওই দিনই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। সপ্তমী পুজোর সময় হয় ছাগ বলি। মহা অষ্টমীতে হয় মহা গৌরীর পুজো। এরপর অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে বলি পড়ে দুটি কালো ছাগের। তার পর শুরু হয় দেবী চামুন্ডার আরাধনা। এই দিকে এই পুজো উপলক্ষে মেলাও বসে এলাকায়।