দক্ষিণ দিনাজপুরে মহিলাদের স্বনির্ভর করার উদ্যোগ কৃষি দপ্তরের

এনএফবি, বালুরঘাটঃ

আজ ৮ মার্চ ,আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আত্মনির্ভর ভারত গড়তে মহিলা উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অপরিসীম। সেদিকে তাকিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলাদের স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের কৃষি দপ্তর।

দারিদ্র-দূরীকরণ ও মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার দৌড়ে জেলা কৃষিদপ্তরের সহায়তায় আত্মপ্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই মজবুত করে চলেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভারত- বাংলাদেশ লাগোয়া হিলি সীমান্ত এলাকার ১০ জন খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মহিলাদের নিয়ে গড়ে ওঠা যমুনা স্বনির্ভর দল।

চাউমিন তৈরীর মেশিন ৷ নিজস্ব চিত্র

আজকের দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু গাল ভরা স্লোগানের মধ্যে আবদ্ধ নেই। নারী শক্তির পরিচয় আমরা আজ অনেক ক্ষেত্রেই চাক্ষুষ দেখতে পাই। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় আজকাল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে । শিল্প বানিজ্য ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি এখন বহু ব্যবসায়ে, কর্ম পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে কার্যনির্বাহের দায়িত্বে মহিলারা রয়েছেন। আর এই অভিযানে কিন্তু পিছিয়ে নেই গ্রামের মহিলারাও । তারা নিজেরা স্বনির্ভর দল গড়ে কৃষিকাজ, পশুপালন, সেলাইয়ের ব্যবসা করে নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতা আনার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের মধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ৷

আকাশ সাহা, আধিকারিক হিলি ব্লক কৃষি দপ্তর ৷ নিজস্ব চিত্র

হিলির ” যমুনা স্বনির্ভর দল ” নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলতে লড়াইটা শুরু করেছিল খাদ্য রসিক বাঙালির রোজকার খাদ্যাভাসকে সামনে রেখে। তাই রসনা তৃপ্তির দিকে লক্ষ্য রেখে বড়ি বানানো দিয়ে নিজেদের পথ চলা শুরু করে। পরবর্তীতে সকাল বা বিকেলের জলখাবারের দিকে লক্ষ্য রেখে চাউমিন বানানোর উদ্যোগ নেয় ।

বিগত বেশ কিছু বছর ধরে মহিলাদের আত্মনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যমে প্রয়াস চালিয়ে আসছে। কিন্তু এখনও অনেক কিছু করাই বাকি।যেখানে দেশের দুই তৃতীয়াংশই মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করে থাকেন। আর এই সব এলাকায় গ্রামীণ অর্থনীতি পাল্টানোর ক্ষেত্রে এখনও ব্যাংকের ভুমিকা নগন্যই বলা যায়। তাই সে ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পই একমাত্র ভরসা গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের। সেরকম ভূমিকা পালন করতেই এগিয়ে এসেছে কৃষি দপ্তর। তারা কৃষি কাজের সহযোগীতার পাশাপাশি তাদের আত্মপ্রকল্পের মধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভর করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ।

পুষ্পিতা কর্মকার ,স্বনির্ভর দলের সদস্য ৷ নিজস্ব চিত্র

জানা গেছে, যমুনা স্বনির্ভর দলের ১০ জন মহিলা আগে কেউ শ্রমিকের কাজ করতেন,কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন কিন্তু নিজেদের স্বাবলম্বী করে তোলার প্রবল ইচ্ছে ছিল তাদের মধ্যে, তাই তারা দশজন মিলে স্বনির্ভর দল গড়ে তোলেন। কিন্তু হাতে কলমে কিছু না জানায় এই মহিলারা স্বনির্ভর দল তৈরি করার পর সে ভাবে লাভের মুখ দেখছিলেন না প্রথম দিকে, তাই তারা স্মরণাপন্ন হন কৃষি দপ্তরের। কৃষি দপ্তর উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে তাদের প্রথমে জ্যাম জেলি ও ডালের বড়ি তৈরির কাজ শেখায়। কাজগুলি শিখে এই মহিলারা প্রথমে বড়ি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করেন। সেখান থেকে কিছুটা তারা লাভের মুখ দেখেন। কৃষি দপ্তরও তাদের কাজকে নজরে রাখেন। কৃষি দপ্তরের পর তাদের অধ্যাবসায় দেখে তাদের আরও কিছুটা উন্নতি করার লক্ষ্যে চাউমিন তৈরির মেশিন কিনে দেওয়া হয় আত্ম প্রকল্পের মাধ্যমে। সেই চাউমিন তৈরির মেশিনের মাধ্যমে চাউমিন তৈরি করে তা বাজারজাত করে তারা উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছেন। এইভাবেই হিলি ব্লক কৃষি দপ্তরের সহয়তায় হিলির যমুনা স্বনির্ভর দলকে আত্মনির্ভরের পাশাপাশি তাদের আর্থসামাজিক জীবন যাত্রায় নারী শক্তির উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে হাত লাগিয়েছে তারা।তাদের আশা যমুনা স্বনির্ভর দলের দেখাদেখি এলাকার আরও মহিলারা নিজেদের এ ভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে এগিয়ে আসবে সেটাই হবে নারী দিবসের যোগ্য প্রাপ্য।

মাধবী দাস,স্বনির্ভর দলের সদস্য ৷ নিজস্ব চিত্র