ক্রীড়া

ক্রিসমাসের আগে নর্থ ইস্ট ম্যাচে হার এটিকে মোহনবাগানের

স্পোর্টস ডেস্ক, এনএফবিঃ

নর্থ ইস্ট গাঁট কাটলো না এটিকে মোহনবাগানের। ক্রিসমাস ইভটা ভালো হলো না।

শনিবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে নর্থ ইস্টের কাছে ০-১ গোলে হেরে গেল সবুজ মেরুন। ম্যাচের ৭০ মিনিটে জয়সূচক গোল করেন উইলমার জর্ডন গিল। ওড়িশা এফসির কাছে আটকে যাওয়ার পর হার। শেষ দুই ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট খোয়াল এটিকে মোহনবাগান। ১১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরেই সবুজ মেরুন।

সমস্যায় জর্জরিত এটিকে মোহনবাগানকে নিজেদের ঘরের মাঠে বাগে পেয়ে চলতি লিগের প্রথম জয় ছিনিয়ে নিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। টানা দশ ম্যাচে হারার পরে এটাই তাদের প্রথম জয় এবং বড়দিনের আগের রাতে তারা এই উপহার অর্জন করল লিগ টেবলের তিন নম্বরে থাকা এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি কোচ বদলে ইতালি থেকে ভিনসেনজো অ্যানেসকে নিয়ে আসার পরে এই প্রথম হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারলেন নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ফুটবলাররা। যদিও এই ম্যাচের ফলে লিগ টেবলে কোনও দলেরই অবস্থান বদল হল না। কিন্তু এটিকে মোহনবাগান তিন নম্বরে থেকেই বছর শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। কারণ, তাদের চোট-আঘাতের সমস্যা এ দিন আরও বাড়ল মাঝমাঠের দুই নিয়মিত খেলোয়াড় দীপক টাঙরি ও আশিক কুরুনিয়ান চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায়।

এই ম্যাচের পর অবস্থান না বদলালেও এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় মুম্বই সিটি এফসি-র পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়াল সাত পয়েন্টের এবং দু’নম্বর হায়দরাবাদের সঙ্গে পাঁচ পয়েন্টের। যা তাদের সেরা দুইয়ে থাকার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে দিল। বুধবার বছরের শেষ ম্যাচে চার নম্বরে থাকা এফসি গোয়াকে হারাতে না পারলে গতবারের সেমিফাইনালিস্টরা আরও নীচে নেমে যেতে পারে।

গত ম্যাচে হুগো বুমৌসকে শেষ ১২ মিনিটের জন্য পাওয়া গেলেও এ দিনের ম্যাচে স্কোয়াডেই ছিলেন না তিনি। তাই প্রথম এগারোয় দীপক টাঙরি ও লেনি রড্রিগেজ, দু’জনকেই এগারোয় রেখে দল নামাতে বাধ্য হন এটিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। আগের ম্যাচে ফারদিন আলি মোল্লাকে অর্ধেক সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেলেও এ দিন তাঁকেও প্রথম এগারোয় রাখা যায়নি। তাই ৩-৪-৩ ছকে শুরু করতে বাধ্য হয় তারা। অন্যদিকে, রোমেন ফিলিপোতো, রোচারজেলা ও চলতি মাসেই দলে যোগ দেওয়া উইলমার জর্ডনকে সামনে রেখে ৪-৩-৩ ছকে দল সাজান নর্থইস্টের নতুন কোচ অ্যানেস।

এটিকে মোহনবাগান এ দিন আক্রমণাত্মক মেজাজে ম্যাচ শুরু করলেও মিনিট কুড়ির পর থেকে পাল্টা চাপ বাড়াতে থাকে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। মিডফিল্ডার এমিল বেনি ও স্ট্রাইকার উইলমারের জুগলবন্দি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ২২ মিনিটের মাথায় উইলমার বক্সের মধ্যে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে মার্কার ব্রেন্ডান হ্যামিলকে ধোঁকা দিয়ে গোলে শট নেন। কিন্তু তাঁর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে রোচারজেলা শট নিলেও তা গোলের বাইরে দিয়ে চলে যায়। এর সাত মিনিট পরে মিডফিল্ডার প্রজ্ঞান গগোইয়ের দূরপাল্লার শট পোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

এটিকে মোহনবাগানের সুযোগ হাতছাড়া করার প্রদর্শনী এ দিনও দেখা গিয়েছে। ম্যাচের সাত মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং থেকে শুভাশিস বোসের দেওয়া ক্রস পেয়ে বক্সের সামনে লিস্টন কোলাসোকে দেন আশিস রাই। কোলাসো ভলি করলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। আশিক কুরুনিয়ানের দূরপাল্লার গোলমুখী শট সোজা গোলকিপার মিরশাদ মিচুর হাতে জমা হয়ে যায়।
এ ছাড়া গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে নিতে পারেনি সবুজ-মেরুন শিবির। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও আশিক বিপক্ষের বল নিয়ে গোলের সামনে চলে গেলেও তাঁরা অফসাইডের ফাঁদে পড়ে যান। সারা ম্যাচে আটটি শট গোলে রাখলেও কোনওটিই সফল হয়নি।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে সবুজ-মেরুন কোচের দুশ্চিন্তা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট গুরুতর একটি ঘটনা ঘটে। মিডফিল্ডার রোচারজেলার সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে হাঁটুতে গুরুতর চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান দীপক টাঙরি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তাঁর জায়গায় নামেন কিয়ান নাসিরি।

লিগ টেবলে ১১ নম্বরে থাকলেও নর্থইস্ট ইউনাইটেড এ দিন সারা ম্যাচে তিন নম্বরে থাকা প্রতিপক্ষকে বেশ চাপে রাখে। ঠিকমতো প্রথম এগারো গড়তে না পারা দুর্বল এটিকে মোহনবাগানকে বাগে পেয়েই হয়তো এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে চলতি লিগে টানা দশ ম্যাচে হারা দলটি। এটিকে মোহনবাগান এ দিন শুরুতে তিন ব্যাকে খেলায় তারা আক্রমণের কিছুটা জায়গাও পেয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে এটিকে মোহনবাগান। চতুর্থ মিনিটেই পেট্রাটসের দূরপাল্লার শট পোস্টের সামান্য বাইরে চলে যায়। ৫১ মিনিটের মাথায় ফের সুবর্ণ সুযোগ পান কোলাসো। বক্সের বাইরে থেকে দেওয়া ফরোয়ার্ড পাস পেয়ে গোলে শট নেন তিনি, যা আটকে দেন গোলকিপার মিরশাদ। ফিরতি বলে ফের শট নেন কোলাসো, এ বার মিরশাদের মুখে লেগে বলের গতিপথ সম্পুর্ণ পাল্টে যায়। ৬২ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে গোলে ফের শট নেন পেট্রাটস। কিন্তু এ বারও তা সামান্য বাইরে চলে যায়।

কোচের চিন্তা বাড়িয়ে ৫৭ মিনিটের মাথায় সবুজ-মেরুন শিবিরের নির্ভরযোগ্য অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আশিক কুরুনিয়ানও চোট পেয়ে বেরিয়ে যান এবং তাঁর জায়গায় নামেন ফারদিন আলি মোল্লা। এর ফলে এটিকে মোহনবাগান চার ব্যাকে ফিরে গেলেও মাঝমাঠে বড়সড় ফাঁক দেখা যায়। যা কাজে লাগিয়ে প্রথম গোলটি করে ফেলে নর্থইস্ট ইউনাইটেড।

সেই বেনি-উইলমার জুটিই ম্যাচের একমাত্র গোলটি তুলে নেন। ডনদিকের উইং দিয়ে ওঠা বেনি গোলের সামনে মাপা ক্রস দেন, যাতে নিখুঁত ভাবে হেড করে জালে বল জড়িয়ে দেন কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার (১-০)। ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল তাঁর সামনে থাকা সত্ত্বেও উইলমারকে আটকাতে পারেননি।

গোলশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। ৮০ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে উঠে সাইড নেটে শট মারেন কোলাসো, যিনি এর আগে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে সাতটি ম্যাচের সাতটিতেই গোল করেন। চলতি মরশুমে তাঁর একমাত্র গোলটিও নর্থইস্টের বিরুদ্ধেই।

শেষ কুড়ি মিনিট নর্থইস্ট কার্যত রক্ষণনির্ভর ফুটবলই খেলে। নিজেদের গোলের সামনে প্রায় অর্ধেক দলকে মোতায়েন করে দেয় তারা। মাঝে মাঝে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠলেও তেমন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেনি। তবে ৮৫ মিনিটে তাদের একটি কর্নার বিপজ্জনক ভাবে গোলের দিকে ঢোকার আগেই আটকে দেন সবুজ-মেরুন গোলকিপার বিশাল কয়েথ।