২৪শে’ র নবীনবরণ:

নক্ষত্রখচিত মহাকাশের অনন্ত আলোকবর্ষ দূর হইতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারকাগণ যেমন তাহাদিগের আলোকবর্তিকা প্রেরণ করিয়া ধরনীতলকে আলোকিত, সতেজ ও প্রাণোচ্ছল করিয়া তোলে, নক্ষত্রখেতাবী কলেজের দূর দূরান্ত হইতে ছোট্ট ছোট্ট শিশুসুলভ ছাত্রীগণ তেমনই তাহাদিগের আগমন বার্তা প্রেরণ করিয়া বেশ কয়েকদিন যাবৎ কলেজকে আবেগে, উল্লাসে ও মহানন্দে মুখরিত করিয়া তুলিয়াছিল, আজই সেই আগমনীদিগকে বরণ করিয়া উদযাপিত হইল কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান ।

এহেন আগমন বার্তা পৌঁছানোমাত্র, ঐ শুনিয়াছি কন্ঠে কন্ঠে আগমনের কলরব, শঙ্খ অস্থির হইয়া ডাকিতেছে -“কে আছ রমনী, আমারে মুখে লইয়া বাজাও- দাও শঙ্খধ্বনি !” ওষ্ঠ ও জিহ্বা সম্মিলিত হইয়া দিতে চাহিতেছে উলুধ্বনি, কলেজের জনশূন্য উন্মুক্ত মুক্তমঞ্চ আহ্বান করিতেছে- “আইস হে নবীন, আমার উন্মুক্ত বক্ষে করহ আগমনের গীতি, নাট্য ও সম্মিলনী, আনন্দে-উল্লাসে ভরিয়া তোল কলেজ প্রাঙ্গণ ।” উন্মুক্ত ময়দান ডাকিতেছে- “আইস হে চঞ্চলা, উন্মাদিনী নবীনের দল আমার উন্মুক্ত বক্ষে করহ নৃত্য, তাহা না হইলে আমার অস্তিত্ব যে বৃথামাত্র ।”

এদিকে কলেজ কক্ষ শূন্য করিয়া সকলে কলেজ আঙ্গিনায় দাড়াইয়া উৎকন্ঠাভরা অপেক্ষায় রহিয়াছে, কখন আসিবে আগমনীর দল ! ওদিকে মৌমাছিরা শুরু করিতেছে গুঞ্জন, পাখিরা করিতেছে কুজন । লতা, গুল্ম, বৃক্ষ এবং পুষ্পবাগিচার পুষ্পস্তবক সকলে হেলিয়া-দুলিয়া মহানন্দে পরস্পর পরস্পরকে করিতেছে আলিঙ্গন, আর ডাকিতেছে- “কে আছ রমন-রমনী আমার পাপড়ি ছিড়িয়া লইয়া অর্পণ করহ আগমনীদিগের শিরে, ধন্য করি মোর এপুষ্প জীবন ।”

সম্মুখে ঐ সুবিশাল অশোক, অর্জুন ও দেবদারু স্তব্ধ হইয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকাইয়া রহিয়াছে কলেজের মুখ্য প্রবেশদ্বারের দিকে- কখন আসিবে দলজদলনী আগমনীর দল । উন্মুক্ত মুখ্য প্রবেশদ্বারের লৌহনির্মিত দরজা দুইখানি যেন স্নেহময়ী মায়ের মত তাহার হস্ত দুইখানি প্রসারিত করিয়া ডাকিতেছে- “”সত্ত্বর আইস বাছারা । আমন্ত্রণ পাঠায়াছিলাম প্রত্যেক বিভাগের গ্রুপে গ্রুপে । শুনিয়াছি সেই আমন্ত্রণ হইয়াছে গৃহীত, তাই মাতার যে আর দেরি সহিতেছে না বাছাগণ ! সুস্থ কায়মনে সত্ত্বর আইস মোর আঙ্গিনায়, মোর ক্রোড়ে । তোমাদিগকে বক্ষে জড়াইয়া লইয়া করিব আদর, ললাটে করিব চুম্বন, শিরে হস্ত রাখিয়া করিব আশীর্বাদ, চারি সন করিব লালন পালন নিজ দায়িত্বে, এ যে মায়ের মহাধর্ম করিব স্বার্থক !”

শীঘ্রই আইস হে নবীন মহাপ্রাণেরা । চন্দন, পুষ্পস্তবক, পুষ্পপাপড়ী, পুষ্পমাল্য, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও মিষ্টান্ন লইয়া এ মহাবিদ্যালয় তোমাদিগের তরে অধীর অপেক্ষায় গুণিতেছে প্রহর ।
আসিয়া মিলিত হইবে মানব গড়ার কারিগর সেই বৃহৎ নক্ষত্রবৎ শিক্ষক শিক্ষিকাদিগের সহিত, তাহাদিগের পদধূলি লইবে শিরে, গুরুদক্ষিণা হিসাবে তুলিয়া দিইবে তাহাদিগের হস্তে- তোমাদিগের ভবিষ্যতের প্রাণ করিতে অমর, লভিতে কৃতিত্বের সন্মান । যাহা অমর রহিবে কলেজের ইতিহাসে।

YouTube player
আগমনী “Celebrating the colours of Autumn”
“আনন্দময়ীর আগমনে আনন্দে গিয়েছে দেশ ছেয়ে”
নিবেদনেঃ বহরমপুর গার্লস’ কলেজ
সহযোগিতায়ঃ মহারানী কাশীশ্বরী গার্লস হাই স্কুল

লেখকঃ সেন্টু সরকার, অধ্যাপক, শারীরবিদ্যা বিভাগ, বহরমপুর গার্লস’ কলেজ