অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
মুম্বই সিটি এফসি-র মতো সেরা আক্রমণাত্মক দলের বিরুদ্ধে নামার আগে যা বলেছিলেন, জামশেদপুরের বিরুদ্ধে নামার আগেও অনেকটা সে রকমই বললেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডি সিং। তাঁর সোজা কথা, তাঁর দলের ফুটবলাররা মাঠে একসঙ্গে থাকলে এবং দলের কাঠামো বজায় রেখে ওঠা-নামা করলে গত ম্যাচের মতো অঘটন ফের ঘটাতে পারে তারা। কিন্তু তাঁর দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা, দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়রা বেশির ভাগই খেলার অবস্থায় নেই। বাধ্য হয়ে তাঁকে হয়তো মঙ্গলবার প্রথম এগারোয় কোনও বিদেশিকে না রেখেই দল নামাতে হবে।
গত দুই ম্যাচে আপনাদের রক্ষণ যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছে। এ বার প্রথম জয় পাওয়ার জন্য কি জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে আপনারা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে গত দু’টি ম্যাচে আমাদের ডিফেন্স যথেষ্ট গোছানো ফুটবল খেলেছে। বেঙ্গালুরু ও লিগের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক দল মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের ডিফেন্স ভাল খেলেছে। ক্রিকেটের মতো স্কোর আমি চাই না। এই ম্যাচেও আগে আমাদের রক্ষণ শক্তপোক্ত করতে হবে ও আক্রমণেও উঠতে হবে। ফুটবল যেমন একসঙ্গে আক্রমণে ওঠা, তেমনই একসঙ্গে ডিফেন্সও করা। কালকের প্রতিপক্ষ জামশেদপুরও যথেষ্ট ভাল দল। ওদের কয়েকজন ভাল খেলোয়াড় আছে, যেমন গ্রেগ স্টিউয়ার্ট, ডিফেন্ডার হার্টলে, ভারতীয় খেলোয়াড় লেনও যথেষ্ট ভাল। তবে আমাদের নিজেদের খেলায় মনোনিবেশ করতে হবে। কী ভাবে রক্ষণ ও আক্রমণ করব আমরা, সে দিকে।
যেহেতু ড্যানিয়েল চিমা দলে নেই ও জয়নার লরেন্সোর চোট, আপনারা কি আত্মবিশ্বাস নিয়ে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে পারবেন?
উত্তরঃ জামশেদপুর এ পর্যন্ত যা খেলেছে, তাতে ওদের শ্রদ্ধা করতেই হবে। চিমার না থাকাটা বড় অভাব। আমাদের অনেকেরই চোট রয়েছে। ফ্রানিও, টমি, জয়নার, ড্যারেন এখনও পুরো সেরে ওঠেনি, পেরোসেভিচ সাসপেন্ড—এতজন নেই যখন, তখন আমাদের দল হিসেবে খেলতে হবে।
চিমার জায়গায় সেম্বয় হাওকিপের সঙ্গে কি অন্য কোনও স্ট্রাইকারকে দলে নেবেন?
উত্তরঃ সেম্বয়কে নিয়ে আমি সত্যিই খুশি। সবাই দেখেছে কতটা চাপ ও নিয়েছে এবং বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে কী গোল ও ফ্রি কিকে করেছে। আশা করি, কালকের ম্যাচেও ও ওরকমই ভাল খেলবে। ম্যাচটা সহজ নয়। আমাদের বলওয়ান্ত সিংয়ের মতো যথেষ্ট ভাল খেলোয়াড় আছে। অতীতেও ও যথেষ্ট ভাল খেলেছে। ওর দলে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ওকে মাঠে আরও কিছুটা সময় দিতে চাই। কাল দল বাছাই করব। তবে এই দু’জন ভাল স্ট্রাইকার আমাদের দলে রয়েছে। ওদের দু’জন একসঙ্গে খেলার সুযোগ পেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে।
আপনি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলের চেহারা পাল্টে গিয়েছে, দল ভাল খেলছে। মানসিক ভাবে কী করে চাঙ্গা করলেন দলকে?
উত্তরঃ প্রথমেই আমাকে সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ দেব ছেলেদের। নতুন কোচ হিসেবে ওদের সাপোর্ট আমার অবশ্যই দরকার ছিল। যে রকম যা যা বলেছি ওরা তা পালন করেছে। দেখতেই পাচ্ছেন মাঠে ওরা নিজেদের কতটা দিচ্ছে। একশো শতাংশ বেশি দিচ্ছে। কতদিন এই খেলা চালিয়ে যেতে পারবে ওরা, সেটা বড় প্রশ্ন। তবে আমি নিশ্চিত, যেই মাঠে থাকুক, সে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। ম্যাচে আমরা হারি বা জিতি, আমি চাই প্রত্যেকের অবদান থাকুক। আমি চাই ওরা যেন হাল ছেড়ে না দেয়। কাজটা সোজা নয় ঠিকই, তবে ওদের এটা করতেই হবে। দলের অনেকেই যেখানে খেলার অবস্থায় নেই, এটা তাদের সামনে নিজেদের প্রমাণ করার একটা বড় সুযোগ। যারা এতদিন খেলার সুযোগ পায়নি, তাদের সামনে এটা প্রমাণ করার সুযোগ যে তারা সমান ভাল।
কাল আপনার প্রথম দলের এগারো জনই কি ভারতীয় হতে চলেছে?
উত্তরঃ আমাকে সেটাই করতে হবে। দলের অনেকেই চোট পেয়েছে। জয়নার, যে গত কয়েকটা ম্যাচে খুবই ভাল খেলেছে, তারও চোট। তাই আমার সামনে এ ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। তবে যারাই খেলুক, আমি আত্মবিশ্বাসী, সবাই নিজেদের সেরাটা দেবে। আমরা যদি নিজেদের কর্তব্য ঠিকমতো পালন করতে পারি, তা হলে জামশেদপুর ভাল দল হওয়া সত্ত্বেও সমস্যায় পড়তে পারে। ওদের কাজটা কঠিন করে তুলতে হবে এই খেলোয়াড়দেরই। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে ওদের।
শেষ দুটো ম্যাচ থেকে কী শিক্ষা পেলেন, যা জামশেদপুরের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারবেন?
উত্তরঃ আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, যদি দলের কাঠামো বজায় রেখে একসঙ্গে ওঠা-নামা করতে পারি, তা হলে সব কিছুই সম্ভব।
কালকের ম্যাচে আপনার পরিকল্পনা কী?
উত্তরঃ আমাদের শক্তির ওপর মনোনিবেশ করতে হবে। ওদের কী ভাবে আঘাত করা যায়, সেটাও আমাদের জানতে হবে। কী ভাবে রক্ষণে উঠতে হবে এবং তার পরে আক্রমণে উঠতে হবে, তার পরিকল্পনাও ঠিকমতো থাকতে হবে। তবে আমরা যদি নিজেদের পরিকল্পনা ধরে রাখতে পারি ও সেই অনুযায়ী খেলতে পারি, তা হলে কে বলতে পারে, কী হবে?
প্রথম দশ ম্যাচের চেয়ে বাড়তি কী দরকার এখন?
উত্তরঃ আমরা কখনই এই জায়গায় থাকতে চাই না। ছেলেরা এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করছে। হায়দ্রাবাদ ম্যাচে আমরা দেখেছি ছেলেরা কতটা ভাল খেলেছে। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে এক বিদেশি নিয়ে কী খেলেছে ওরা, সেটাও সবাই দেখেছে। এটা ঠিকই যে, ম্যাচটা আমরা জিততে পারিনি, গোলও খেয়েছি। মুম্বইয়ের মতো আক্রমণাত্মক দলের বিরুদ্ধেও আমার খারাপ খেলিনি। আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামি। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের এগোতে হবে। আমাদের হাতে কী ধরনের খেলোয়াড় আছে সেটা তো দেখতে হবে। আমাদের ধাপে ধাপে এগোতে হবে। হায়দ্রাবাদ ম্যাচ থেকে যে উন্নতি আমরা করেছি, সেটা যদি বজায় রাখতে পারি, তা হলে আমরা হয়তো এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। এটা সোজা নয় ঠিকই তবে আমাদের এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।