জুলাই 8, 2024
Latest:
জেলা

ভেঙে পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত বিদ্যাসাগরের হেরিটেজ বিল্ডিং

এনএফবি,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

হুড়মুড়িয়ে ভেঙে গেল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত বিদ্যাসাগরের দেড়শ বছরের প্রাচীন হেরিটেজ বিল্ডিং। ঠিকাদারী সংস্থার অপরিকল্পিতভাবে কাজের জন্যই সংস্কারের কাজ চলাকালীন এমন ঘটনা ঘটেছ বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। বিদ্যাসাগরের তৈরী প্রাচীন মাটির বাড়িটি একটি বিড়াট অংশ ভেঙে পড়ায় মন ভার বীরসিংহবাসীর। দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। বিদ্যাসাগরের তৈরী ১৫০ বছর প্রাচীন হেরিটেজ বিল্ডিংটি কেন ভেঙে পড়লো হটাৎ? ঘাটাল তথা রাজ্যজুড়ে এই চর্চা এখন তুঙ্গে। মঙ্গলবার ভেঙে পড়া বাড়িটি পরিদর্শন করলেন প্রশাসনিক আধিকারিক তথা বীরসিংহ ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কর্মকর্তারা। সংস্কার চলাকালীন কিভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া হঠাৎ ভেঙে গেল তার পূর্ণ তদন্তে নেমেছেন বীরসিংহ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে সামনে এসেছে ঠিকাদারের অপরিকল্পিতভাবে চালিয়ে যাওয়া সংস্কারের কাজ। বিদ্যাসাগরের এই হেরিটেজ বিল্ডিং সংস্কার সহ অন্য আরেকটি নির্মাণ কাজের জন্য মোট বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা, কাজের দায়িত্ব নেয় পিডব্লুডি, প্রশাসন সুত্রে খবর পিডব্লুডি কাজ করার বরাত দেয় অপর এক ঠিকা কর্মীকে।

হেরিটেজ বিল্ডিংটি ভেঙে পড়ায় ঠিকাদার সংস্থার উপর বেজাই চটেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঠিকাদার সংস্থা এই কাজের কিছুই জানেনা। অপরিকল্পিতভাবে এই কাজ করছিল ঠিকাদারের কর্মীরা। এই অপরিকল্পিতভাবে কাজ করার জন্যই এভাবে হেরিটেজ বিল্ডিংটি হঠাৎ ধসে পড়লো। প্রসঙ্গত বীরসিংহকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে বিদ্যাসাগরের সমস্ত স্মৃতিকে সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বীরসিংহকে আস্তে আস্তে সাজিয়ে তোলা হচ্ছিল। তার মাঝেই ভেঙে পড়লো বিদ্যাসাগরের এই প্রাচীন বাড়িটি। ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরসিংহে এসে এটিকে হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। তারপরেই সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছিল সংস্কারের কাজ। সেই বাড়িটির এক অংশ ভেঙে পড়ল সোমবার। সেই ভেঙে পড়া বাড়িটি পরিদর্শনে ছিলেন ঘাটালের মহকুমা শাসক তথা বীরসিংহ ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারী সুমন বিশ্বাস, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুলক প্রামানিক, ঘাটালের বিডিও সঞ্জীব দাস, ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত রায় প্রমুখ। যদিও এই বিষয়ে ঘাটাল মহকুমাশাসক কিছুই বলেননি।

নিজস্ব চিত্র

এই দিন দুপুর নাগাদ পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারেরা পরিদর্শনে আসেন বিদ্যাসাগরের বাড়ি, আর তখনই গ্রামের মানুষেরা পূর্ত দপ্তর ইউনিয়ন দের কাছেই অভিযোগ করেন যে নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে কাজ হচ্ছে,পরিকল্পনায় গলদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার। এই বিষয়ে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন মিত্র কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ” আমি আপনাদের বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য এখানে আসেনি।” এক সংবাদ মাধ্যমের লোগো হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দেন তিনি। তারপরে তিনি একাধিক অজুহাত দেখান। তিনি বলেন, মালপত্রের কোন ত্রুটি ছিল না, ইঁদুরে মাটি গর্ত করে দেওয়ার ফলে এই ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানান ।যদিও গ্রামের মানুষ ইঞ্জিনিয়ারে এই কথা মানতে নারাজ, তাদের দাবি পরিকল্পনায় গলদ, নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে এই কাজ করার জন্যই এত বড় ঘটনাটি ঘটেছে। এই বিষয়ে ভগবতী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাঠক বলেন” এই কাজের সম্বন্ধে, আমরা কিছুই জানিনা। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা একেবারেই দুঃখজনক।” তিনি বলেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় কে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই এই বাড়িটি যেইভাবে সংরক্ষিত করাচ্ছে তারা যেন ঠিক মতো কাজ করে। যেন বিদ্যাসাগরকে এখানে অপমানিত না হতে হয়।