এনএফবি, নিউজ ডেস্কঃ
আড়ি পাতার পর এবার অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। পেগাসাসের পর এবারের অভিযোগের তীর টেক ফগ( tek fog) নামে এক অ্যাপ। ৬ জানুয়ারি এক ইংরেজি ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, বিজেপির আইটি সেল এই অ্যাপ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কারচুপি করে জনমতকে প্রভাবিত করে। খবর প্রকাশের পরেই মুখ খুলেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছেন। সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।
ইংরেজি নিউজ পোর্টাল দ্য় ওয়্যার প্রকাশিত সেই এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, টেক ফগ অ্যাপের মাধ্যমেই অসদ উপায়ে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি, ভার্চুয়াল নজরদারি থেকে শুরু করে নিজেদের অনুকূলে জনমতও তৈরি করে।
আজকের রাজনীতির অনেকটা বড় অংশজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় আসার প্রাক মুহূর্ত থেকে বিজেপির হাত ধরে ভারতীয় রাজনীতির শব্দ কোষে জায়গা করে নেয় একটি শব্দ ‘আই টি সেল’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণা থেকে মিথ্যাচার ছড়ানো, এইসব কাজ বিজেপি তার আই টি সেলের মাধ্যমে করে বলে অভিযোগ। আর সেই কাজে ব্যবহার করা হয় এই টেক ফগ অ্যাপ্লিকেশন। মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কথাও উঠেছে। সাধারণ মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে অলিখিত জরুরি অবস্থা চালাচ্ছে বিজেপি বলেও দাবি ওই প্রতিবেদনে।
আরতি শর্মা নামের জনৈকা এক মহিলার টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এই অ্যাপের বিষয়ে পোস্ট দেখা গেছে। ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল একটি টুইটে নিজেকে বিজেপির আই টি সেলের কর্মী বলে দাবি করে তিনি লেখেন,” আমি ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির আই টি সেলের হয়ে কাজ করছি। আমি কাজ ছাড়ছি, কারণ আমাদের বোকা বানানো হয়েছে। আমাদের প্রতি টুইটে ২ টাকা করে দেওয়া হত। কিন্তু ২০১৮ সালে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ২০১৯-এ বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে আমাদের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বিজেপি তা অস্বীকার করছে। মিথ্যাবাদী বিজেপি চাকরি কোথায়?”
পরে একই বছরের ২৮ এপ্রিল ওই টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে ফের অন্য আর একটি টুইটে লেখা হয়, “ টেক্সট অটো আপলোড করার জন্য বা দলীয় হ্যাশট্যাগ ট্রেণ্ড করানোর জন্য বিজেপির আই টি সেল কর্মীদের দ্য টেক ফগ অ্যাপ ব্যবহার করতে বলছি। এটি গোপনীয় অ্যাপ। এখানে ক্যাপচা কোড লাগে না।“
Dear BJP i was working for your IT cell since 2014, now i Quit. And understood, you made us Scapegoats only! Perhaps, You are giving us ₹2/tweet . But you promised us in 2k18 if BJP comes to power again you shall get government job. Now you are denying? Liers! Where is Job?
— Aarthi Sharma (@AarthiSharma8) April 24, 2020
বিজেপির প্রাক্তন আই টি সেল ও সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান দেবাং দেব সরাসরি টেক ফগ কাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ। দেবাং বর্তমানে মহারাষ্ট্রে বিজেপির ইলেকশান ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেবাং দেব
অনুসন্ধান মূলক ওই প্রতিবেদনের তথ্য থেকে এক নজরে দেখা নেওয়া যাক টেক ফগ অ্যাপের মাধ্যমে বিজেপি কী কী করে-
- ফেসবুক টুইটারে ট্রেণ্ড করার জন্য বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অটো শেয়ার, অটো রিটুইট করা। কৃত্রিমভাবে রিটুইটের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া। জানতেও পারবেন না আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট রিটুইট হয়ে যাবে ।
- বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টগুলিকে ব্যবহার করা, ফাঁদে ফেলে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা। জালে মাছ ধরার মতোই টোপ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করা হয়। তারপর ওই হ্যাক করা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে থাকা সমস্ত নম্বর পেয়ে যায় টেক ফগ ব্যবহারকারী।
- ব্যক্তিগত পোস্টে নজরদারি চালানো হয়। নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে , তাদের ধর্ম ভাষা লিঙ্গ বয়স রাজনৈতিক আদর্শ ইত্যাদির ভিত্তিতে ভাগ করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে চলে নজরদারি।
- শেয়ারচ্যাট ছাড়াও গুগল ডক, জোহো, গুগুল সিট, টাস্কার, জ্যাপিয়ার,গ্রাফানা, গুগুল অ্যানালিটিক্স থেকে টেক ফগ নাগরিকের তথ্য চুরি করে।
- এই অ্যাপের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হল, এর মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য নিমেষের মধ্যে ডিলিট করা যায়। বিজেপির ওই আই টি সেল কর্মী আরতি শর্মার ইউজার আইডি এক মুহূর্তে বদলে গিয়েছিল।
There are many #BJPitCell softwares, i was suggested to use ‘The tek fog’, this is secret app only for #ItCellWorkers. It bypasses reCaptcha codes, is used for auto-upload texts and hashtag Trends. However, pro-players of #ItCellWorkers are using Tasker app too.
— Aarthi Sharma (@AarthiSharma8) April 28, 2020
টেক ফগ ব্যবহারকারী কর্মীর পে স্লিপের মাধ্যমে দুই কোম্পানির নাম প্রকাশ্যে এসেছে। তারা হল প্রেসিস্টেন্ট সিস্টেম এবং শেয়ারচ্যাট। অভিযোগ, শেয়ারচ্যাটের মাধ্যমেই বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষায় ট্রেণ্ডিং, ভুয়ো খবর ছাড়ানোর কাজ করে। শেয়ারচ্যাটের সঙ্গে টেক ফগ সরাসরি যুক্ত এবং বিজেপির যুবমোর্চা এই গোটা কাজটি পরিচালনা করে। যদিও যুবমোর্চা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর এই অ্যাপের মাধ্যমে মেকি হাওয়া তুলে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন হিন্দি ও ইংরেজি সংবাদমাধ্যম সাহায্যে জনমত গড়তে সাহায্য করে।
নাগরিকত্ব বিল বিরোধী আন্দোলন, দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, করোনা অতিমারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঘটনায় এই অ্যাপের মাধ্যমেই জনমত নিয়ন্ত্রণ করেছিল বিজেপি বলে অভিযোগ।