নিজের গ্রামেই তিন বছর ধরে একঘরে প্রাক্তন সেনা কর্মী

অভিযোগকারী প্রাক্তন সেনা কর্মী আশীষ মন্ডল। নিজস্ব চিত্র

এনএফবি, পূর্ব মেদিনীপুরঃ

যে মানুষ এক সময় দেশের জন্য সীমান্ত রেখায় রাত জেগে দেশের সুরক্ষার জন্য জীবন বিপন্ন করে পাহারা দিয়েছেন দেশের স্বার্থে। তিনিই আজ তার নিজের গ্রামে একঘরে। এমনি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠলো শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের চিয়াড়া গ্রামে। প্রাক্তন এই সেনাকর্মীর নাম আশীষ মন্ডল।

জানা গেছে, গ্রামে কংক্রিটের একটি রাস্তা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের সূত্রপাত। গ্রামবাসী কিছু মানুষের সঙ্গে আশীষ বাবুর রাস্তার জায়গা নিয়ে বিবাদ হয়। আর এই বিবাদকে কেন্দ্র করে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। এরপরই গ্রামের কিছু মানুষ কঠিন নিদান দেয়। গ্রামের মন্দিরে ওঠা নিষেধ অভিযোগকারী আশীষ বাবুর পরিবারের কোনও সদস্যের।এখানেই শেষ নয়, দেওয়া হয়নি সরকারি জল পরিষেবা। অথচ তারই বাড়ির দোরগোড়া দিয়ে গিয়েছে জলের লাইন। পাশাপাশি আশিষ বাবুর স্ত্রী অপর্না ভৌমিক মন্ডল বাড়িতেই গ্রামের ছেলে মেয়েদের টিউশনি পড়াতেন। সেখানেও গ্রামের কিছু মানুষের কঠিন নিদান অব্যাহত। সেখানেও ঘোষনা করা হয়, যদি কোন গ্রামের ছেলে পড়তে যায়, তাহলে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ি থেকে। গ্রামের কোন অনুষ্ঠানে কিংবা পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মেও অংশ নেওয়া নিষেধ প্রাক্তন সেনাকর্মী ও পরিবারের।

রাজেশ হাজরা, সভাপতি শহীদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতি। নিজস্ব চিত্র

এ বিষয়ে আশীষ বাবু সমাধানের জন্য জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিক সহ বিডিও, বল্লুক ২ গ্রাম পঞ্চায়েতেও জানিয়েছেন কিন্তু কোন সমাধান সূত্র মেলেনি। তবে এই বিষয়ে শহীদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজেশ হাজরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি এই বিষয়টি জানতেন না। তবে বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি বল্লুক ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত প্রধান উত্তম বর্মন জানান, তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনার জন্য চেষ্টা করে ছিলেন কিন্তু এখনও কোন সমাধান সূত্র মেলেনি। চিয়াড়া গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বনাথ ঘোড়া বলেন, এই বিষয়ে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার চেষ্টা হয়েছিল। তবে আশীষ মন্ডলের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন সদুত্তর মেলেনি।

উত্তম বর্মন, প্রধান, বল্লুক ২ গ্রাম পঞ্চায়েত। নিজস্ব চিত্র

তবে বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে মধ্যযুগীয় এই একঘরে প্রথার বিরুদ্ধে প্রশাসন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার।

বিশ্বজিৎ ঘোড়াই, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। নিজস্ব চিত্র