এনএফবি,পূর্ব মেদিনীপুরঃ
কলকাতা হলদিয়া জলপথে একদা অত্যাধুনিক দ্রতগামী জলযান হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের সিলভার জেট হয়ে উঠে ছিল বহুল পরিচিত ও আলোচিত। সিলভার জেটের কেয়ারটেকার সেখ সিরাজ জানান, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও এই জলযানে একাধিক বার কলকাতা হলদিয়া যাতায়াত করেছেন। পরে বিভিন্ন কারণে এটির পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
এই বৎসর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটে সংকেত এবং ছাত্র সংঘ পরিচালিত দুর্গোৎসবের পঞ্চাশতম বর্ষ।
এই উপলক্ষে তাদের মন্ডপ সংলগ্ন রূপনারায়ণে নিয়ে আসছে প্রায় একশো ফুট লম্বা সেই “সিলভার জেট ” জলযানটি কে। সিলভার জেট সহ আরো দুটি বড় লঞ্চ এবং ভটভটির সাহায্যে নদের চওড়া বুকে প্রদর্শিত হবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। মাঝ নদীর এই অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পাবেন দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন। দর্শকদের সিলভার জেট বা সহযোগী লঞ্চে ওঠার কোন সুযোগ থাকবে না। সোনালী বর্ষ উদযাপনে এই মন্ডপে আসছে কলকাতার বিখ্যাত মৃৎশিল্পীর তৈরী বর্ণময় সাজে প্রায় বাইশ ফুট উচ্চতার দুর্গাবাহিনী। প্রতিমা নির্মাণে কোলাঘাটে এ পর্যন্ত এটিই উচ্চতম প্রতিমা বলে আয়োজকরা জানান। সমাজ কল্যাণ এবং বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে এই পুজো কমিটি গত ছয় বছরে সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩২ টি শারদ সম্মান অর্জন করে জেলায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বলে পুজো কমিটির সম্পাদক শ্যামল আদক জানান।
কোলাঘাটের সংকেত এবং ছাত্র সংঘ আয়োজিত পূজার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষকে কেন্দ্র করে দুইমাস আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে জন কল্যাণ মূলক বিষয়ক বহুমুখী কর্মসূচি। রাজ্যের বারোটি জেলার দুর্ঘটনাগ্রস্ত প্রায় ১৬৭ জন অঙ্গহীনদের বিনামূল্যে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন, প্রায় একশ জন মানুষের মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার, রক্তদার শিবির প্রভৃতি । পথনিরাপত্তা, পরিবেশ দূষণ ও বাল্যবিবাহ রোধে পুজোর কদিন লাগাতার প্রচারের সাথে থাকবে প্রদর্শনী, পথ পরিক্রমা, কুইজ, বক্তব্য এবং অঙ্কন প্রতিযোগিতা। এই উপলক্ষে কোলাঘাটের উপর একশ বছরের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ইতিহাস ধর্মী গ্রন্থ ” স্বর্ণালী স্মরণীকা “। সপ্তাহ ব্যাপী চিত্তাকর্ষক আগমনী বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে।
সেবামূলক কাজে থাকছে ঝুপড়ি বাসিদের জন্য খাদ্য ও বস্ত্র প্রদান, প্রতিবন্ধী ও অথর্ব বয়স্কদের পুজো দেখার জন্য ক্র্যাচ, লাঠি, হুইলচেয়ার সহ সহায়ক অঙ্গ।
এলাকার ভবঘুরেদের জন্য নতুন বস্ত্র সহ উৎসবের কদিন রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে তাদের খেয়াল খুশি মত অস্থায়ী ঠিকানায়। উৎসবের কদিন প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের জন্য হাতে হাতে ভোগপ্রসাদ বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পুজো কমিটির সভাপতি অভিজিত সামন্ত জানিয়েছেন, ” কেবল পূজা উৎসবের কদিনই নয়, এই শারদোৎসব কে কেন্দ্র করে আমরা সারা বছরই বহুমুখী প্রয়াস নিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। ” তার সাথে এই পঞ্চাশতম বর্ষের শারদীয়ার যে আয়োজন আমরা করেছি, তাতে করে আগত মানুষ জন আনন্দ পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।” মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে শতাধিক মানুষ মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকারের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ শারদ উৎসবের সূচনা করবেন। শ্রীতমা মন্ডলের বাবা মা এদিন মরণোত্তর দেহ দাতাদের উৎসাহ দানে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুর্গতিনাশিনী আরাধনার পঞ্চপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন করবেন। উল্লেখ্য, গত ৬ই জুন হাওড়া কদমতলার তেরো বছরের শ্রীতমা দূরারোগ্য ব্যাধিতে ব্রেনডেথ হওয়ার পর তার বাবা-মা এসএসকেএমে অ্যানাটমি বিভাগে তাদের প্রাণহীন ছোট্ট শ্রীতমার দেহটি তুলে দিয়ে মানবতার শ্রেষ্ঠদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ছিলেন। উৎসবের কদিন উপস্থিত থাকবেন জেলা ও রাজ্যস্তরে প্রশাসনিক, জন প্রতিনিধি সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।