অশ্বিনের শতরানে ভর করে ভারতের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

চেন্নাই: রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অনবদ্য শতরানে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করল ভারত। অশ্বিনের অপরাজিত ১০২ এবং রবীন্দ্র জাদেজার অপরাজিত ৮৬ রানের ইনিংসে ভর করে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৩৩৯/৬, যেখানে একসময় তারা ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল।

দিনের প্রথম দুই সেশনে হাসান মাহমুদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ভারতের শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। অর্ধশতক করা ইয়াশস্বী জয়সওয়ালও দলের এই দুর্দশা রুখতে পারেননি। হাসানের বোলিংয়ে ভারত ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এরপর অশ্বিন ও জাদেজা সপ্তম উইকেটে ১৯৫ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়ে দলের হাল ধরেন।

অশ্বিন ও জাদেজা মিলে ২২৭ বলে ১৯৫ রান সংগ্রহ করেন, যার মধ্যে ছিল ২০টি চার ও ৪টি ছয়। প্রথম দুই সেশনে ৮৮ রান করে ৩টি করে উইকেট হারানোর পর শেষ সেশনে ৫-এর বেশি গড়ে ১৬৩ রান যোগ করে ভারত, যার ফলে প্রথম দিনেই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যায় তারা। তবে বাংলাদেশের বোলিংয়ের ওভার রেট ছিল অত্যন্ত খারাপ, প্রথম দুই সেশনে মাত্র ২৩ ও ২৫ ওভার বোলিং করলেও শেষ সেশনে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট ব্যবহার করেও মাত্র ৩২ ওভার বল করতে পারে।

বাংলাদেশের অধিনায়ক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন এবং উপযুক্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দ্রুত ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আউট করেন। তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ প্রথম সেশনে ইয়াশস্বী ও রোহিত শর্মাকে চাপে রাখেন, যেখানে রোহিত একটি এলবিডব্লিউ রিভিউয়ে রক্ষা পান, কিন্তু এরপরই দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। শুবমান গিলও দ্রুত আউট হন মাত্র ৮ বলে শূন্য রানে, এরপর বিরাট কোহলি উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন, হাসান মাহমুদের বলেই। এর ফলে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে ভারত।

নাহিদ রানার গতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল ঋষভ পান্তকে, যিনি প্রায় দুই বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসেন। পান্ত ও ইয়াশস্বীর ৬২ রানের পার্টনারশিপে খানিকটা ভরসা ফেরে ভারতের। কিন্তু পান্ত ৩৯ রানে আউট হলে আবারও বিপাকে পড়ে দলটি।

এরপর, অশ্বিন ও জাদেজা জুটি বাঁধেন। অশ্বিন আগ্রাসী ব্যাটিং করেন এবং জাদেজা তাকে সঙ্গ দেন। মাহমুদের বলে একটি ছয় হাঁকিয়ে দলের মনোবল বাড়িয়ে দেন জাদেজা, পাশাপাশি একটি এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে বাঁচেন। অশ্বিনও মাহমুদের বলে পরপর দুটি চার মেরে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন।

শাকিব আল হাসান ৫৩তম ওভারে বোলিংয়ে এলে জাদেজা একটি চার এবং অশ্বিন একটি ছয় হাঁকান। জাদেজা পরপর দুটি বাউন্ডারি মারেন। ৫৮ বলে অশ্বিন ফিফটি পূর্ণ করেন এবং ১১৪ বলেই ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন এই জুটি।

অশ্বিনের দারুণ ফর্মের কারণে একের পর এক বাউন্ডারি আসে। এই জুটি শচীন টেন্ডুলকার ও জাহির খানের ২০০৪ সালের ১৩৩ রানের পার্টনারশিপ ভেঙে ভারতের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়ে। জাদেজাও ফিফটি পূর্ণ করেন এবং মেহেদির শর্ট বলকে দুটি বাউন্ডারিতে পরিণত করেন।

রানার বলে একটি সুন্দর কভার ড্রাইভে পার্টনারশিপের রান ১৫০ পার করেন জাদেজা। এরপর অশ্বিন মেহেদির বলটি বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দলকে ৩০০-এর ওপারে নিয়ে যান। ৯০ রানে পৌঁছে অশ্বিন রানার বলে চার মেরে নিজের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান, আর জাদেজা শাকিবের বলকে এক চার ও এক ছয়ে সাজিয়ে ৮০ রানে পৌঁছে যান।

৯৫ রানে শাকিবের বলে স্লিপে ক্যাচ মিস হওয়ায় অশ্বিন ভাগ্যবান বেঁচে যান এবং নিজের ষষ্ঠ টেস্ট শতরান করেন, যেটি চেন্নাইয়ে তার দ্বিতীয় শতরান। দিনের শেষে ভারত ৩৩৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে খেলা শেষ করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ৩৩৯/৬ (রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১০২, রবীন্দ্র জাদেজা ৮৬, ইয়াশস্বী জয়সওয়াল ৫৬; হাসান মাহমুদ ৪-৫৮) বনাম বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *