নদীভাঙন থেকে বাঁচতে মুখ্য সেচ দপ্তরের আধিকারিকের দ্বারস্থ স্থানীয়রা

এনএফবি, কোচবিহারঃ

প্রতিবছর বর্ষায় নদী তীরের ভাঙন যেন বিভীষিকা তীরবর্তী মানুষদের কাছে। সেই নদীভাঙন থেকে একটু বাঁচার আশায় জেলায় মুখ্য সেচ দপ্তরের আধিকারিকের পায়ে পড়ে করুণ আর্তনাদ স্থানীয়দের। ঘটনার সূত্রপাত দিনহাটা ১ ব্লকের অন্তর্গত সীমান্তবর্তী গ্রাম দরিবস ও জারিধল্লায়। একদিকে সীমান্তের বঞ্চনা অন্যদিকে ধরলা নদীর করাল গ্রাসে জর্জরিত ও দিশেহারা এলাকার হত দরিদ্র পরিবারগুলি।

কথায় আছে “নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারোমাস।”জনজীবনে নদীর যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনি এর ধ্বংসাত্মক রূপেরও প্রত্যক্ষদর্শী নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষেরা। মর্মান্তিক দৃশ্যটি দেখে অনেকেরই হৃদয় ভারাক্রান্ত হবে। বারবার স্থানীয়রা সরকারের কাছে, জেলা ও ব্লক আধিকারিকদের কাছে কাতর অনুনয় বিনয় করেছিলেন একটি স্থায়ী নদী বাঁধের জন্য। কারণ একটি স্থায়ী নদী বাঁধই পারে তাদের জীবনযাত্রার মান বদলে দিতে, তাদের নতুন করে বাঁচার রসদ জোগাতে। নদীর অপর নাম জীবন, ছোটবেলা থেকে সবাই এই চিরন্তন সত্য বাক্যটিকে মেনে চললেও সেটা মানতে পারছেন না সীমান্তবর্তী ঐ দুই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দারা। তাদের কাছে প্রকৃতির সেরা সৃষ্টি নদী যেন এক অভিশাপ। কারণ এই ধরলা নদী তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে চাষের জমি, খেলার মাঠ এমনকি মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকুও। নদীগর্ভে সবকিছু বিলীন হয়ে যাওয়া সর্বস্ব হারানো গ্রামবাসীরা তাইতো হাতের নাগালে জেলার সেচ দপ্তরের মুখ্য আধিকারিককে পেয়ে পা ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কান্নাভেজা গলায় ছোট্ট বাচ্চার মত একটি নদী বাঁধ আবদার করে বসলো তারা। কারণ তাদের বিশ্বাস সেচ দপ্তরের আধিকারিকের একটি কলমের খোঁচায় আলাদিনের চিরাগের মত তারা ফিরে পেতে পারে তাদের হারানো সেই দিনগুলি। প্রতিবছর ধরলা নদী ভাঙন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলেও এবার নিয়েছে ভয়াল রূপ। ইতিমধ্যেই কয়েকশো বিঘা কৃষিজমি ও অনেক বাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। আর তার হাল হকিকত খোঁজ নিতেই বুধবার নদী পেরিয়ে সীমান্তবর্তী ঐ দুটি গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কোচবিহার জেলার সেচ দপ্তরের আধিকারিক অসীম চৌধুরী। সেখানে গিয়েই তিনি সাক্ষী থাকলেন এক অন্য অভিজ্ঞতার।

মুখ্য সেচ দপ্তরের আধিকারিক। নিজস্ব চিত্র

পরিদর্শন শেষে অসীম চৌধুরী জানান, “এই এলাকায় নদী ভাঙনের সমস্যা রয়েছে। আমরা আজ জেলা শাসকের অফিসের নির্দেশেই এখানে এসেছি। আজকে গোটা এলাকা সার্ভে করে আমরা বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবো। চেষ্টা করবো যাতে গ্রামবাসীরা এই নদী ভাঙনের থেকে রক্ষা পান।” জেলা সেচ দপ্তরের আধিকারিকের রিপোর্টে যদি সত্যিই সরকার নড়েচড়ে বসে তাহলে হয়ত কয়েক হাজার গ্রামবাসী মুক্তি পাবেন ধরলার এই করাল গ্রাস থেকে। আবার হয়ত তারা স্বপ্ন দেখবেন নতুন করে বাঁচার।