জুলাই 5, 2024
Latest:
স্থানীয়

প্রয়াত শিক্ষিকার জমানো টাকা স্কুল তহবিলে প্রদান ভাইয়ের

এনএফবি,ঝাড়গ্রামঃ

স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষকতা করতেন তিনি। অবসর নেওয়ার কয়েক বছর পর প্রয়াত হন ওই শিক্ষিকা। প্রয়াত শিক্ষিকার অ্যাকাউন্টে পড়ে ছিল দু’লক্ষ টাকা। সেই টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে স্কুলের মান উন্নয়নের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিলেন প্রয়াত ওই শিক্ষিকার ভাই ও তার স্ত্রী। এমনই এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল ঝাড়গ্রাম শহরের ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাই স্কুল।

১৯৬০ সালে বাণীতীর্থ সোসাইটির উদ্যোগে প্রথম স্কুল শুরু হয়। তার কিছু দিন পরেই সরকারি মানে উন্নীত হয় এই বিদ্যালয়। সেই সময় থেকে ওই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন জ্যোৎস্না ব্যানার্জি। তিনি ইতিহাসের শিক্ষিকা ছিলেন। স্কুল শুরু থেকেই তিলে তিলে স্কুলের বড় হয়ে ওঠা সবকিছুরই সাক্ষী তিনি। তাই স্কুলের প্রতি ক্ষেত্রেই তার এক অন্য ধরণের সহানুভূতি ছিল। ২০০৩ সালে অবসর নেন এই শিক্ষিকা । শিক্ষা ও শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি বিয়ে করেননি। ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানকে নিয়েই ছিল তার পরিবার। কিন্তু কালের নিয়মে প্রায় ৭৫ বছর বয়সে ২০২০ সালে তিনি প্রয়াত হন। তার ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের নমিনি রেখেছিলেন তার ভাই দেবাশীষ ব্যানার্জিকে। দিদি জ্যোৎস্না ব্যানার্জীর মৃত্যুর পর তিনি জানতে পারেন তার দিদির অ্যাকাউন্টে এখনও দু লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে তিনি দিদির অ্যাকাউন্টে টাকা তুলে স্ত্রীর ও পরিবারের সঙ্গে সহমত হয়ে স্কুল উন্নয়নের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে টাকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো তিনি এদিন স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। দেবাশীষবাবু সঙ্গে এসেছিলেন তার স্ত্রী গৌরী ব্যানার্জি। দেবাশীষবাবু ও গৌরী দেবী বলেন, দিদিকে সব সময় দেখেছি তার স্কুলের প্রতি এক অদম্য ভালোবাসা। সারাটা জীবন তিনি শিক্ষাও শিক্ষকতা নিয়েই থাকতেন। স্কুলের কথা ভাবতেন। তাই আমরা দুজনে ও আমাদের ছেলেমেয়েরা সকলে মিলে আলোচনা করি দিদির টাকা স্কুলের উন্নয়নের কাজেই খরচ হোক। তাই এদিন আমরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তীর্থদ্রুতি ভাওয়াল এর হাতে তা তুলে দিলাম। শহরের বাসিন্দা দেবাশীষবাবু অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ও ছেলে কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। দেবাশীষবাবু ও তার স্ত্রী গৌরী দেবী স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার সময় প্রধান শিক্ষক সহ উপস্থিত ছিলেন স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সুদেব কুমার সিংহ ও স্কুলের বর্ষীয়াণ শিক্ষক সুখেন্দু করণ। এদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তীর্থদ্রুতি ভাওয়াল বলেন, জ্যোৎস্না ব্যানার্জি স্মৃতি পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে কৃতি ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা ভাবনা চিন্তা করছি। প্রয়াত শিক্ষিকা জ্যোৎস্না ব্যানার্জির ভাই দেবাশীষ ব্যানার্জি ও তার স্ত্রী গৌরী ব্যানার্জিকে এই উদ্যোগ নেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এই অর্থের মাধ্যমে স্কুলের মান উন্নয়নের পাশাপাশি দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদেরও পাশে দাঁড়াতে পারবো আমরা।