অঞ্জন চ্যাটার্জী, এনএফবিঃ
প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্তর অবস্থা একই। এদিন ট্রাকিয়োস্টমি করে অক্সিজেন বাড়ানোর চেষ্টা করলেও অক্সিজেন মাত্রা বাড়লো না। অক্সিজেনের মাত্রা ৯২-৯৩ শতাংশ রয়েছে। সোমবার বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালের তরফে মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, এখনও অ্যাসিস্ট কন্ট্রোল মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রয়েছেন সুরজিৎ। সুরজিতের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়েছে। তাঁর মুত্র নির্গমন অস্বাভাবিক। চিকিৎসক অজয়কৃষ্ণ সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হচ্ছে তাঁর। একই সঙ্গে তাঁর দেখভাল করছেন বিভিন্ন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, পালমোনোলজিস্ট এবং অন্য চিকিৎসকেরা। গত ২৩ জানুয়ারি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় প্রাক্তন ফুটবলারকে। তাঁর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাও ছিল। শারীরিক সমস্যার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরে তার করোনা রিপোর্টও পজিটিভ আসে। গত শুক্রবার বিকেলে বাইপাসের ধারে নার্সিংহোমে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে দেখতে যান ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেখানে সমস্ত রকম সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়। তার জন্য আলাদা মেডিকেল টিমও তৈরী করা হয়েছে। এরপরে শনিবার এসএসকেএমের এক প্রতিনিধি দল দেখে আসেন সুরজিৎকে। তারাও কোনো আশার আলো দেখাতে পারেননি। সুরজিতের ছেলে স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্ত জানান, আগের থেকে বাবার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ডাক্তাররা সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে সুরজিৎ ভেন্টিলেশনে। এছাড়া বাইপাস হয়েছে আর সুরজিতের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে।
১৯৭৪ সালে কিংবদন্তি শৈলেন মান্নার হাত ধরে মোহনবাগানে আসেন সুরজিৎ। মোহনবাগানে এক মরশুম থাকার পরে ইস্টবেঙ্গলে গিয়ে তাঁদের ঘরের ছেলে হয়ে ওঠেন। ১৯৭৯ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে ছিলেন সুরজিৎ। ১৯৭৮ সালে তার নেতৃত্বে দিল্লির মাঠে মোহনবাগানকে ৩-০ তে পরাজিত করে ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টবেঙ্গল। ১৯৮০ তে আবার মহামেডানে চলে যান। মহামেডানকে ট্রফিও দেন। ১৯৮৩ সালে মোহনবাগানের জার্সি গায়ে ফিরে আসেন। পিয়ারলেস ট্রফিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অনবদ্য গোল করেন সেমিফাইনালে। ১৯৮৬ সালে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন জর্জ টেলিগ্রাফের হয়ে খেলতে। সুভাষ ভৌমিকের অনুরোধে। ময়দানে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব প্ৰিয় ছাত্র ছিলেন। যদিও কোনোদিনও কোচিং করাননি। তবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে ছিল সুরজিতের ভালোবাসা। লাল হলুদের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে দেখা যায় সুরজিতকে। গত সপ্তাহে প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের স্মরণসভাতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলাররা মিলে একটা তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সুরজিতের জন্য। এছাড়া ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে তার ছেলে স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্তর সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সুরজিতের নিয়মিত খোঁজ রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। তবে ফুটবলকে বিদায় জানানোর পরে তিনি আর ময়দানমুখী হননি। মানসিক ভাবে ফুটবল থেকে খানিকটা দূরে চলে গিয়েছিলেন। বিদেশী ফুটবল নিয়েও নিয়মিত চর্চা করতেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত।