এনএফবি, কোচবিহারঃ
একের পর এক চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। দীর্ঘদিন আগে সিঁদেল চোরের দৌরাত্ম্যে পুলিশ প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হতো কিন্তু পরবর্তীকালে সিঁধেল চোরের দৌরাত্ম্য কমে। কিন্তু গ্রামে পুলিস পিকেট থাকা সত্ত্বেও আবারও সিঁধ কাটার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। সম্প্রতি, মাথাভাঙ্গা ১ নং ব্লকের পচাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ফকিরের কুঠি গ্রামে সিঁধেল চোরের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল হতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে।
এই গ্রামটি একদম মাথাভাঙ্গা শহর লাগোয়া। প্রায় প্রতিদিন ঐ এলাকায় কোনো না কোনো বাড়ির সিঁধ কাটছে চোরেরা। অথচ পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। যদিও পুলিশ কোনো চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। আর এই ঘটনা অস্বস্তিতে রেখেছে পুলিশ প্রশাসনকে। বর্তমানে ঐ এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পুলিশ পিকেট তৈরি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত রায়, বিক্রম দত্ত প্রমুখরা জানান, “বিষয়টি কিছুই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এলাকায় পুলিশের টহলদারি থাকলেও ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক শিবু বর্মনের ঘরে সিঁধ কেটে ঢোকার চেষ্টা করে চোরেরা। যদিও ওই এলাকার বাসিন্দারাটের পেয়ে যাওয়ায় অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় চোর।” গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এলাকায় চারটি ঘরে সিঁধ কাটা হয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে ঘরে সিঁধ কাটা হয়েছে সেই ঘরে কোনো পুরুষ সদস্য ছিলেন না। আর এই ঘটনায় চোরেদের অভিসন্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সিঁধ কেটে দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকলেও কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। প্রথম দিন ঐ এলাকার বাসিন্দা প্রসূতি গৃহবধূর ঘরে সিঁধ কেটে ঢুকে যায় চোর। তৎক্ষণাৎ প্রসূতি পূর্ণিমা বর্মন টের পেয়ে গেলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে তার গালে কামড় দিয়ে মাথায় ইটের আঘাত করে পালিয়ে যায় চোর। তারপর পূর্ণিমাকে নিয়ে যাওয়া হয় মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালে সেখানে তার গালে তিনটি সেলাই পরে, পরবর্তী সময়ে তাকে সিটি স্ক্যান করার জন্য কোচবিহারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে ঐ প্রসূতি মাথাভাঙ্গা মহাকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ণিমা বর্মনের ২৫ দিনের একটি নবজাতক শিশু রয়েছে। এই ঘটনার খবর পেয়ে প্রসূতি পূর্ণিমা বর্মনের বাড়ি সহ অন্যান্য বাড়িতে এবং এলাকায় পরিদর্শনে যান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা মাথাভাঙ্গা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির নারী-শিশু সমাজকল্যাণ ও ত্রাণ কর্মদক্ষ কল্যাণী রায়।
কল্যাণী দেবী বলেন, “গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ফকিরের কুঠি গ্রামে অনির্দিষ্টকালের জন্য ২৪ ঘন্টা পুলিশের টহলদারি চলছে এবং পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পুলিশের টহলদারি থাকায় অন্তত আতঙ্ক অনেকটা কমেছে তবে ফের মঙ্গলবার চুরি হওয়াতে একটুখানি আতঙ্ক আবারও বেড়েছে।”
এবিষয়ে মাথাভাঙ্গা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুরজিৎ মন্ডল জানান, “বিষয়টি কিছুতেই বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। কে বা কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে অন্য কোনো লিংক আছে কিনা তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। গতকাল রাতেও সেখানে পুলিশের স্পেশাল টিম পাঠানো হয়েছে।” তবে অতীতে মাথাভাঙ্গা মহাকুমার বিভিন্ন স্থানে অনেক অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কিন্তু পুলিশ পাকড়াও করতে সমর্থ হয়েছে। এ বিষয়টিও পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্ত করে বের করবে বলে এলাকাবাসীরা পুলিশের ওপর আস্থা রেখেছে।
