উত্তর সম্পাদকীয়

২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বিশ্বভাষা দিবস

ড. সেন্টু সরকারঃ

এক খণ্ড এলোমেলো আকৃতির পাথর যদি আস্তাকুড়ে পড়ে থাকে তবে তা প্রায় মূল্যহীন কিন্তু ঐ এলোমেলো আকৃতির পাথরের খন্ডটিকে যদি ছাচে ফেলে একটি মূর্তি বা প্রতিমা বানানো হয় তা তখন হয়ে যায় পাথরের মূল্যবান মনমুগ্ধকর প্রতিমা বা চোখ জুড়ানো পাথরপ্রতিমা, তা যেমন শক্ত তেমনি তার গরিমা দীর্ঘ মেয়াদী ।

প্রাগবিদ্যাসাগরীয় যুগে বাংলা ভাষা ছিল আস্তাকুড়ে পড়ে থাকা ঐ এলোমেলো আকৃতির পাথরের মতো এলোমেলো অবস্থায় ।

অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ১৮৫৫ সালে বিদ্যাসাগর বাবু বাংলা ভাষার ৫২ টি বর্ণ বা অক্ষরের স্বরপার্থক্য থাকায় অক্ষরগুলিকে শ্রেণী ও বর্গের ছাচে ফেলে স্বর ও ধ্বনি বিজ্ঞানের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে তৈরি করেছিলেন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সম্মিলিত ২ পয়সার বর্ণ পরিচয় পুস্তিকা । যার দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাপক প্রভাব পরেছিল বাংলা ভাষার উপরে ! বাঙালির বাংলা শিক্ষাজীবন সুরু হয় এই বর্ণ পরিচয় পুস্তিকাটি হাতে করে ।

বর্ণ পরিচয়ের মহিমায় আজ আমার বাংলা ভাষা হয়ে উঠেছে-
আমার সোনার বাংলা ভাষা,
আমার অপরূপ বাংলা ভাষা,
আমার গুণাতীত মাতৃভাষা,
আমার পূণ্যভূমির বাংলা ভাষা,
আমার সুমধুর বাংলা ভাষা,
আমার আত্ম-পরিচয়ের বাংলা ভাষা,
আমার আত্ম-গৌরবের বাংলা ভাষা,
আমার আত্ম-অহংকারের বাংলা ভাষা,
আমার আত্ম-গর্বের বাংলা ভাষা,
আমার মনোহারী সংস্কৃতির বাংলা ভাষা ।
আমার ঈর্ষান্বিত বাংলা ভাষা।

আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি- বিশ্বভাষা দিবসে আহাঃ মনে কি বিস্ময় ! কি আনন্দ ! কি শিহরণ ! কি আপ্লুত হচ্ছি তা লিখে প্রকাশ করতে পারলাম না !

বিদেশী ভাষার অনুপ্রবেশে মনে হচ্ছিল সোনার বাংলা ভাষার উপরে মরিচা পড়তে শুরু করেছিল । কিন্তু সোনায় তো মরিচা পড়ে না ! তুমি তো সোনা ! তুমি তো মরিচাহীন !

জাগো বাঙালি, আবার তুমি মলিনমূক্ত হয়ে নতুন রূপে জাগো । প্রেরণা দাও, উৎসাহ দাও, আশীর্বাদ কর, শিহরণ জাগাও, তোমার গুণে, মহিমায় আমাকে আপ্লুত কর ! আর জাগাও তোমার বাংলা ভাষাকে । আমার বাংলা ভাষা যেন হোক স্বর্গীয় ভাষা, যেন হোক বেহেস্তের ভাষা ।

বাংলা মায়ের বাংলা ভাষায় কথা বলতে আবার যেন বাংলাতেই পুণর্জনম লাভ করি ।

( নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

লেখকের পরিচয়ঃ ড. সেন্টু সরকার, বহরমপুর গার্লস কলেজের শারীরবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক।